বিভক্তি ও অসহিষ্ণু পরিবেশ দূর করে রাজনীতিতে স্বস্তির জায়গা ফিরিয়ে আনতে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে সৌহার্দ্যের হাত বাড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের৷পদ্মা সেতুর পাশাপাশি অনেক সেতুর মতো রাজনীতিতে তিনি সৌহার্দ্যের সেতু তৈরি করার ঘোষণাও দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন: দেশের রাজনীতির পরিবেশ দিন দিন অসহিষ্ণু থেকে অসহিষ্ণুতর হচ্ছে, রাজনীতির পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে। বিভক্তির দেওয়াল উঁচু হতে হতে অলঙ্ঘনীয় অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। রাজনীতিতে ভিন্ন মত থাকতেই পারে৷ মত পার্থক্য ঠেলে অসহিষ্ণু পরিস্থিতি দূর করে স্বস্তির জায়গা ফিরিয়ে আনতে হবে।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি পলিটিক্যাল সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট এলামনাই এসোসিয়েশন’র (ডুপডা) বার্ষিক সাধারণ সভা, পুনর্মিলনী ও গুণীজন সম্মাননা’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন: ‘আমরা চিরদিন ক্ষমতায় থাকব না, বলা তো যায় না। চোখের পলকেই এদেশে অনেক কিছু ঘটে গেছে (অতীতে)। ২৩ নভেম্বর ১৫ আগস্ট ঘটে গেছে। বীরের দেশে বারবার বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতা বারবার রক্ত ঝরিয়েছে, আবার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। তারপরও আমি বলবো, যা উন্নয়ন হয়েছে; তা কোন নির্দিষ্ট দলের জন্য হয়নি।
এসময় শিক্ষা এবং বিদ্যুত খাতে সরকার বিস্ময়কর উন্নয়ন করেছে দাবি করে তিনি বলেন: আজ শিক্ষা ক্ষেত্রে যে বিস্ময়কর উন্নয়ন, তা শুধু আওয়ামী লীগের জন্য শেখ হাসিনা করেননি; করেছেন ১৬ কোটি মানুষের জন্য। আজ ঘরে ঘরে বিদ্যুতের সংযোগ, এগুলো কার জন্য করেছেন; জনগণের জন্য করেছেন। এ বাস্তবতা সকলের স্বীকার করে নেওয়া উচিত।
এরপরই দেশের বর্তমান রাজনীতিতে বিভাজনের কথা উঠে আসে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কথায়। তিনি বলেন: দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমাদের রাজনীতি অত্যন্ত পোলারাইজড এবং বিভক্তির দিকে যাচ্ছে। প্রবল থেকে প্রবল হচ্ছে অসহিষ্ণুতা। এই অসহিষ্ণুতা রাজনীতির পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলেছে।
এ পরিবেশের দায় সকল রাজনীতিবিদের বলে এসময় দাবি করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
নিজেকেও এই দায়ের বাইরে রাখেননি জানিয়ে তিনি বলেছেন: ‘আমরা কেবল রাজনীতিতে দেয়াল নির্মাণ করে যাচ্ছি। অলঙ্ঘনীয় এ দেয়াল ক্রমেই উঁচু থেকে উঁচুতে উঠছে। আমরা সেতু নির্মাণ করি। আমি সেতু মন্ত্রী, পদ্মা সেতু নির্মাণে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর বাইরেও আরো অনেক সেতু নির্মাণ করেছি। কিন্তু এখন রাজনৈতিক, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে আরো অনেক সেতু (সৌহার্দ্যের সেতু) প্রয়োজন।
এসময় কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ না করে সকল রাজনীতিবিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন: আমি সকলের কাছে আহবান করবো, আসুন বিভক্তির রাজনীতি থেকে ফিরে আসি। আর কোন ওয়াল নয়, এখন সেতু নির্মাণ করা দরকার। সম্পর্কের সেতুগুলোতে চিড় ধরে গেছে, এখন এগুলো মেরামত করা দরকার।
এসময় রাজনীতিবিদের সমালোচনা করে ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংগঠনিক এ নেতা বলেন: ‘আমাদের পলিটিশিয়ানরা এখন বেপরোয়া চালক হয়ে গেছে, ব্রেকলেস ড্রাইভার এর মতো। আমাদের কথাবার্তাও ব্রেকলেস পলিটিশিয়ানদের মতো। এসময় নাম উল্লেখ না করে কিছু রাজনীতিবিদের কথাবার্তাকে বিষের সঙ্গে তুলনা করে ফরমালিন বিষের মতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এরপরই সকল বিরোধী রাজনীতিবিদের প্রতি সৌহার্দ্যের হাত বাড়িয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন: এ অবস্থা চলতে থাকলে বিভক্তির দেওয়াল আরো উঁচু থেকে উঠবে। কিন্তু কোন ব্রিজ তৈরি হবে না। কাজেই যে যে মতেরই হই না কেনো, ট্রেডিশনের সঙ্গে টেকনোলজি; রিয়েলিজমের সঙ্গে আইডিয়ালিজমের একটা ফাইন ব্যালান্স করে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই রাজনীতিটা স্বস্তির জায়গায় আসবে।
এসময় তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন যেন প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ, সুষ্ঠু ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি হয় সে বিষয়ে সরকারের মনোভাব তুলে ধরেন। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টিতে সরকার সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সেই জন্য সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিএনপিকে অভিনন্দন জানান তিনি।
এসময় আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমানে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধানসহ ডুবডা’র উপদেষ্টা সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফেরদৌস হোসেনসহ অনেকে।