
করোনাভাইরাস মহামারিতে পুরো বিশ্বকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে যেন রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো। সেই তালিকায় এগিয়ে রয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। সেটি ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট।
তারা শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানই নয়, বরং বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান। পুনেতে তাদের বিশাল উৎপাদক প্ল্যান্টে প্রতিবছর তারা দেড় বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন তৈরি করছে। বর্তমানে লাইসেন্সধারী ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান যেমন অ্যাস্ট্রাজেনেকার জন্য করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিবিসিকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আদর পুনেওয়ালা বলেন, আমরা বিশাল পরিকল্পিত ঝুঁকি নিয়েছি। বেশ কিছু ভ্যাকসিন তৈরির দায়িত্ব আমরা নেই, এমনকি যখন নিয়ন্ত্রণকরা সেসবের অনুমোদনই দেয়নি- সেই সময়ে।
‘‘তবে সেই ঝুঁকি আমরা একেবারে অন্ধভাবে নেইনি। কারণ ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন তৈরি করায় অক্সফোর্ডের ওই বিজ্ঞানীদের কাজ সম্পর্কে আমরা জানতামই।’’
সেরামের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন তৈরির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিলো ফান্ড সংগ্রহ করা। প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি নিজেই ২৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে এবং বাকিটা বিল গেটসের মতো ধনকুবেরদের কাছ থেকে এবং ভ্যাকসিনগ্রহীতা দেশগুলোর কাছ থেকে অগ্রীম সংগ্রহ করে।
২০২০ সালের মে মাসের মধ্যেই ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করে সেরাম এবং বেশ কিছু ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলে।
এপ্রিলের মধ্যে কি কি দরকার হবে তার তালিকা তৈরি করেন পুনেওয়ালা। সেখানে ভ্যাকসিন সরবরাহের বোতল থেকে শুরু করে ফিল্টার সবই ছিলো।
তিনি বলেন, আমি ৬০০ মিলিয়ন কাঁচের বোতল সংগ্রহ করি আর সেটা সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমার ওয়্যারহাউজে রেখে দিই। জানুয়ারির মধ্যে আমরা ৭০-৮০ মিলিয়ন ডোজ পেয়ে যায় কারণ আমরা ঝুঁকি নিয়েই সেটা তৈরি করা শুরু করে দেই অগাস্ট থেকেই। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও একইভাবে ঝুঁকি নিলে ভালো হতো। কারণ বিশ্বে অনেক অনেক ডোজ ভ্যাকসিন দরকার।
আদর পুনেওয়ালা বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রক সিস্টেমের জোড়াতালি এবং সমন্বয়ের অভাবকেই ভ্যাকসিন উত্পাদনে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, বড় বড় নিয়ন্ত্রক যেমন যুক্তরাজ্যের এমএইচআরএ, ইউরোপের ইএমএ এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএকে মানদণ্ডের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ ও ঐক্যমত্যে আসতে হবে।
জাতীয় সরকারেরও সমালোচনা করে আদর পুনেওয়ালা বলেন, ভারত থেকে ইউরোপের ভ্যাকসিন তৈরির দেশগুলিতে নিয়ন্ত্রকরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সম্মতি জানাতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারতেন।
‘‘এখনও আমরা সমন্বয় আনতে পারি, সময় বাঁচাতে পারি নতুন ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে এই ধরনের পরিস্থিতি আমি দেখতেই চাই না।’’
তিনি বলেন, যারাই অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিয়েছে তাদের হাসপাতালে বা ভেন্টিলেটরে যেতে হয়নি এমনকি তাদের জীবনও অনেক ঝুঁকিতে পড়েনি। কিন্তু তাদের মাধ্যমে অন্যরা সংক্রমিত হয়েছে। তাই এটা হয়তো কোনো আদর্শ পরিস্থিতি নয়। কিন্তু এটা জীবন বাঁচাচ্ছে।