শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী কাটাবাড়ী এলাকার পাহাড়ী জনপদ থেকে বন্যহাতির একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঠিক কীভাবে হাতিটির মৃত্যু হলো তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে বনবিভাগ ৭ সেপ্টেম্বর সোমবার সকালে বন্যহাতির ওই মরদেহ উদ্ধার করেছে। মৃত হাতিটির পেটের বাম সাইডে একটি ছিদ্র বা ক্ষত রয়েছে। যা দেখতে গুলির ছিদ্রের মতো মনে হয়। ওই ক্ষত বা ছিদ্র দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, হাতিটিকে মারা হয়েছে। কিন্তু বনবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, হাতিটি বয়স্ক। সম্ভবত অসুস্থ হয়ে হাতিটি মারা গেছে।
দুপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে মৃত হাটিতির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। পরে তারা ময়নাতদন্ত করে হাতিটির পাকস্থলী, ফুসফুস ও প্রয়োজনীয় কিছু অংশ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ করেন। ময়নাতদন্তের পর হাতিটির মরদেহ ঘটনাস্থলের পাশেই গর্ত করে পুতে রাখা হয়।
রোববার রাত ১১টার দিকে ৩০/৪০ টির মতো বন্যহাতির একটি দাল ভারতের জঙ্গল থেকে নেমে এসে নাকুগাঁও-ডালুকোনা গ্রামে হানা দেয়। এসময় গ্রামবাসী বন্যহাতির উপস্থিতি টের পেয়ে মশাল জ্বালিয়ে ডাক-ঢোল বাজিয়ে হৈ-হল্লা করে হাতির দলকে প্রতিরোধ করেন। পরে রাত একটার দিকে হাতির দল কাটাবাড়ি এলাকায় অবস্থান করে। এসময় খাদ্যের সন্ধানে হাতির পাল লোকালয়ে নামতে চাইলে গ্রামবাসী রাতজেগে হাতির পাহারায় থাকেন। শেষরাতের দিকে প্রচন্ড বৃষ্টিতে হাতির দল ভারত সীমান্তের জঙ্গলের দিকে চলে যায়। সোমবার সকালে গ্রামবাসী লাকড়ি সংগ্রহে পাহাড়ে গেলে কাটাবাড়ি এলাকায় আব্দুস সাত্তারের বাগান সংলগ্ন স্থানে একটি বয়স্ক হাতিকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে জনপ্রতিনিধি, বনবিভাগ ও বিজিবিকে বিষয়টি অবগত করা হয়।
এর আগে গত বছরের ১৮ জুলাই ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গজনী অবকাশ কেন্দ্র সংলগ্ন ভারত সীমান্তঘেঁষা ছোট গজনীর টিলাপাড়া এলাকা থেকে একটি মাদি বন্যহাতির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই হাতিটিও খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মারা যেতে পারে বলে জানিয়েছিলো বনবিভাগের কর্মকর্তারা।
শেরপুর সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই বন্যহাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। ময়মনসিংহ বন বিভাগ ও শেরপুর বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কার্যালয়ের হিসাব মতে, ১৯৯৫ সাল থেকে এ বছরের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ী এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৫৮ জনের। আহত হয়েছে সোয়া প্রায় পাঁচ শতাধিক লোক।
অন্যদিকে মানুষের হাতে মারা পড়েছে ২৮টি হাতি। যেসব বন্যহাতি মারা গেছে, তাদের বেশীর ভাগই হয় গুলিবিদ্ধ হয়ে, নয়তো ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কিংবা বিদ্যুতের পাতা ফাঁদে মারা পড়েছে। অসুস্থতা এবং খাদ্যে বিষক্রিয়াতেও মারা গেছে কিছু হাতি। ক্ষেতের কীটনাশকযুক্ত আধপাকা ধান, ইউরিয়া কিংবা কাঁঠাল খেয়ে বদহজমের কারণে হাতি মৃত্যুর ঘটনাও উঠে এসেছে।