
বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের শেষ ম্যাচে পার্থে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৫-০ গোলে হারের পর দেশের ফুটবলপ্রেমীরা ভেবেছিলো বাংলাদেশ তার পুরো আত্মবিশ্বাস নিয়ে শক্তিশালী জর্ডানের বিরুদ্ধে লড়তে নামবে। অংক-পরিসংখ্যান-অভিজ্ঞতা- সব দিক থেকেই এগিয়ে ছিলো জর্ডান।
তারপরও যে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ অর্জন করেছিলো অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশ্বকাপ খেলা দলের সাথে গত বৃহষ্পতিবার খেলে, সবাই আশা করেছিলো কিছুটা হলেও একটা পরিবর্তন খুঁজে পাওয়া যাবে বাংলাদেশের খেলায়।
বরং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক সে খেলায় অর্জিত অভিজ্ঞতার কোনো প্রভাব চোখে পড়েনি। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের এই খেলায় ঘরের মাঠে বেঙ্গল টাইগারদের একরকম বোকা বানিয়ে মাঠ ছেড়েছে আল নাশামাহ্ (বীর) খ্যাত জর্ডান। পয়েন্ট টেবিলের একদম নীচেই রয়ে গেলো বাঘেদের দল।
৪-০! বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জালে জর্ডানের চার গোল। বাংলাদেশের দর্শক হয়তো এরকম ফল আশা করেনি। অন্তত চারটি গোলের সুযোগ পেয়েছিলো বাংলাদেশ। জর্ডান’ও খেলার মাঝে-মাঝে তার মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছিলো। যদিও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় ইয়াসিন, জুয়েল রানা, এমিলি, এবং খেলার একদম শেষ দিকে কোমল। এ তো গেলো বাংলাদেশের সুযোগের কথা। আর পুরো খেলা জুড়ে বাংলাদেশের ওপর চড়ে বসেছিলো জর্ডান। একদম ঘাড়ের ওপর।

ইনডিসিশন, নিজেদের মধ্যে বল আদান-প্রদানে উৎকন্ঠা, পাসিং-এর সহজ অপশন না নিয়ে কঠিন সব পজিশেনে পাস দেওয়ার এক ধরণের খামখেয়ালিপনা, যথারীতি তাড়াহুড়ো এবং অত্যন্ত দুর্বল মধ্যমাঠ বাংলাদেশের কাছ থেকে আজকের ম্যাচটিকে নিয়ে গেছে অনেক দূরে। যার ফলাফল ঘরের মাঠে এই বড় পরাজয়।
জর্ডান শক্তিশালী দল হলেও অতটা ক্ষিপ্র গতির নয়। শুরুতেই কিছুটা বিতর্কিত সিদ্ধান্তে পেনাল্টি পায় জর্ডান। সেখান থেকেই গোলের শুরু। ১৯ মিনিটে মামুনুল-এর নেওয়া সেকেন্ড বারের কর্নারটি মাথা ছুঁয়েছিলেন মোহাম্মদ ইয়াসিন। কিন্ত ফ্লাইং ইয়াসিন তার বডি-ব্যালান্স ঠিক রাখতে পারেননি বিধায় বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়। সহজ সুযোগ হয় হাতছাড়া।
বলতেই হচ্ছে, মধ্যমাঠে মামুনুল-এর নিষ্প্রভ উপস্থিতি খেলাটাকে বেগবান করতে পারেনি। অনেক পাসেই সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট ছিলো। ২৪ মিনিটে বাংলাদেশ একটি ফ্রি-কিক পায়। যেখানে পরিষ্কার দেখা গেছে জর্ডানের ওয়ালে বেশ বড় একটা ফাঁক ছিলো। সেই ফাঁকেই শট নেন মামুনুল কিন্তু সহজ-সরল-সোজা সেই কিকটি সহজেই লুফে নেয় জর্ডানের কিপার।
প্রতিপক্ষের সামনে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের ফিজিক্যাল স্ট্রেংথ দেখাই যায় নি। লক্ষ্যহীন, উদ্দেশ্যহীন দৌঁড়াদৌড়ি ধরা পড়েছে চোখে বহুবার। ৩২ মিনিটে জর্ডানের রক্ষণভাগের ভুলে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলো মিশু। ফার্স্ট টাইমে শট না নিয়ে অত্যন্ত কঠিন একটি পজিশনে সে বল পাস দেয় এমিলিকে। যা তিনি কাজে লাগাতে নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হন। ডি-বক্সের মধ্যে বসে গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে চিপ করার চেষ্টা বিফলে যায়। এই সুযোগে পাল্টা অ্যাটাকেই জর্ডান করে দ্বিতীয় গোল।
ঠিক যে সময় মনে হয়েছে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারে, ঠিক সে সময়ই জর্ডান খেলা কেড়ে নেয় ক্ষিপ্রতার সাথে। প্রথমার্ধের ৩৯ মিনিট থেকে জর্ডান পজেশন ফুটবল খেলে প্রথমার্ধ নিজেদের করে নেয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই জর্ডান আরও বেশি বাংলাদেশের লুপ-হোলসগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টায় থাকে। ৫৭ মিনিটে রক্ষণভাগ কোনভাবেই রাইট-উইংকে ঠেকাতে না পারায় তৃতীয় গোলটি হজম করতে হয় বাংলাদেশকে।
তারপর থেকেই জর্ডানের দৃষ্টিনন্দন ভিশনারি ফুটবল খেলা শুরু। পুরো মাঠ জুড়েই তারা দাপটের সাথে খেলতে থাকে। মাঝে-মাঝে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। ৮০ মিনিটের সময় কোমল বাম দিক দিয়ে দু’জন জর্ডান ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে ঢুকে গোলকিপার বরাবর শট নেয় যা সহজেই আটকায় কিপার। ঠিক পরের মিনিটেই এমিলি’র গোলকিপারের ডানে ফার্স্ট বারে নেয়া নিচু শটটিও আটকে যায় গোলকিপারের হাঁটুর কল্যাণে।
৮৮ মিনিটে আত্মঘাতী গোল প্রায় করেই ফেলেছিলো জর্ডান। কিন্তু কনসোলেশন ওই একটি গোল’ও যে বাংলাদেশের জন্য স্বপ্নই রয়ে গেলো।
জর্ডানের বেলজিয়ান কোচ পল পুট যে অংক কষে এসেছিলেন তা ঠিক ঠিক বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন। প্রতি হাফে দুটি করে চার গোল। আর বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের পরবর্তী ম্যাচে ভালো পারফর্ম করার অপেক্ষায় থাকতেই হচ্ছে ডি ক্রুইফ শিষ্যদের।