কার মৃত্যুর পর বাংলা চলচ্চিত্রের বেশি ক্ষতি সাধন হয়েছে? চিত্রনায়ক মান্না নাকি নায়ক সালমান শাহ’র মৃত্যুতে? বাংলা চলচ্চিত্রের সংকট নিয়ে কথা বললে এমন প্রশ্ন প্রায়শই উঠে। এবার এমন প্রশ্ন নিজেই উঠিয়ে নিজেই উত্তর দিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের তুখোড় অভিনেতা ও বর্তমান শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর।
প্রায় তিনদশক পর আবারও শুরু হতে যাচ্ছে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতা। এমনটাই জানিয়েছেন চিত্রপরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ অনুষ্ঠানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র পরিবারের আহবায়ক আকবর পাঠান ফারুক, নায়ক আলমগীর, বদিউল আলম খোকন, এশিয়ান টেলিভিশনের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ, শাহীন কবির টুটুল, মিশা সওদাগর, সোহানুর রহমান সোহান, ছটকু আহমেদ, জায়েদ খান ও সাইমন প্রমুখ।
‘নতুন মুখের সন্ধানে’র মধ্য দিয়েই চলচ্চিত্রে অভিষিক্ত হয়েছিলেন তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা মান্না। তার কথা তুলে ধরে মিশা সওদাগর বলেন, কার মৃত্যুর পর বাংলা চলচ্চিত্রের বেশি ক্ষতি সাধন হয়েছে? চিত্রনায়ক মান্না নাকি নায়ক সালমান শাহ’র মৃত্যুতে?-এমন প্রশ্নের পর নিজেই এর সমাধান দেন। মিশা বলেন, সালমান ছিলেন তারকা খচিত নায়ক। কিন্তু মান্না ছিলেন গবেষক। দেশের মানুষ কীভাবে ছবি করলে দেখবে, হলে কেমন ছবি দেখতে দর্শক আসবে এসব গবেষণা করে যিনি ছবিতে অভিনয় করতেন সেটা ছিলেন মান্না। মানুষের পালস বুঝে সিনেমা করতেন। মান্নার জন্য আমার গভীর শ্রদ্ধা। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আজকে চলচ্চিত্রের যে বেহাল দশা এটার জন্য অন্তত ফিফটি পার্সেন্ট দায়ী মান্নার মৃত্যু।
বর্তমান সময়ে শিল্পী সংকটের উদাহরণ টেনে মিশা আরো বলেন, চলচ্চিত্রে সংকটের শেষ নেই। প্রচুর অভিনেতা অভিনেত্রী আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন। কিন্তু উপযুক্ত শিল্পীর বড় অভাব আমাদের। শিল্পীদের প্রতিনিধি হয়ে আমি বলতে পারি, এদেশে শিল্পী নেই। একদিক থেকে যারা অভিনয় করের তারাই শিল্পী, কিন্তু এই মুহূর্তে যাদের নিয়ে বক্স অফিস বলি যাদের নিয়ে চালান উঠানো সম্ভব, মানুষ দেখে খুশি হবে যাদের দেখে, টাকা দিয়ে যাদের সিনেমা দেখতে আসবে, সিনেমা দেখে তালি ও গালি দিবে এরকম শিল্পী আমাদের নেই। এরকম শিল্পীর বড় অভাব আমাদের। এরকম শিল্পী আমাদের চার থেকে পাঁচ জন।
আগে শিল্পী হতে হলে নানা গ্রুমি, ইন্টারভিউ এসব ধাপ পার হয়ে আসতে হতো। এখনকার মতো এতো সহজ ছিলো না অভিনয় জগতটা। এমনটাও জানান মিশা। তবে পরিচালক সমিতি দেরীতে হলেও শিল্পী তৈরির এমন উদ্যোগ নিয়েছে বলে তাদের সাধুবাদ জানান মিশা। তবে তিনি শুধু নায়ক-নায়িকা চান না, পরিচালক সমিতির উদ্দেশ্যে তিনি শিশু শিল্পী তৈরি করারও আহ্বান জানান।
‘নতুন মুখের সন্ধানে’ নিয়ে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন মিশা। বলেন, যেকোনো মহরত অনুষ্ঠানে মিডিয়ার সরব উপস্থিতি থাকলেও আজকে এমন অসাধারণ একটি উদ্যোগের সময় খুব একটা মিডিয়ার উপস্থিতি নেই, এটা খুবই বেদনার।
তবে মিডিয়ার প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে মিশা আহ্বান জানান, সবাই মিলে হেল্প করলে বাংলা চলচ্চিত্রে সুদিন ফেরানো খুব অসম্ভব কিছু না। আর এরজন্য মিডিয়ার ইতিবাচক ভূমিকা রাখা খুব প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।