চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

শিশুদের বন্ধু এখন চারকোনা স্ক্রিন

KSRM

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভারতের চিনু জেবারাজের তিন বছর বয়সী মেয়েটি খুব উচ্ছসিত ছিলো। কারণ আর কদিন পরই সে স্কুলে যাবে। কিন্তু যে সময়ে স্কুলে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা সে সমেয়ই করোনা সংক্রমণ কমাতে ভারতজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়।

কয়েক মাস পরে লকডাউন শিথিল করা হলেও স্কুলগুলো বন্ধই রাখা হয়। ভারতের কোন কোন রাজ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া চেষ্টা করে কিন্তু একের পর এক করোনা ঢেউ এসে সেসব চেষ্টা বাঞ্চাল করে দেয়।

Bkash July

জেবারাজের মেয়ের বয়স এখন পাঁচ বছর। সে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে ৬০০ দিনের বেশী ক্লাস করেছে। স্কুল বলতে সে অনলাইন ক্লাসকেই বোঝে। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষাজীবন ব্যহত হচ্ছে ভারতে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার কোটি ২০ লাখ।

জেবারাজ বলেন, “আমি খুব আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম যাতে আমার মেয়ে স্কুলে যেতে পারে। সমবয়সী বাচ্চাদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে পারে। কিন্তু আমার মেয়ে আর তার বন্ধুদের কাছে এখন ক্লাস মানে জুম এ চারকোনা একটি স্ক্রিন।”

Reneta June

এ মাসে দিল্লীর স্কুল, কলেজগুলো খোলার কথা রয়েছে। অবশেষে জেবারাজের মেয়ে হয়তো সরাসরি স্কুলে গিয়ে ক্লাস করতে পারবে।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক বছরের জন্য স্কুল না থাকার ফলে ছেলেমেয়েরা শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছে।

মহামারি বিশেষজ্ঞ ড. চন্দ্রকান্ত লাহারিয়া স্কুল খুলে দেয়ার জন্য তদবির করে আসছিলেন। তিনি বলেছেন, “কোন শিশু যদি প্রথম শ্রেণীর শিক্ষাবঞ্চিত থাকলে তাহলে পরর্বতী শ্রেণীগুলোতেও তার প্রভাব থেকে যায়। শিক্ষা অর্জনে ক্রমবর্ধমান ক্ষতি দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব ফেলে।”

লাখ লাখ শিশুর জন্য স্কুল বন্ধ থাকার মানে তারা কোন শিক্ষাই পাচ্ছে না। যেসব শিশুর ল্যাপটপ নেই, নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধা নেই বিশেষ করে তাদের জন্য স্কুল বন্ধ থাকার প্রভাব ভয়াবহ।

গত আগস্ট মাসে অর্থনীতিবিদরা একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। সেই গবেষণা থেকে জানা যায়, ভারতে স্কুল বন্ধ থাকার ফলে দরিদ্র শিশুদের মধ্যে নানাবিধ প্রভাব পড়েছে। এক হাজার চারশ শিশুর মধ্যে পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখা গেছে অর্ধেকের বেশী শিশু মাত্র কয়েকটি শব্দ পড়তে পারে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শিশুদের এই সঙ্কটকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছিলো। কিন্তু সম্প্রতি ঘোষিত বাজেট দেখে বিশেষজ্ঞরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।

প্রান্তিক শিশুরা স্কুল বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্বীকার করে নিয়ে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিথারামান বলেছেন, ২শ’র বেশী টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে সরকার স্থানীয় ভাষায় শিশুদেরকে সম্পূরক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু ওইসব শিশুর বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবারাহের ব্যবস্থা করা হবে কি না, সে বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেননি অর্থমন্ত্রী।

সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত শিশুদের জন্য অনলাইন ক্লাসে অংশ নেয়া সুবিধাজনক। তারপরও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুম ক্লাসে বেশী দীর্ঘ সময় মনোযোগ দেয়া শিশুদের জন্য কষ্টকর। তামিলনাড়ুর কোড়াইকানাল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিশু পরামর্শক রুথ মেরি বলেছেন, “অনেক শিশুই ক্যামেরা চালু রেখে ক্লাস করা বন্ধ করে দিয়েছে। পুরো শিক্ষা প্রক্রিয়ায় শিশুরা বিচ্ছিন্ন বোধ করতে শুরু করেছে। শিক্ষকদের অবস্থা আরো জটিল।”

মালাথি খাওয়াস এর পাঁচ বছর বয়সী ছেলে ২০২০ সালে অনলাইন ক্লাস শুরু করে। তার শিক্ষকরা পুরো ৩০ মিনিটের ক্লাকে তাকে সংযুক্ত রাখার চেষ্টা করতেন। কিন্তু সেই ৩০ মিনিটে শিশুর মনোযোগ পেতে শিক্ষকরা গলদঘর্ম হয়ে পড়েন।

শিশু বিষেজ্ঞ মারিজা সিতার বলেছেন, ৫ বছর এবং তার বেশী বয়সী শিশুরা সমবয়সী অন্য শিশুদের সঙ্গে সবচেয়ে ভাল সময় কাটায়। অন্য শিশুদের কাছ থেকেই শিশুরা বেশী শিক্ষা অর্জন করে। সামাজিক দক্ষতা অর্জন এবং বিভিন্ন ঘটনায় কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে হয়, সেটা শিশুরা খেলার সময়েই শেখে।

মিসেস খাওয়াস জানিয়েছেন, তার সন্তানের শিক্ষকরা শিশুদের শেখানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। আমরা আশা করি বাচ্চারা সামাজিক যোগাযোগে দক্ষতা অর্জন করুক। বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে সক্ষম হোক। এমনকি শ্রেনীক্ষকে শিক্ষকের কথায় মনোযোগ দিতে শিখুক। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বাচ্চারা এগুলোর কোনটাই শিখছে না।

শিশুরা যাতে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস করে সেটা নিশ্চিত করতেও অভিভাবকরা অনেক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। মিসেসে খাওয়াস মনে করেন, অনলাইন শিক্ষা নিয়ে মা-বাবার মধ্যকার হতাশা শিশুদেরকেও প্রভাবিত করে।

 

I Screen Ami k Tumi
Labaid
Bellow Post-Green View