রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের গণতন্ত্রীপস্থী নেত্রী অং সাং সুচির অবস্থান কাপুরুষোচিত। শান্তিতে নোবেলজয়ী এই নেত্রী তাদের রোহিঙ্গা নামে ডাকতেও অস্বীকার করেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে পর্যন্ত রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করতে অনুরোধ করেছেন তিনি। এক সম্পাদকীয়তে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ইস্যুতে মিয়ানমার ও সুচির অবস্থান এভাবেই তুলে ধরেছে মার্কিন দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।
এতে বলা হয়, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব, ধর্মপালন, শিক্ষা, বিবাহ ও ভ্রমণের মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ২০১২ সালের সহিংসতার সময় হাজার হাজার রোহিঙ্গা তাদের বাড়ি-ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। শােষণ আর বঞ্চনা থেকে বাঁচতে গত বছর রোহিঙ্গারা সমুদ্রপথে দেশ ছাড়ার মরিয়া চেষ্টা করে।
সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়, ‘শান্তিতে নোবেলজয়ী এই নেত্রী তাদের রোহিঙ্গা নামে ডাকতেও অস্বীকার করেন। মিয়ানমারের সব বৌদ্ধরাই এটা করে এবং ‘বাঙ্গালী’ শব্দ ব্যবহার করে তারা মিয়ানমারের মিয়ানমারের নাগরিক নয় বলে উল্লেখ করে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে পর্যন্ত রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করতে অনুরোধ করেছেন। তার পরামর্শ ভুল এবং গভীরভাবে হতাশাজনক। প্রত্যেক রোহিঙ্গাই প্রত্যেকটি বার্মিজের মতো; যেমনটা তিনি (সুচি) নিজে।’
১৫ বছরের বেশি গৃহবন্দিত্ব অং সাং সুচিকে বিশ্বে সম্মানিত একজন রাজনীতিকে পরিণত করেছে। তার মতো একজন নেতার প্রকাশ্যে রোহিঙ্গা বিরোধীতা করার অনেকগুলো সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে। ১৯৬২ সালের পর এই প্রথম গণতান্ত্রিক নেতা নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। কিন্তু কোনো এক সন্দেহে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বৌদ্ধদের আচরণ এবং এই ইস্যুতে মার্কিন দূতাবাসে আক্রমণের বিরোধীতা করার সাহস দেখাননি সুচি-বলা হয় প্রতিবেদনে।

পত্রিকাটি আরো বলেছে, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া বিপর্যস্ত হওয়ার ভয়ে সুচি প্রকাশ্যে রোহিঙ্গাদের নাম উচ্চারণ করছেন না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা তার থেকেও খারাপ পরিস্থিতির কথা জানিয়ে বলেন, এর মাধ্যমে পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে ২০১২ সালে বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে সংঘটিত ভয়ানক সহিংসতা পুনরুজ্জীবিত হবে।
কোনো সন্দেহ নেই যে রাখাইন রাজ্য মিয়ানমার দরিদ্রতম রাজ্যগুলো অন্যতম। এটা যেন সাম্প্রদায়িক অসন্তোষের কাজে না লাগে সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সবচেয়ে সতর্ক প্রয়োজন। কিন্তু এসব কেবল মিয়ানমারের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে নিয়মানুগ নিপীড়ন ও রোহিঙ্গাদের প্রান্তিকীকরণে একটি চিরস্থায়ী উপর ভিত্তি করে করা যাবে না।
শেষ পর্যন্ত, মিসেস অং সান সু চি আমেরিকানদের ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ ব্যবহার করতে বলতে পারেন না। কারণ এই নারীর নাম মানবাধিকার সঙ্গে সমার্থক। একটি প্রজন্ম যারা স্বৈরতন্ত্রের মুখে অপ্রতিহত সাহসিকতা জন্য একজন নারীকে দেখেছে। কিন্তু সামরিক শাসকদের জন্য সফল তবে একদম অগ্রহণযোগ্য একটি নীতি যা তিনি অব্যাহত রেখেছেন।
সম্পাদকীয়র শেষে বলা হয়েছে, অং সান সু চি অবিলম্বে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে পারেন। তার এই অবস্থান বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে মিয়ানমারের গ্রহণযোগ্যতার মূল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে।