
গল্পটা আইসিসি ট্রফির, ১৯৯৭ সালের কথা। কেনিয়ার সাথে টানটান উত্তেজনার সেই ম্যাচ। টার্ফ উইকেটে পাইলটের লং-অনের উপর দিয়ে সেই ছয়, বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিল ১৯৯৯ আইসিসি বিশ্বকাপের মূল পর্বে। সেসময় সারা দেশে যে উত্তাল আনন্দের ঢেউ উঠেছিল, তার গর্জন এখনো ভেসে আসে।
পরে সেই ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানো। এরপর ২০০৭ সালে ভারতকে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় এবং সাউথ আফ্রিকাকে বোকা বানিয়ে আরও একটি জয় ওই আইসিসি বিশ্বকাপে। সবশেষ অতুলনীয় খেলায় ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল যাত্রা।
এর মাঝে অগণিত ক্রিকেটারের বীরত্বগাঁথা রয়েছে। আমরা একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন অধিনায়ক খুঁজে পেয়েছি। পেয়েছি দারুণ মেধাবী এক ঝাঁক ক্রিকেটার, যারা বাংলাদেশের পতাকা এবং লাল-সবুজের গৌরব নিয়ে গেছেন সুউচ্চে। যারা দিনের পর দিন ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করে গেছেন। ২০১২ এবং ২০১৬ সালের এশিয়া কাপ, সবশেষ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরেও বাংলাদেশ বেশ ভাল করেছে।
মোদ্দা কথা বাংলাদেশ দারুণ করেছে আইসিসি’র টুর্নামেন্টগুলোতে। ‘আন্ডারডগ’ তকমাটা বাংলাদেশের সঙ্গে লেগে ছিল সেই ১৯৯৯ সাল থেকে। তবে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশকে যেভাবে সমীহ করে, সেটা বাংলাদেশ অর্জন করে নিয়েছে পারফরমেন্স দিয়েই।

যদিও এই উপমহাদেশের আবেগপ্রবণ দর্শক যেমন তার দলকে আকাশে তোলে, ঠিক একইভাবে আছড়ে মাটিতে ফেলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না। তবে এ কথাও ঠিক, বাংলাদেশে যদি আর কোথাও কোন ঐক্য না থেকেও থাকে, তা নিশ্চিতভাবেই দৃশ্যমান ক্রীড়াক্ষেত্রে। আর যদি খেলাটির নাম হয় ক্রিকেট, তাহলে তো বলাই বাহুল্য। পুরো জাতি যেন ঐক্যের এক শক্তিশালী দুর্গ গড়ে তোলে চোখের পলকেই, যেদিন বাংলাদেশ ২২ গজে পুরো বিশ্বকে মাত করে দেয়।
এবারের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যে ক’টি দলকে ‘রিটেন অফ’ মানে কোন ধরণের হিসেবের মধ্যেই রাখা হয়নি তার মধ্যে বাংলাদেশ ছিল একটি দল। অথচ সেই বাংলাদেশই তার ক্রিকেট ইতিহাসে আইসিসি’র দ্বিতীয় বিশ্বকাপ-তুল্য টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল স্টেজে খেলছে প্রথমবারের মতো।
ইতোমধ্যে আর এক হিসেবের বাইরের দল, পাকিস্তান, দুর্দান্ত পারফরমেন্সে পৌঁছেছে ফাইনালের বন্দরে।
মাইক হাসি’র মতো বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার যখন দ্বিতীয় সেমিফাইনালের আগে বলেন, বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে খেলার জন্য নিশ্চয়ই কোন রণকৌশল এঁটেছে, তখন বাংলাদেশের অন্যতম সমালোচক রবি শাস্ত্রী ঝাঁপিয়ে পড়ে মাইককে বলেন- প্ল্যান মানে, ওরা বহু আগে থেকেই দারুণ সব কাজ করছে এবং ওরা বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম উন্নত আন্তর্জাতিক মানের দল।
একই কথা শোনা যায় রমিজ রাজা, নাসির হুসাইন, এমনকী ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির মুখেও। সেমিফাইনালের আগে ভারত কাপ্তান বাংলাদেশকে প্রশংসার সাগরে ভাসিয়ে বলেন, বিশ্বের যেকোন দলকেই হারানোর ক্ষমতা রাখে লাল-সবুজরা।
তবে বিগ ম্যাচে বাংলাদেশ পরিষ্কার ফেভারিট ভারতের বিপক্ষে কতটা স্নায়ুর যুদ্ধ সামলাতে পারবে, তার দিকেই তাকিয়ে দেশে-বিদেশে থাকা সব টাইগার সমর্থক।
বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে নিশ্চিত জেতা ম্যাচ হেরে যাওয়ার কাঁটা এখনো বুকে বিঁধে আছে। যেখানে ক্ষতটা আমাদের দলের বড় ম্যাচ খেলার আস্থায় কিছুটা হলেও দোলা দিয়েছে। এই আস্থার দোলাচল থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি বাংলাদেশ? ভারতের মতো বড় দল আর তারকায় ভরপুর ক্রিকেটারদের সঙ্গে যুদ্ধটা ঠিক কেমন হতে যাচ্ছে? কীভাবে ম্যাচের প্রতিকূল সময়গুলো পেশাদারিত্ব আর ধৈর্য দিয়ে পার করবে বাংলাদেশ?
এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে বৃহস্পতিবার, এজবাস্টনে। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ঐতিহাসিক সেমিফাইনালে স্বপ্ন, সামর্থ্য, মেধা আর সুদীর্ঘ কঠিন পরিশ্রমের ফসল কি ঘরে তুলতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ছেলেরা? প্রতীক্ষা সবার। আশা সবার। স্বপ্ন সবার। শুধু মনোযোগ আর ম্যাচ জেতানো খেলোয়াড়দের সহযোগিতায় বাকি কাজটুকু নিবিড়ভাবে করে যেতে হবে মাশরাফি ও আমাদের গর্বের টাইগার-বাহিনীকে। তাহলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে বাংলাদেশ নিশ্চিত একটা বাজিমাত করেই ফেলবে।