মহামারি করোনায় এ বছর অনেকে চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য কমে যাওয়ায় আয় কমেছে অনেকের। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষ যখন কোনো রকম টিকে থাকার চেষ্টা করছেন ঠিক সেসময় বাড়ছে চাল-তেলসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম।
তবে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমতে শুরু করেছে।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, নাখালপাড়াসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছ। বাজারে গত এক সপ্তাহে সব ধরনের চালের কেজিতে দাম বেড়েছে গড়ে ৩ থেকে ৫ টাকা। এছাড়া ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে গড়ে কেজিপ্রতি ৫ থেকে থেকে ৬ টাকা। আটা ও ময়দার কেজিতেও বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা।
ক্রেতারা বলছেন, করোনায় আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় মানুষকে কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। এর মধ্য চাল-তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এই বাড়তি দাম মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাই দুর্যোগের সময়ে জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজারে তদারকি বাড়াতে হবে।
বাজারে যে চাল-তেলের দর বাড়ছে, সেই তথ্য সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির শুক্রবারের বাজার দরের তথ্যেও দেখা গেছে। টিসিবির তথ্যমতে, প্রতিকেজি চিকন চাল (নাজিরশাইল ও মিনিকেট) বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬২ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৬২ থেকে ৬০ টাকায়।
মাঝারি মানের চাল (পাইজাম ও লতা) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৪ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকায়।
আর নিম্ন আয়ের মানুষের একমাত্র ভরসা মোটা চালের (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি এখন কিনতে হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ৪৩ থেকে ৪৮ টাকায়।
৫ লিটার সোয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৫১০ থেকে ৫৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০০ থেকে ৫৩০ টাকা। পামওয়েল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ৯৬ থেকে ৯৮ টাকা, এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৯৪ থেকে ৯৬ টাকা।
তবে বাজারে দেখা গেছে, টিসিবির দেয়া দামের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল ও তেল।
রাজধানীর নাখালপাড়া, কাঁঠালবাগান, মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিসিবির প্রকাশিত দামের চেয়েও কোনো কোনো দোকানে ২ থেকে ৩ টাকা বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর নাখাল পাড়ার একটি মুদি দোকানে চাল কিনতে এসেছেন গৃহিণী জান্নাতুল ফেরদৌসি। মোটা চালের কেজি ৫০ টাকা শুনে হতাশ হলেন তিনি।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, করোনায় চাকরি হারিয়ে বেকার হয়েছি ৫ মাস ধরে। কিন্তু চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছেই। যা আমার মত গরিবদের জন্য আরো দুর্ভোগ বয়ে আনছে।
তবে চাল-তেলের ঊর্ধ্বগতিতে কিছুটা স্বস্তি মিলছে কাঁচা সবজিতে।
রাজধানীর কাঁচাবাজারে কিছু দিন আগেও সবজির দাম ছিল চড়া।
কিন্তু শীত মৌসুমের সবজি আসায় এখন বেশিরভাগ সবজির কেজি ৩০ টাকায় নেমে এসেছে।
বাজারে শিম বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়। মূলা ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। ৩৫ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে বড় এক পিছ লাউ। ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গাজরের কেজি।
এছাড়া বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পটল ৩০ থেকে ৪০ টাকা, উস্তে ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কয়েক মাস ভোগান্তির পর কমছে আলুর দাম। নতুন আলু আসায় পুরনো আলু বিক্রি হচ্ছে এখন ৩৫ টাকা কেজি দরে। নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।
তবে টমেটো, বরবটিসহ কয়েকটি সবজির দাম এখনও চড়া।
পাকা টমেটোর কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আর বরবটি গত সপ্তাহের মতো ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দামও কিছুটা কমেছে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ গত সপ্তাহের মতো ৩০ থেকে ৪০ কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচামরিচ বিক্রি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়।