চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

স্মৃতির পাতায় শোকাবহ আগস্ট

পিতৃহারা অনাথ শিশুরা বুঝতে পারে না পিতার স্নেহ কেমন। তেমনই জাতির পিতার চির বিদায়ে একটা জাতি পিতৃহারা হয়ে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছিল।

১৫ আগস্ট। সকাল ৭টা। বাইরে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আমার মেজো ভাইয়ের সহপাঠী বলল, “তুই এখনো পড়তাছস! কী হইবো পইড়া? যেখানে বঙ্গবন্ধুরে মাইরা ফেলাইছে!” তখন আমার ভাই ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের সেরা ছাত্র। বঙ্গবন্ধুর আকস্মিক বিদায়ে দেশটা যেন লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।

সকাল ৭টার কয়েক মিনিট আগে বা পরে রেডিওতে শোনা যায়, “আমি মেজর ডালিম বলছি, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে।” আমার মায়ের একটি আচরণ, কষ্ট বেশি পেলে বুক চাপড়ে কান্নাকাটি জুড়ে দেয়া। বঙ্গবন্ধুর এমন দুঃসংবাদ শুনে আম্মা যতটা কান্না করেছেন মনে হয় না, আমার নানাজান মারা গেলেও ততটা কষ্ট পেয়েছেন।

ঐদিন আমাদের বাসায় রান্না খাওয়া বন্ধ। ময়মনসিংহ অঞ্চলে আপনজন মারা গেলে ঐ বাড়িতে অন্তত তিনদিন চুলায় জ্বাল জ্বলে না। পাড়া প্রতিবেশিরা খাবার দিয়ে যায়। কিন্তু এই শোচনীয় অবস্থা তো কেবল একটা পরিবারেই না। যাঁরা বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসতেন তারা সবাই শোকে আচ্ছন্ন হয়ে যান, কেউ কান্নাকাটি আহাজারি করতে থাকেন।

এক গরিব বৃদ্ধ মহিলা ভাপাপিঠা বিক্রি করতেন। তখন সমাজে এই শ্রেণির লোকজনকে আজকের দিনের মতো খালা, আন্টি বলে ডাকা হতো না। আমরা উনাকে ভাপাওয়ালি বলেই ডাকতাম। তিনি বঙ্গবন্ধুর চির বিদায়ের সংবাদ শুনে শয্যাশায়ী না হয়ে শক্তি অর্জন করে বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনায় শিন্নি তৈরি করে মহল্লায় বিতরণ করলেন।

দেশ ও জাতির অগ্রসরতায়, বিশেষ করে প্রযুক্তির বদৌলতে বর্তমান প্রজন্মের বারো বছর বছরের ছেলে মেয়েরা যতটা পরিপক্ক, আমরা ততটা না হলেও অন্তত এইটুকু বুঝেছিলাম যে আবার হয়তো বাংলার স্বাধীনতা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। ভেবেছিলাম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গানগুলো আর শুনতে পারবো না। গাইতে পারবো না “শোনো একটি মজিবরের থেকে লক্ষ মজিবরের কণ্ঠস্বরে ধ্বনি প্রতিধ্বনি
আকাশে-বাতাসে উঠে রণি বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ। ”

সেইদিন হয়তো বাংলার বন্ধুকে হারানোর বেদনায় বাংলার আকাশ বাতাস, সমগ্র প্রকৃতিই যেন অশ্রুশিক্ত হয়েছিল। বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে কতটা ভালবাসতো এর একটা বাস্তব প্রমাণ ১৯৭১ সালের রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে যেভাবে জনতার ভিড় জমেছিল।

কিন্তু ভালবাসতে পারেন নাই যারা জাতির পিতার খুব কাছাকাছি আসতে পেরেছিলেন, যারা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে অবাধে বিচরণ করেছেন, চা পানির পিপাসা মিটিয়েছেন, মাতা ফজিলাতুননেছার হাতের রান্না করা খাবার খাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

ভালবাসতে পারেন নাই যারা মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বসূচক খেতাবে ভূষিত হয়েছেন, পেয়েছেন পদোন্নতি। তারাই ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট রাতের শেষ প্রহরে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়িতে জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করে রক্তের স্রোত গড়িয়ে দিল।

তৃষ্ণার্ত শিশু রাসেলকে পানিটুকু না দিয়ে হত্যা করলো। হত্যা করতে পারে নাই উপস্থিত না থাকা পিতার দুই কন্যাকে– শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণে শেষ করে দেয়ার অভিসন্ধিতে শত্রুরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

এই হামলায় আইভি রহমানসহ কয়েকজন মহৎপ্রাণ ব্যক্তি প্রাণ হারালেন। সৌভাগ্যবশত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেন। কথায় আছে, ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’। তিনি বেঁচে রইলেন। পিতার অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা করে চলেছেন।

কলঙ্কিত অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়ে তিনি বাংলার আকাশে নতুন সূর্য উদ্ভাসিত করেছেন। শোকে পাথর হলেও তিনি তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যাননি। কী বিষ্ময়কর! আজ তিনি প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার আসামীদের বিচারের আওতায় এনে তিনি নিজ হাতে সাজা দিতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি সর্বদা দেশের জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে আছেন। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জনদরদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মহান আল্লাহ সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু দান করুন, প্রার্থনা করি।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস দেশের সরকারি-বেসরকারি, ছোটো বড় সকল প্রতিষ্ঠান বিনীত শ্রদ্ধার সাথে উৎযাপন করে থাকে। দেশের স্বনামধন্য লেখকগণ এবং যে-ই একটুখানি লিখতে পারেন সকলেই বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে ১৫ আগস্টের শোকগাথা লিখেছেন নিজের মতো করে। আমিও তাই স্মৃতির পাতা থেকে লিখলাম।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View