
সড়কপথে যাতায়াতের কোরবানি ঈদের ছুটির সময় দুর্ঘটনায় অন্তত ২৭৩ জন নিহত হয়েছেন। গত ১৪ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনের এ তথ্য প্রকাশ করেছে ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতি’। সংগঠনটি বলছে, এ সময়ে সারাদেশে বিধিনিষেধ জারি ছিল। তা সত্ত্বেও গত ছয় বছরের মধ্যে দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ের মধ্যে ২৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় আরো অন্তত ৪৪৭ জন আহত হয়েছে। বর্তমানে খুলে গেছে সারাদেশের সব যানবাহন, আর প্রতিদিনই পাওয়া যাচ্ছে মৃত্যুর নানা সংবাদ।
দেশে গত একদশক ধরে সড়ক দুর্ঘটনা অন্যতম আলোচিত বিষয়। কোনো বিশেষ দুর্ঘটনা ঘটলে সারাদেশ উত্তাল হয়ে ওঠে অনেক সময়, এছাড়া বেশিরভাগ সময়ই নিরবে মৃত্যুবরণ করতে থাকে দেশের মানুষ। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, উচ্চ আদালত পর্যন্ত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নির্দেশনা দিয়েছে। তারপরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো কতটুকু কার্যকর হচ্ছে? তা দেখা বা পর্যালোচনা করা হচ্ছে না খুব একটা।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিমেষে একটি পরিবার শেষ হয়ে যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছে, তারা কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। অনেকে কর্মজীবী, অনেকে উপার্জনক্ষম ছিলেন। আহতদের মাঝেও এমন রয়েছে। অবস্থার শিকার আহত-নিহতদের পরিবারগুলোর কী দুর্দশার মধ্যে আছে, তা ভুক্তভুগী পরিবার ছাড়া কারও পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। বলা বাহুল্য, সড়ক দুর্ঘটনায় একটি পরিবারের একজন বা একাধিক সদস্যের মৃত্যু ও পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় সেই পরিবারটির অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ে। আর পঙ্গুত্ব বরণকারীর জীবন হয়ে উঠে অর্থহীন এবং পরিবারেরও বোঝায় পরিণত হয়। এমনকি তার চিকিৎসা করতে গিয়ে পরিবারকে নিঃস্বও হতে হয়।
এই প্রেক্ষাপটে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত-নিহত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা ব্যায় বহনের বিধান থাকা সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ৫৩ ও ৫৪ ধারার বাস্তবায়ন করে অবিলম্বে একটি ‘আর্থিক সহায়তা তহবিল’ এবং তহবিল পরিচালনার জন্য একটি ‘ট্রাস্টি বোর্ড’ গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে ৬ সেপ্টেম্বর রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বিষয়টি খুবই ইতিবাচক।

আইনটির সংশ্লিষ্ট ধারার বাস্তবায়ন হলে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত-নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসা খরচ বহনের জন্য একটি আর্থিক তহবিল গঠন হবে বলে মনে করেন রিটকারি ও আইনজীবী। আমরাও তাই মনে করি। সড়ক দুর্ঘটনা হয়তো রাতারাতি বন্ধ হবে না, তারপরেও আমাদের সাবধান হতে হবে। রাষ্ট্র-সমাজ সবাইকে দাঁড়াতে হবে দুর্ঘটনা কবলিত পরিবারের পাশে।