চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

রবি ঠাকুর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর বিরোধিতা: একটি মিথ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে পূর্ববঙ্গে তথা বাংলাদেশে একটি মিথ প্রচলিত আছে যে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।

এই মিথ প্রথম শুনি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী হিসেবে থাকার সময়। সে সময় একজন জামাত ঘরানার শিক্ষক ক্লাসে একবার বলে বসলেন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের ঘৃণা করতেন, তিনি পূর্ববঙ্গের উন্নতির মাইলফলক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা করেছিলেন।

Bkash July

ক্লাস শেষে সেই শিক্ষককে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার এই দাবির তথ্যসূত্র কি, উনি উত্তরে বলেছিলেন, পরে জানাবেন; কিন্তু তার এই ‘পরে’ আর আসেনি, উনি তথ্যসূত্র জানাননি।

আরো অনেক পরে ডানপন্থী জ্ঞানপাপীদের একটি লেখায় রবীন্দ্রনাথ নিয়ে একই দাবি দেখি। তবে, এবার তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

Reneta June

বলা হয়েছে- ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ কলকাতায় গড়ের মাঠে ঢাবি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গীয় বুদ্ধিজীবি ও প্রতিনিধিত্বশীলদের নিয়ে একটি জনসভায় রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত ছিলেন।

তথ্য উল্লেখ করায়, শুরু হয় অনুসন্ধান। সত্যিই কি রবি ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা করেছিলেন?

অনুসন্ধানে পেলাম, ভারত ও হিন্দু বিদ্বেষীদের এই তথ্য একটি ডাহা মিথ্যে কথা। মিথ্যে বারবার বললে, তা সত্য হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়, এখানেও তাই হয়েছে। রবিঠাকুর সম্পর্কে বলা ওই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যে, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বানানো।

কারন, ওই বছরের (১৯১২) ২৪ মার্চ রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে আসেন এবং গীতমাল্য (১৯১৪) গ্রন্থে সংকলিত বেশ কিছু গান-কবিতা লিখেন। সবচেয়ে মজার বিষয়, গীতমাল্যে সংকলিত “স্থির নয়নে তাকিয়ে আছি” কবিতাটি শিলাইদহে ১৫ চৈত্র, ১৩১৮ (ইংরেজী ২৮ মার্চ, ১৯১২) তারিখে রচিত হয়। ১৯১২ সালে নিশ্চয় এমন কোন প্রযুক্তি ছিল না যে, কবিগুরু শিলাইদহ থেকে কোলকাতার গড়ের মাঠে উড়ে আসবেন।

পূর্ববঙ্গে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরোধিতা কোন নজির নেই। রবিঠাকুরকে নিয়ে এই মিথ্যেগুলো ডানপন্থীদের ভারত ও হিন্দুবিদ্বেষ হতে সৃষ্ট।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে রবিঠাকুরের সম্পর্ক ছিল উষ্ম। ঢাকার নবাব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রনে ১৯২৬ সালে রবি ঠাকুর ঢাকা সফরে আসেন। ঢাকার নবাব বিশ্বকবিকে অর্ভ্যথনা জানান, তাঁর আতিথেয়তা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীরা কবিগুরুকে সংবর্ধনা দেয়। ১০ ও ১৩ তারিখ দুটো বক্তৃতা দেন কবিগুরু।

১৯৩৬ সালের ২৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল এক বিশেষ সমাবর্তনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার উপাধি দেয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও হঠাৎ অসুস্থতার কারণে কবিগুরু সমাবর্তনে উপস্থিত হতে পারেননি, তাঁর অনুপস্থিতিতে ও সম্মতিতে তাঁকে ডিলিট উপাধি প্রদান করা হয়।

রবি ঠাকুর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর বিরোধিতার টপিকটি আসলে কিছু অসুস্থ চিন্তার ধর্মান্ধ ও ইর্ষান্বিত ব্যাক্তির অপসৃষ্টি বৈ ভিন্ন কিছু নয়।  যতই প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হোক না কেন, বাঙালি ও বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় অম্লান থাকবেন বিশ্বকবি রবি ঠাকুর।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল
আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View