চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

যেখানে পুরুষের চেয়ে নারী শ্রমিকের চাহিদা বেশী

উত্তরের জেলা রংপুরের সাঁওতাল এলাকাগুলোয় কৃষি কাজে শ্রমিক হিসেবে পুরুষের চেয়ে নারীর চাহিদা বেশি। প্রতিটি পদক্ষেপে নারী সাফল্যের সূত্রে প্রমাণ মিলেছে যে তাঁরা বেশকিছু ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে এগিয়ে। সারাদেশের নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় উত্তরের জেলাগুলোতে সাঁওতালরাই এগিয়ে। তাঁরা ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। কিন্ত এখনো পরিবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে দেখা গেছে, নারী শ্রমিকরা কাজে ফাঁকি দেন না এবং যখন যে কাজ শুরু করেন, তা শেষ না করে বিশ্রামে যান না।

Bkash July

সাঁওতাল মহিলারা একদিকে যেমন ঘরের কাজ করে, ঠিক সেভাবেই অন্যের কাজকেও নিজের বলে মনে করেন। রংপুরের পীরগঞ্জের চতরা এলাকার সাঁওতাল নারী রিতা সরেন; নিজের ঘর সামলেও যেটুকু সময় পান অন্যের কাজ করেন।

রিতা বলেন, ‘আমরা মোটেও কাজে ফাঁকি দেই না। কারণ যে শ্রমে মাটিতে শস্য ফলে, এই শস্য খেয়েই আমরা বাঁচি। মাটিতে শস্য ফলাতে নিজের শ্রম দিতে ভালোই লাগে।’

Reneta June

সাধারণত মাঠে ধান রোপনের সময় এই নারীদের চাহিদা বেশি থাকে। তারা একাধারে কাজ করতে পারেন। তিনি আরো বলেন, ‘বিশেষ করে ধান লাগানোর সময় আমাদের চাহিদা বেশি বেড়ে যায় তাই তখন আর কোন কিছু করার ফুসরত থাকে না।’

জানা গেছে, কৃষি থেকে ঘর গোছানো সবই এখানকার সাঁওতাল নারীদের নিজের হাতে। তাদের দেখলেই মনে হয়, এরা কাজ পাগল মানুষ। সব কাজ নিজ দায়িত্বে করেন, এবং করতে সাচ্ছন্দবোধও করেন। ওখানকার বাস্তবতার নিরিখে বলা চলে, ‘পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি সংসার গোছাতে পটু।’

চতরা বাজারের লোকনাথ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, সাঁওতাল নারীদের শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগানোর মুল কারণ- তারা সৎ। এদের আর একটি বিশেষ গুণ- কোন কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করেই যান।

ধান রোপনে এদের নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এদের হাতের ধানের চারার সারি সোজা থাকে, ফলে সে জমিতে ধানের ফলনও বেশি হয়।’

তবে সাঁওতাল নারীদের এতো গুণগান থাকলেও আছে বঞ্চনার নিরব গাঁথাও। সাঁওতাল নারীরা উৎপাদন করেন ঠিকই কিন্তু ভোগ করতে পারেন না। নারী কৃষকদের সে অর্থে মূল্যায়ন কম। অথচ বলা হয়ে থাকে, এ গ্রামীণ নারী ও কৃষকেরাই কৃষি অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তারা কাজে পারদর্শী হলেও পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তাদের হাতে থাকে না। তাদের জন্য আলাদাভাবে নেই কোন ঋণের ব্যবস্থা।

স্থানীয় আরেক সাঁওতাল নারী শ্রমিক বলেন, ‘মাঠে-ঘাটে কাজ করি, সংসারের কাজ শেষ করার পর যে সময়টুকু পাই বাইরে কাজ করি। পুরুষরা যে কাজ করে তার চেয়ে বেশীই করি। কিন্তু আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। স্বামী আমাদের কোন দামই দেয় না।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকেই আমাদের জন্য কোন কিছুর ব্যবস্থা নেই। আমরা সুযোগ-সুবিধা পেলে কৃষি উৎপাদনে আরো বেশী অবদান রাখতে পারবো।’

এ বিষয়ে চতরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রাজু বলেন, ‘শুধু সাঁওতাল মেয়েদের জন্য আমরা কম্পিউটার এবং সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।’

এ ছাড়া তাদের জন্য বিশেষভাবে কোন প্রাণোদনার ব্যবস্থা নেই বলেও জানান তিনি।

এ রংপুরের পীরগঞ্জের সমাজসেবা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র জাতি সত্ত্বা ও নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্টী নিয়ে অনেক কাজ করার আছে। আমি এখানে আসার পর নিজ উদ্যোগে এদের ডাটাবেজ তৈরি করার কাজ করছি। উপজেলা প্রশাসন আমার এ কাজে সহোযোগীতা করছেন।’

তাদের সামাজিকভাবে আরো প্রতিষ্ঠা পাবার জন্য কাজ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওদের যে সামাজিক ব্যবস্থা বা সামাজিক প্রথা আছে সেখান থেকে বের করে নিয়ে মুল ধারার সমাজের সাথে বের করে আনতে হবে।’

তাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করাসহ নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করছেন বলেও জানান জয়নাল আবেদীন।

স্থানীয় কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা হলে পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকতা সমীর চন্দ্র ঘোষ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এখানকার ১৫টি ইউনিয়নের ৪টিতে সাঁওতালদের বসবাস। এদের পুরুষরা একটু অলস প্রকৃতির হলেও নারীরা অনেক পরিশ্রমী।

তিনি বলেন, ‘সাঁওতাল নারীরা সংসার সামলানোর পাশাপাশি সব ধরণের কৃষিকাজে পারদর্শী। আমরা কৃষিকাজে তাদের সহোযোগীতা করে থাকি।’

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View