মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য যথেষ্ট খাবার, পানি ও আশ্রয় না থাকায় এসবের অভাবে অনেকে মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও ত্রাণ সরবরাহকারী সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন।
সেভ দ্য চিলড্রেনের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্ক পিয়ার্স বলেছেন: ‘বহু মানুষ মিয়ানমার থেকে ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত অবস্থায় এবং কোন খাদ্য বা পানি ছাড়াই এসে পৌঁছাচ্ছে। আমি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন এই কারণে যে, আশ্রয় নেয়া বিপুল লোকসংখ্যার কারণে সবার খাদ্য, আশ্রয়, খাবার পানি এবং মৌলিক পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিবারগুলো তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে না পারলে তাদের দুর্ভোগ আরও অনেক বাড়বে এবং এতে প্রাণহানিও ঘটতে পারে।’
জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন এবং নিধনযজ্ঞের ভয়ে গত আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে।
মার্ক পিয়ার্স মনে করেন, এত বেশি মানুষের প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য তাৎক্ষণিকভাবে মানবিক সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে হবে। আর এটা তখনই সম্ভব যখন আন্তর্জাতিক মহল তাদের অর্থ সাহায্য বাড়াবে।মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।