
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ১৭টি নথি চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার বিষয়টি জানা যায়। একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ নথি হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। ঘটনাটি এখন তদন্তনাধীন আছে বলে এই বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এই ঘটনার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে ১৭টি নথি হারিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানায় জিডি করেন উপসচিব (প্রকল্প বাস্তবায়ন-১ শাখা, অতিরিক্ত দায়িত্ব ক্রয় ও সংগ্রহ-২) নাদিরা হায়দার। পরদিন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও চিকিৎসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এরপর রোববার দুপুরে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই শাখায় যায়। সেখানে বলা হয়: স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ক্রয় সংক্রান্ত শাখা-২ এর কম্পিউটার অপারেটর যোশেফ সরদার ও আয়েশা বুধবার কাজ শেষ করে ফাইলটি একটি কেবিনেটে রেখে গিয়েছিলেন। ওই ফাইলের ভেতরে ১৭টি নথি ছিল।বৃহস্পতিবার অফিসে গিয়ে কেবিনেটে ওই ফাইলটি আর খুঁজে না পাওয়ায় থানায় জিডি করা হয়। রোববার সিআইডি ফরেনসিক বিভাগ এবং শাহবাগ থানা পুলিশ সেখানে গিয়ে তদন্ত চালায়। পরে ওই শাখার কর্মী বেল্লাল পলাশ, আব্দুল বারী, আয়েশা সিদ্দিকা, যোশেফ সরদার, বাদল ও মিন্টুকে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। সোমবার রাতে ঢাকা থেকে সিআইডির একটি দল রাজশাহী গিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার নাসিমুল গনি টোটনকে ঢাকায় নিয়ে আসে। তাকেও সিআইডি কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জনসংযোগ) আজাদ রহমান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া কিছু তথ্য ‘যাচাই করার জন্য’ টোটনকে ঢাকায় আনা হয়েছে। গত রোববার দুপুরে তাদের তদন্তকারীরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন। তখনই স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ক্রয় সংক্রান্ত শাখার ছয় কর্মচারীকে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। তাদের নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ওই শাখায় যারা ফাইলগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করত, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ওই ঘটনায়তো শুধু জিডি হয়েছে। তাই কীভাবে মিসিং হতে পারে তা জানতেই মূলত তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি আমরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন: তার মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল চুরির যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে তিনি ‘ক্ষুব্ধ’। মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল চুরির ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং এ ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ। এ ব্যাপারে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আমরা নিয়েছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার বলেন: আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করছে। তদন্ত করে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, আমরা তা নেব।
রাষ্ট্রের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের নথি চুরির এই ঘটনা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক এবং হতাশার। সরকারি প্রতিষ্ঠানের হাজারও নজরদারির মধ্যে কী করে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল চুরি হয় বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অধিকতর নজর দেয়া দরকার বলে আমরা মনে করি। এমনি করোনা মহামারী চলাকালে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। একের একের পর এক দুর্নীতির সংবাদে দেশের জনগন হতাশ ও ক্ষুদ্ধ হয়। এভাবে কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হতে পারে না। আমরা মনে করি এই ফাইল চুরির ঘটনায় দোষীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পারে এইসব ঘটনা রোধ করতে।