রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে পরিত্যক্ত পানির পাইপের মধ্যে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত চারজনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
খালাস পাওয়া চারজন হলেন: আবদুস সালাম, জাহাঙ্গীর আলম, নাসির উদ্দিন ও জাফর আহমেদ।
এদের করা আপিলের শুনানি নিয়ে বুধবার বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, আইনজীবী এসএম শাহজাহান, এম সারোয়ার আহমেদ, আনোয়ারুল ইসলাম শাহীন ও এম আলী মর্তুজা। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আমিনুল ইসলাম। সাথে ছিলেন শামছুন্নাহার লাইজু, শোভনা বানু এবং ফারহানা আফরোজ।
এই মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়: ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেল চারটার দিকে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে বাসার পাশে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে একটি পরিত্যক্ত পাইপে পড়ে যায় শিশু জিহাদ। ফায়ার সার্ভিস দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টার চেষ্টা করে জিহাদকে উদ্ধার করতে না পেরে পরদিন বেলা তিনটার দিকে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করে। এরপর একদল উদ্যমী তরুণের চেষ্টায় শিশু জিহাদের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জিহাদকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই ঘটনায় জিহাদের বাবা নাসির উদ্দিন ফকির শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলা ও বিপজ্জনকভাবে গভীর পাইপের মুখ খোলা রাখার অভিযোগ আনা হয়। পরবর্তীতে এই মামলার আসামী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস আর হাউসের মালিক আবদুস সালাম, রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ও ইলেকট্রিশিয়ান জাফর আহমেদকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম ও দীপক কুমার ভৌমিককে খালাস দিয়ে ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান। বিচারিক আদালতের ওই রায়ে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত চারজনকেই দুই লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো দুই বছর করে দণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন দণ্ডপ্রাপ্তরা। সেই আপিলের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আজ রায় দিলেন।
অন্যদিকে জিহাদের মৃত্যুর পর তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আবদুল হালিম হাইকোর্টে রিট করেন। সেই রিটের শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে ৯০ দিনের মধ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা জিহাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন। এরপর হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ। পরবর্তীতে জিহাদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয় রেলওয়ে ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।