প্রতি বছরের মত এবারও এসেছে শোকের মাস আগষ্ট, এসেছে ভয়াল ১৫ আগষ্ট। এসেছে সেই দিনটি-যেদিন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, মুক্তিযুদ্ধের প্রাণ পুরুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তাঁর রাষ্ট্রপতিপদে অধিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় ধানমন্ডিস্থ নিজ বাসভবনে রাতের অন্ধকারে সামরিক বাহিনীর একটি বিপথগামী অংশের হাতে সপরিবারে এবং নিষ্ঠুরভাবে নিহত হন।
বাঙালির গৌরবোজজ্জ্বল ইতিহাসেরও অপমৃত্যু ঘটলো ঐ ভয়াবহ হত্যার সাথে। বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস শুধু নয় জনগণকে সাথে সক্রিয়ভাবে তার প্রতিরোধ করা-যেমনটি বাঙালি থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত।
না, বাঙালির গৌরবের সূচনা ১৯৪৮ এর ভাষা আন্দোলন থেকেই শুরু হয় নি। তার শুরু ইংরেজ আমল থেকেই। ইংরেজ শাসনের অবসানের দাবিতে বাঙালি অসীম সাহসিকতার সাথে কখনও সশস্ত্রভাবে-আবার কখনও বা নিয়মতান্ত্রিক পথে লড়াই করে ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছিল। কত বাঙালি কত বছর কারাজীবন যাপন করতে বাধ্য হয়েছেন-কতজনকে দ্বীপান্তরে পাঠানো হয়েছে কতজনকে ফাঁসির দড়িতে লটকানো হয়েছে-তার কোন হিসেব চোখে না পড়লেও এটা সত্য যে সে লড়াই, সে ত্যাগ এবং সে আত্মদানও ছিল তুলনাহীন। আতংকিত ইংরেজ সরকার ঐ লড়াই-সংগ্রামে পাকিস্তানীদের মতই পরাজয় বরণ করে ভারতবর্ষ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল-কৃপা করে তারা ভারতের স্বাধীনতা দেয় নি।
আমরা এই মুহুর্তে সে সময়ের অনেক বাঙালির নাম করতে পারি যাঁরা আপোষহীন লড়াই চালিয়েছিলেন বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণে আনতে পারি ক্ষুদিরাম, রাজেন লাহিড়ী সহ অন্যান্য বীর নেতা যাঁদেরকে ফাঁসির রজ্জুতে লটকানো হয়েছিল। স্মরণ করতে পারি সূভাষ বোস কমরেড মুজাফ্ফর আহমেদ, বঙ্কিম ভট্টাচার্য্য, অমূল্য লাহিড়ী, মনি সিং, জ্ঞান চক্রবর্তী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস সহ আরও অনেককে যাঁরা জীবনের শুরু থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত কারাগারেই নিজেদের জীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁদের অবদানকে কোনক্রমেই খাটো করার বা উপেক্ষা করার কোন অবকাশ নেই। আমি আরও বহু নেতার নাম স্মরণে আনতে না পেরে এবং স্থানাভাবে উল্লেখ করতে না পারায় গভীরভাবে দুঃখিত। তবে ঐ সংগ্রাম মুসলিম জাতীয়তাবাদী নেতাদের অবদানও ছিল অসামান্য। কিন্তু মুসলিম লীগ ও বৃটিশদের এবং কংগ্রেসের কিছু সংখ্যক সাম্প্রদায়িক নেতার ষড়যন্ত্রে ঐ নেতাদের এবং জনগণের আকাংখা অনুযায়ী ভারতের স্বাধীনতা এলো না এলো ভারতকে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে বিভক্ত করে সাম্প্রদায়িকতার উগ্র বিষ ছড়িয়ে।

এলো পাকিস্তান। আঁধার ঘনালো বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে। যে বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায় ব্যাপকহারে ১৯৪৬ এর গণভোটে বিপুল সংখ্যায় পাকিস্তানের অনুকূলে ভোট দিয়ে পাকিস্তান সৃষ্টিকে সম্ভব করে তুললেন-সেই বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায় পশ্চিম পাকিস্তানী ও মুসলিম লীগ সরকারের কাছে চিহ্নিত হলেন হিন্দুদের দালাল, ভারতের এজেন্ট এবং খাঁটি মুসলমান নন-এই হিসেবে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তীব্র আঞ্চলিক শোষণ ও বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে, সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় পূর্ব বাংলা হতো মারাত্মকভাবে বঞ্চিত। পূর্ব বাংলার পাট, কৃষি এবং অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে অর্জিত তাবৎ আয় ব্যয়িত হচ্ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। সর্বোপরি, রাষ্ট্রভাষার ক্ষেত্রে বাংলাকে চরম অমর্যাদা প্রদর্শনের ফলে বিক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে থাকে বাঙালির মননে। নতুন উপলব্ধি গড়ে উঠলো, ইসলামের ধোয়া তোলা হয়েছিল ধর্মের নামে বাঙালিকে শোষণ করা করার জন্যে।
স্বভাবত:ই বাঙালি জাতি এগুলি মেনে নেন নি। যেখানে যেভাবে সম্ভব, এই শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে শুরু করেন প্রতিরোধ। বলা চলে, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পশ্চিমাদের ঐ ষড়যন্ত্রকে পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজ প্রতিরোধ করেছে। অত:পর তা ধীরে ধীরে রাজনৈতিক নেতৃত্বে গড়ে উঠতে থাকে।
শেখ মুজিব তখন তরুণ। কিন্তু তরুণ বয়সেই কি ছাত্র, কি যুব, কি রাজনৈতিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। জেল-জুলুম তাঁর শুরু হয় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অল্পকাল পর থেকেই।
অপরদিকে পাকিস্তানের শুরু থেকেই কমিউনিষ্ট পার্টি একদিকে যেমন নানা কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে-তেমনি আবার বামপন্থী ছাত্র নেতারা ভাষা আন্দোলনসহ তাবৎ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অত্যন্ত সাহসী ভূমিকাও পালন করে। ১৯৪৮ এ আওয়ামী পন্থী পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ এই সময়ের আন্দোলনে একক নেতৃত্ব প্রদান করে। বলা বাহুল্য, শেখ মুজিবর রহমান এই ছাত্র লীগ গঠনে এবং তার ঐ সময়কার সকল আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন। বামপন্থী ছাত্র নেতাদের সাথেও তাঁর হৃদ্যতার সম্পর্ক তখন থেকেই গড়ে উঠেছিল।
১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পর গঠিত হয় পাকিস্তানের প্রথম অসাম্প্রদায়িক ও বামপন্থী ছাত্র সংগঠন “পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র উইনিয়নের। বাহান্নর রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনের পরই আসলে পূর্ব-বাংলার গণ-আন্দোলন ধীরে ধীরে গণ সম্পৃক্তি এবং ব্যাপকতা অর্জন করতে থাকে।
বিভাগত্তোর পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপকভাবে হিন্দুদের দেশান্তরের ফলে সমাজ ও রাজিৈনতক অঙ্গনে যে গভীর শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছিল-প্রাথমিকভাবে তা পূরণ করতে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও পরবর্তীতে ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্র আন্দোলনের ক্ষেত্রে তা বাহুলাংশে পূরণ করে।
কিন্তু ছাত্র আন্দোলন তো শিক্ষা সমস্যা বা অপরাপর গণদাবীর ভিত্তিতে আন্দোলন চালাতে পারে তাতে তো রাজনৈতিক অঙ্গণে সৃষ্ট শূণ্যতা দূর হতে পারে না। মুসলিম লীগ সরকারকে হটিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কর্মসূচি কার্যকর করাও সম্ভব না। সেক্ষেত্রে বিকল্প রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন সেই দলের প্রতি জনগণের আস্থা ও সমর্থন গড়ে তোলাও প্রয়োজন। তাই মওলানা ভাসানী ও শামসুল হক প্রমুখের নেতৃত্বে শেখ মুজিবর রহমান ১৯৪৯ সালের ২৩ জনু “পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ” নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
নবগঠিত এই দলটির প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন আসাম প্রদেশে প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি এবং অনল বর্ষী বক্তা। তাকে সভাপতি, শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক ও শেখ মুজিবর রহমানকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে দলটির প্রথম কার্য্য নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু অল্পদিন পরেই শামসুল হকের মৃত্যু ঘটায় শেখ মুজিবর রহমান সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হন।
দলের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও নামের সাথে ‘মুসলিম’ শব্দটি থাকার ফলে সচেতন, অসাম্প্রদায়িক মহলে দলটির প্রতি কিছুটা নেতিবাচক মনোভাব ছিল-দলটির প্রতি কিছুটা নেতিবাচক মনোভাব ছিল-অপরপক্ষে পাকিস্তানের স্রষ্ঠা মুসলিম লীগের বিরোধী হিসেবে দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটায় দলটি প্রকৃতই পাকিস্তানের ঘোষিত উদ্দেশ্য “মুসলমানের দেশ” হিসেবে পাকিস্তানকে গড়ে তুলবে কি না তা নিয়েও জনগণের বড় অংশের মধ্যে সূচনালগ্নে বিস্তর সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল। মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে দলটির বিরুদ্ধে পরিচালিত ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও সংশয় সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যেই আওয়ামী মুসলিম লীগ যাত্রা সুরু করে।
ভাষা আন্দোলনের পরে রাজবন্দী মুক্তি, ঝুলে থাকা উপনির্বাচনগুলি অনুষ্ঠিত করা, চট্টগ্রামে পাকিস্তানের বাণিজ্যিক রাজধানী স্থাপন করা, পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদে অর্জিত অর্ধ পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যয় করা, বিনা বিচারে আটক রাখার আইন, সংবাদপত্রের কণ্ঠ নিরোধকারী আইন সহ সকল কালাকানুন বাতিলের দাবিতে আওয়ামী লীগ আন্দোলন শুরু করে এবং শীঘ্রই আন্দোলনগুলি ব্যাপকতা অর্জন করে। ছাত্র লীগ-ছাত্র ইউনিয়নের মিলিত অংশ গ্রহণে ঐ আন্দোলনগুলি দিনে দিনে তীব্রতা অর্জন করতে থাকে।
ইতোমধ্যে আত্মগোপনে থাকা কার্য্যত: বে-আইনী কমিউনিষ্ট পার্টির প্রকাশ্যে কর্মরত নেতা-কর্মীরা আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় আওয়ামী লীগ কিছুটা বাম-ঘেঁষা দলেও পরিণত হয়। কমিউনিষ্ট পার্টির ঐ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পূর্ব বাংলার প্রতিটি জেলা থেকেই তাদের অনেক সদস্যই আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন। এঁদের মধ্যে আবদুল মতিন (ভাষা মতিন), সেলিনা বানু, পীর হাবিবুর রহমান, সৈয়দ আলতাফ হোসেন সহ আরও অনেকেই ছিলেন ।
ধারাবাহিকভাবে গণ আন্দোলন সৃষ্টি করে এবং সরকারের তীব্র দমন নীতির মুখে সাহসিকতার সাথে আন্দোলন পরিচালনা করায় আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রধান বিরোধী দলে পরিণত হয়। ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগ কৃষক শ্রমিক পার্টি নেজামে ইসলামী, গণতন্ত্রীদল প্রভৃতি সমবায়ে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্ট ভূমিধস বিজয় অর্জন করে এবং এককভাবে ঐ নির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগ সর্বাধিক আসনে বিপুল ভোটাধিক্যে জয়লাভ করায় সংগঠনটির দ্রুত বিস্তৃতি ঘটতে থাকে এবং আওয়ামী মুসলিম লীগ দেশবাসীর আস্থা অর্জনে সমর্থ হয়। মওলানা ভাসানী যেমন অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণকে ব্যাপকভবে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হন-তেমনই আবার অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে শেখ মুজিব দেশের প্রতিটি জেলায়, থানায় দলের শাখাপ্রশাখা গড়ে তুলে কর্মীদের কাছে নিজেকে অপরিহার্য্য নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
এভাবে কিশোরকালে কলকাতার মুসলিম লীগকর্মী, ঢাকায় এসে ছাত্র লীগ কর্মী ও নেতা এবং যৌবনে আওয়ামী লীগ নেতা থেকে ১৯৬৬ তে এসে ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচী দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বাঙালির অন্যতম জাতীয় নেতায় পরিণত হন। ১৯৬৯ এ এসে তিনি হয়ে ওঠেন লাখো মানুষের করতালিতে বঙ্গবন্ধু।
ইতোমধ্যে দীর্ঘ কারাজীবন তাকে অবদমিত করতে সক্ষম না হওয়ায় তিনি দুঃসাহসী জননেতা এবং ছাত্র সমাজের এগার দফা কর্মসূচিকে তাঁর ছয় দফায় সাথে সমন্বিত করে তিনি একজন সৃজনশীল জননেতা হিসেবে বাঙালি জাতির অবিসম্বাদিত নেতায় পরিণত হন।
এলো ১৯৭০ এর নির্বাচন। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঐ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে পূর্ব বাংলার প্রায় সবগুলি আসন জয় করে পাকিস্তান পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তাঁর সংসদীয় দলের ও পার্লামেন্টের নেতা নির্বাচিত হয়েও ক্ষমতা হাতে পান নি। পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক সরকার সংলাপের মাধ্যমে প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দেন, ছয় দফা পরিত্যাগ করে তাদের দেওয়া এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিলেই কেবল তাকে পাকিস্তানীর মন্ত্রীত্ব দেওয়া হবে-নতুবা নয়। বাঙালির চোখের মনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ঘৃণাভরে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ২৬ মার্চ রাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাও ঘোষণা করেন।
সেনাবাহিনী পাঠিয়ে ঐ রাতেই পাকিস্তান সরকার “অপারেশন সার্চলাইট” নামে ঢাকায় ব্যাপক গণহত্যা শুরু করার মাধ্যমে বাঙালি জাতি ঐ মহামানবের স্বাধীনতা ঘোষণাকে বাস্তবায়িত করতে শহীদ তাজউদ্দিনের নেতৃত্বে মুজিব নগর সরকার গঠন করে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং নয় মাসব্যাপী বীরত্বপূর্ণ সশস্ত্র যুদ্ধের পর ঐতিহাসিক বিজয় ছিনিয়ে এনে হাতে লাল সবুজের পতাকা, “কণ্ঠে আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি” গেয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করেন।
কিন্তু এত লড়াই সংগ্রাম, রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলায় তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাধায় সপরিবারে নিহত হন।
আজ সর্বত্র বঙ্গবন্ধুর প্রাণহীন ছবি টাঙিয়েছি “জয় বাংলা” শ্লোগানে মাঠ-ঘাট মুকখরিত করে তুলছি, বাস্তুত:ই কি তাঁকে আমরা মনে রেখেছি? তাকে মনে রাখার অর্থঃ
এক. দলে সাধারণ কিন্তু নীতিনিষ্ঠ, অসাম্প্রদায়িক মানুষকে সদস্যপদ দেওয়ায়।
দুই. সৎ, নির্লোভ, বিত্তহীন নেতাদেরকে সাধারণ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেওয়া।
তিন. সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদের সক্রিয় বিরোধিতা করা।
চার. ধর্মীয় বা জাতিগত ও লিঙ্গীয় বৈষম্যের মূলোৎপাটন করা।
পাঁচ. বঙ্গবন্ধুর অমর কীর্তি বাহাত্তরের সংবিধানকে অবলিম্বে অবিকল পুন:স্থাপন করা।
ছয়. জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম সহ সকল ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দলকে সাংবিধানিকভাবে বে-আইনী ঘোষণা করা।
সাত. পুঁজিবাদী অর্থনীতি প্রত্যাখ্যান করে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গ্রহণ করে সরকারী খাতকে ব্যক্তিগত খাতের উপর প্রাধান্য দেওয়া।
বঙ্গবন্ধুকে মনে রাখতে হলে উল্লেখিত তাঁর সাতটি নীতি কার্য্যকর করতে হবে।
এবারে শোকের মাসেও দেখছি-তার নীতি-আদর্শ নয়, তাঁর ছবি আর সমধিস্থানকে মর্য্যাদ দিতেই আমরা ব্যস্ত। দুঃখজনকভাবে তাই বলতে হয় বঙ্গবন্ধু, তোমাকে আমরা মনে রাখিনি। ক্ষমা করো। আমরা শোকার্ত এ দাবি যথার্থ নয়। কারণ তা আমাদের কাজের সাথে সঙ্গতিহীন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)