
প্রায় পাঁচ দশক ধরে বাংলা চলচ্চিত্রে আছেন নির্মাতা কাজী হায়াৎ। অসংখ্য ব্লকবাস্টার, কালজয়ী ছবি উপহার দিয়েছেন তিনি। চলচ্চিত্রের নানা উত্থান পতনের জীবন্ত সাক্ষী কাজী হায়াৎ। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে নিজের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি কেমন দেখছেন এই দাপুটে নির্মাতা? জানতেই মুখোমুখি চ্যানেল আই অনলাইন:
আপনি সুস্থ আছেন তো?
শারীরিকভাবে আছি। কিন্তু মানসিক ভাবে এই সময়ে সুস্থ থাকাটা খুব কঠিন। তবুও চেষ্টা করছি।
আপনার ছেলে মারুফ নিউ ইয়র্কে, এখন কী অবস্থা তার?
আসলে মারুফের স্ত্রীর কিছুদিন আগে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ছিল। ট্রিটমেন্ট এবং কোয়ানেন্টাইনে থাকার ফলে এখন সুস্থ আছে। তো যখন স্ত্রীর করোনা ধরা পড়ে, তখন সাইকোলজিক্যালি মারুফ ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। ভয়ে আতঙ্কে সে ভেবেছিলো, তারও করোনা হয়েছে। তার নিজের কাছে মনে হচ্ছিলো গলা ব্যথা জ্বর। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল তার করোনা হয়নি।
কাজ নিয়ে কী ভাবছেন?
এখন তো সবই বন্ধ। পরিকল্পনা করেই কী লাভ!

বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত প্রথমবার ঈদে কোন সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে না এবার, কীভাবে দেখছেন?
আমারতো মনে হয়, শুধু এবার নয় ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আর সিনেমা চালু হবে কিনা এ বিষয়ে সন্দেহ! সোশ্যাল ডিসটেন্স রক্ষা করে যদি দিনের পর দিন চলতে হয়, তাহলে বাংলাদেশে অন্তত সিনেমা হল চালু রাখা সম্ভব না। আর এই মুহূর্তে এটা ছাড়া অন্য করণীয় ও নেই। সিনেমা হল চালু হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছি এজন্য, কারণ আমাদের যে সিস্টেমে সিনেমা হলগুলো আছে, এই সিস্টেমটা সোশ্যাল ডিসটেন্স -এর পুরোপুরি বিপরীত। হলে সিটের ৪ ভাগের ৩ ভাগ কমিয়ে ফেলতে হবে।
এটাতো করোনাকালীন একটা সমাধান! কিন্তু আপনি কয়েক দশক ধরে সিনেমায় আছেন, এবার সিনেমা হলে নতুন সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে না। নির্মাতা হিসেবে আপনাকে বিষয়টা পীড়া দিচ্ছে কিনা?
নির্মাতা হিসেবে পীড়া দিচ্ছে না, পীড়া দিচ্ছে এই বিষয়টি নিয়ে যে আমি আদৌ বেঁচে থাকবো কিনা! এ কেমন বিশ্ব দেখলাম। বয়স প্রায় শেষ, এই শেষ বয়সে এসে এ কেমন পৃথিবী দেখে গেলাম! তাছাড়া সারা পৃথিবীর সিনেমা হলই তো বন্ধ, আমার একা দুঃখ করে তো লাভ নাই। এই সময়ে আমার দুঃখ এটুকুই যে মৃত্যুর আগে এক বিবর্ণ পৃথিবী দেখে গেলাম! যেখানে পৃথিবীর মানুষ যুদ্ধ করছে সামান্য একটা ভাইরাসের সাথে। দিনের পর দিন যাচ্ছে অথচ মানুষ কিছুই করতে পারছে না।
করোনা পরবর্তী কেমন পৃথিবী দেখতে চান?
খাদ্যের দুর্ভিক্ষ হবে, করোনার পরে মানুষ না খেয়ে মরবে। এটা ঠিক, পাশাপাশি আরেকটা দুর্ভিক্ষ হবে সেটা হলো ‘বিনোদনের দুর্ভিক্ষ’। বিনোদনের ক্ষেত্রগুলো নিয়ে অনতিবিলম্বে পৃথিবীর সমাজবিজ্ঞানীদের ভাবা উচিত। খেলাধুলা হয়তো সম্ভব হবে, টেলিভিশনগুলো প্রচার করবে। কিন্তু সিনেমাহলগুলোতে আর সিনেমা চালানো সম্ভব হবে না। এমনিতেই হলে গিয়ে সিনেমা দেখার যে রীতি তাতে কয়েক বছর ধরেই পৃথিবীর সিনেমা হলে ধ্বস নেমেছে, এইবার বোধহয় করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে সিনেমা হলে আরো বড় ধ্বস নিয়ে নিয়ে আসবে। অনেক দেশের অনেক সিনেমা হল করোনা পরবর্তী সময়ে একেবারে শাটডাউন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছি।