নানা আশঙ্কা আর পূর্ব ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে এবারের ঈদযাত্রা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সহজ ও স্বস্তির হয়েছে। নির্বিঘ্নে গ্রামে ফিরতে পেরেছে মানুষ। যদিও ঈদযাত্রার আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি শঙ্কা প্রকাশ করেছিল, আগে থেকে প্রস্তুতি না নিলে সড়কে ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
অবিশ্বাস্যভাবে শেষ পর্যন্ত তেমন কিছুই হয়নি। এমনকি মানুষ এতটা স্বস্তির সঙ্গে গ্রামে পৌঁছাতে পারবে- সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত শীর্ষ ব্যক্তিরাও তা ভাবতে পারেননি। যদিও ঈদের আগে ৩০ এপ্রিল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার ঈদযাত্রা স্বস্তিতেই কাটবে। কারণ মহাসড়কগুলোর অবস্থা খুবই ভালো।’ তার এই কথা সত্যি হয়েছে।
করোনার কারণে বিগত দুই বছর ঈদ করতে না পারায় ব্যাপক সংখ্যায় মানুষ এবার পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রামে ঈদ করতে গেছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে দ্বিগুণ মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। সেই যাত্রায় ছিল না ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ যানজট। সড়কে ছিল না কোনো বিশৃঙ্খলা। তাই কোনো ভয়ংকর পরিস্থিতিও দেখতে হয়নি।
মানুষ যে ভালোভাবে গ্রামে ফিরতে পেরেছে; এটা অবশ্যই সরকারের জন্য বড় এক সাফল্য। তবে সেই সাফল্য আংশিক। কেননা গ্রামে যাওয়া সেই মানুষগুলোর ফেরার বিষয়টাও আছে। তাদের ফেরাটাও স্বস্তির হলে তবেই শতভাগ সাফল্য দাবি করা যাবে। আর সেটা হলে আমরা সবাই তখন হাত খুলে সরকারকে বাহবা দিতে পারবো। না হলে যথারীতি সমালোচনার মুখে পড়তে হবে সরকারকে।

এটা ঠিক, ঈদের বেশ কয়েকদিন আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হয়ে যাওয়া এবং অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ছুটির কারণে সড়ক ব্যবস্থাপনা অনেকটা সহজ হয়েছে। কিন্তু ফেরার ক্ষেত্রে ততটা সময় পাওয়া যাবে না। আগামী বৃহস্পতিবারই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের ছুটি শেষ হয়ে যাবে। সেই কারণে অনেক মানুষকে একদিনে ঢাকায় ফেরার তাড়া থাকবে। তাতে সড়কে চাপ তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
আর হিসাবটা এখানেই মেলাতে হবে। ঈদের আগে সড়ক ব্যবস্থাপনায় যতটা গতি থাকে, ঈদের পরে সেটা আর দেখা যায় না। দায়িত্বে থাকা অনেকের মধ্যেই একটা আয়েশিভাব চলে আসে। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতায় বারবার এমন চিত্রই দেখা গেছে। তাই মানুষের ফিরতি যাত্রা স্বস্তির করতে হলে- এসব বিষয়ও বিবেচনায় নিতে হবে। তৎপর থাকতে হবে আগের মতই।
আমরা মনে করি, সড়ক ব্যবস্থাপনায় থাকা কর্মকর্তারাও এসব নিয়ে চিন্তা করবেন। নিজেদের শতভাগ সাফল্য পেতে চেষ্টার ত্রুটি করবেন না তারা। মানুষ স্বস্তির সঙ্গে কর্মস্থলে ফিরতে পারলে স্বস্তি পাবে সরকারও।