বিভিন্ন বিষয়ে স্পষ্ট লেখালেখি ভারতীয় ঔপন্যাসিক অরুন্ধতী রায়কে ব্যাপক পরিচিতি এনে দিয়েছে। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ এর জন্য ১৯৯৮ সালের ম্যান বুকার পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। লেখালেখি ছাড়াও তিনি পরিবেশগত সংশ্লিষ্টতা এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়েও সক্রিয়।
ভারতের আসাম রাজ্যের শিলংয়ে জন্মগ্রহণ করা বিশিষ্ট এই লেখক শুরু থেকেই বিভিন্ন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছেন, যা নিজ রাষ্ট্র ভারতীয় আগ্রাসন নীতিকেও আঘাত করেছে। এমনকি ভারতের যে কাশ্মীর নীতি রয়েছে তার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সময় বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হয়েছেন।
তবে সম্প্রতি ভুয়া ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তার একটি ভুয়া সাক্ষাতকারকে কেন্দ্র করে অরুন্ধতী রায়ের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে কঠোর সমালোচনা, ছড়ানো হচ্ছে অপবাদ। ‘৭০ লাখ ভারতীয় সেনাও কাশ্মীরের আজাদী ফোর্সকে পরাজিত করতে পারে না’, শিরোনামে পোস্টকার্ড.নিউজ নামক পাকিস্তানি একটি সাইটে প্রকাশিত সংবাদকে কেন্দ্র করে এই অপবাদ চলছে, যে সাইটটি এর আগেও বিতর্কিত সংবাদ প্রকাশে পরিপক্বতা দেখিয়েছে।
এই সাইটের সংবাদের ওপর ভিত্তি করে বিজেপি এমপি, অভিনেতা পরশ রাওয়ালও টুইট করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এবং কড়া সমালোচনা করেছেন, যা তার সমর্থকদের মধ্যে টুইটার প্রজন্মকে উস্কে দেয়ার পরিবেশ তৈরি করেছে। সোমবার রাতে সিএনএন-আইবিএন বিতর্কে ভুপেন্দ্র চৌবে বলেছিলেন, রাওয়ালের টুইটটি পরিবেশকে আরো বেশি ঘোলাটে করে তুলেছে এবং ঘটনাকে উস্কে দিয়েছে।
মূলত এই পোস্টের উৎস ছিলো পোস্টকার্ড নামক একটি ডানপন্থী ভুয়া সাইট। যা কোন গ্রহণযোগ্য সূত্র দিতে পারেনি। পাকিস্তানের একটি জাতীয়তাবাদী সাইট দ্য টাইমস অব ইসলামাবাদ গত ১৬ মে একটি গল্প প্রকাশ করে। পত্রিকাটিও অরুন্ধতী রায়ের ‘৭০ লাখ ভারতীয় সেনাও কাশ্মীরের আজাদী ফোর্সকে পরাজিত করতে পারে না’ বরাত দিয়ে সংবাদটি প্রকাশ করে। ১৬ মে রেডিও পাকিস্তান একটি শিরোনাম দেয় ‘অরুন্ধতী রায় অকুণ্ঠ কাশ্মীরে ভারতীয় আগ্রাসন লজ্জাজনক’।
অরুন্ধতী রায়ের মন্তব্যের জন্য রেডিও পাকিস্তান বা টাইমস একটি সূত্রও দেয়নি। পরবর্তীতে পাকিস্তানের আরএইচ চ্যানেল তাকে উদ্ধৃত করে একই সংবাদ প্রকাশ করে, যা সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং অসমর্থিত সূত্র হিসেবে ধরা হচ্ছে।
অরুন্ধতী রায় বলছেন, তিনি সম্প্রতি শ্রীনগর সফরে যাননি এবং কোন সাক্ষাতকারও দেননি। তিনি কাশ্মীর নিয়ে আগে থেকে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন, যা নিয়ে নতুন করে অপবাদ ছড়ানোর কিছু নেই। তাই এখনকার এই অপপ্রচারকে নোংরা প্রচারণা বলছেন তিনি।
এ ধরনের ঘটনাকে অরুন্ধতী রায়ের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার হিসেবে ধরা হচ্ছে, যা মূলত কাশ্মীরের আন্দোলনকারীদের পক্ষে যাচ্ছে। আর অরুন্ধতী রায়ের সমালোচনাকারীরা এটিকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছে।