চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

রুচিশীল নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী

স্মার্ট ও রুচিশীল নাট্যনির্মাতা। নাটক রচনাতেও সমান পারদর্শী। নাটক নির্মাণ করছেন ১৬ বছর ধরে। নির্মাণ করেছেন প্রায় সাড়ে তিন শ’র মত নাটক। এর মধ্যে রয়েছে অনেক মনকাড়া নাটক। যা মানুষকে কাঁদিয়েছে, আনন্দ দিয়েছে। মানুষকে তার চারপাশের ঘটনাগুলো দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন তার চরিত্রের সংলাপের মাধ্যমে।

একজন সৃষ্টিশীল মানুষ তখনই সফল হন যখন পর্দায় তার নামটি না দেখে নির্মাণশৈলী, সংলাপ, রুচিশীল সেট, পাত্রপাত্রীর বাচনভঙ্গি দেখেই দর্শক বলে দিতে পারেন এটি সম্ভবত ওই নির্মাতা বা রচয়িতার নাটক। এসব ক্ষেত্রে বলা যায় তিনি পুরোপুরি সফল।

তার নাটকের কাহিনী প্রধানত প্রেম। আর এই প্রেমকে তিনি দেখিয়েছেন নানা আঙ্গিকে, নানা মাত্রায়। তরুণ-তরুণীই কেবল তার দর্শক নন, বয়স্ক মানুষও তার নাটকের সামনে বসে একবারে শেষ না করে উঠতে পারেন না। এই যে ম্যাজিকটি তিনি দেখাতে শিখেছেন তার জন্য তাকে অনেক শ্রম আর সময় দিতে হয়েছে। নিষ্ঠার সাথে দেখেছেন সিনিয়রদের কাজ। তা দেখে আস্তে আস্তে করে নিজেকে তৈরি করেছেন।

প্রেম প্রধান হলেও তার নাটকে জীবনের গল্পই বলেছেন। যে গল্প প্রায় সব মানুষের ভেতরেই কমবেশি থাকে। কেউ প্রকাশ করতে পারে কেউ বা পারে না। সেই অপ্রকাশিত কথাকেই তার রুচিশীল নির্মাণশৈলীর মাধ্যমে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যা দেখে মনকে কখনো হু হু করায় কখনো চেতনাকে ঝাঁকি দেয়।

আমাদের টেলিভিশনে নারী নাট্যনির্মাতাদের একজন তিনি। অনেক ধৈর্য নিয়ে কাজ করেন। দেখা গেছে, নাটকের শিডিউল হয়ে গেছে, চরিত্র সব ফাইনাল, শ্যুটিংয়ের ঠিক আগের দিন প্রযোজক বেঁকে বসলেন, তিনি অর্থলগ্নি করবেন না। হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত যে কোনো পরিচালকের জন্য মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মত অবস্থা। কিন্তু ভেঙে না পড়ে নিজেদের প্রযোজনা সংস্থা থেকেই নাটকের কাজ চালিয়ে গেছেন। এ রকম বারবার নানা প্রতিবন্ধকতা এলেও সবকিছু ছাপিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন সামনের দিকে। কাজের প্রতি রয়েছে তার নিষ্ঠা আর সম্মানবোধ। শিল্পীকে দিতে জানেন সম্মান।

প্রেম প্রধান নাটকের পাশাপাশি তিনি নির্মাণ করেছেন মা দিবসের নাটক, বাবা দিবসের নাটক। সবচাইতে বড় কথা এই নির্মাতা মুক্তিযুদ্ধ আর দেশ নিয়ে নির্মাণ করেছেন অসাধারণ কিছু নাটক। যা মানুষকে ভাবিয়েছে, মানুষকে অবাক করেছে। কারণ তার দর্শক আশা করেন তিনি মানুষের মনের অলিগলির ভেতরে ঢুকে জীবনের চরম সত্যকে হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানোর মত তুলে ধরবেন, কিন্তু সেই নির্মাতার কাছে দেশপ্রেম যখন ধরা দেয় ভিন্ন আঙ্গিকে তখন তারা শুধু অন্য আরেক নির্মাতাকেই খুঁজে পান।

এই ধৈর্যশীল আর পরিশ্রমী নির্মাতা কাজকে মনে করেন প্রার্থনার মত। যিনি তার ফেসবুকের সব লেখার শেষে মন থেকেই বলেন, ‘দেশের নাটক বেশি বেশি দেখুন, দেশের চ্যানেল দেখুন।’ এভাবেই একজন সৃজনশীল মানুষ তার দেশপ্রেমকে হয়ত ফুটিয়ে তোলেন।

তিনি চয়নিকা চৌধুরী। নিরংহকার একজন মানুষ।

নাটক নির্মাণের আজ ১৬ বছর পূর্তিতে অভিনন্দন, আপনাকে। আপনার কাছ থেকে দর্শক আরও ভালোবাসার নাটক দেখতে চায়। দেশের নাটক দেখতে চায়। ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। শুভ কামনা।