রোজা শুরু হবার কদিন আগের কথা। রাত তখন কতো হবে, এই দশটা সাড়ে দশটা।
হাতির ঝিলের কোনা থেকে রিকশায় উঠেছি নাবিস্কো যাবো ভেবে। রিকশায় ওঠার পরই বুঝলাম ভুল করে ফেলেছি চ্যাংড়া রিকশাওলার রিকশায় উঠে। রিকশা যেন হাওয়ায় উড়ছে। এমনিতেই তেজগাঁওয়ের রাস্তাটা ভালো না। দুর্ঘটনা লেগেই আছে। তার মধ্যে উড়তে উড়তে চলছে আমার রিকশা। বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। বারবার বলতে লাগলাম ভাই একটু আস্তে চালাও। কার কথা কে শোনে। প্রতিবার বলার সাথে সাথে মনে হলো স্পিড আরো বাড়তে লাগলো। আমি জীবন বাজি রেখে শক্ত হয়ে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন ও একটু ক্লান্ত হয়, তখন নিশ্চয় গতি কমবে।
যখন কোনভাবেই ওর গতি কমলো না তখন আমার সন্দেহ হলো। একটু সহজ হবার ভঙ্গিতে বললাম মামা কয়টা মারছো। রিকশাওয়ালাও খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো। আমি একটার বেশি খাই না। এই ধরেন একটা চম্পা মাইরা বাইর হইছি সব মিলায়ে একশ’ ২০ টাকা খরচ হইছে। এই টাকা তুলমু তারপর রিকশার জমা তুলমু তারপরে গিয়া মনে করেন আমার লাভ। এর লাইগা তাড়াতাড়ি টানতাছি বুঝছেন? আমি হঠাৎ ওর সাথে চালানোর মতো কথা খুঁজে পেলাম না। কিছু না বুঝেই আবার প্রশ্ন করলাম কতক্ষন চালাবে এভাবে, উত্তরে বললো যতক্ষণ পিনিক থাকে।
মনে পড়ে গেলে বহু বছর আগে লালমাটিয়ায় এক ধনী বন্ধুর পার্টিতে প্রথম ইয়াবা দেখি। তখন শুনেছিলাম এটা বড় লোকের নেশা। বাংলাদেশে পাওয়া যায় এটাই একমাত্র হার্ড ড্রাগস। তারও বহু পরে ইয়াবা নিয়ে আলোচিত হয় নিকিতা সুন্দরী। জানাজানি হয় ভয়াবহ এই মাদকদ্রব্য নিয়ে। অনেকেই মুখে তখন শুনেছিলাম এবার মার্কেটিং হবে ভালো। কিন্তু মার্কেটিং যে এই পর্যায়ে যাবে তা কখনো ভাবিনি।
পরদিন অফিসে এসে অনলাইনে অনেক ঘাটাঘাটি করলাম। জানলাম এর ভয়াবহতা সম্পর্কে। একই সাথে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সংবাদের মাধ্যমে জানলাম কারা কারা সম্ভাব্য জড়িত এর সাথে। হতাশ হলাম, চিন্তিতও হলাম একই সাথে। কেননা বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের সর্বোচ্চ দৌড় ছিলো ওই ফেনসিডিল পর্যন্তই। তাই আজও থামানো যায়নি। কিন্তু ভয়ংকর ইয়াবা থামাবে কে !!! পার্শ্ববর্তী এক রাষ্ট্র নাকি ইয়াবার থাবা থেকে বাঁচতে আইন করেছিলো যার কাছে ইয়াবা পাওয়া যাবে তাকেই গুলি করা হবে। কিন্তু আমাদের দেশে এই আইন করবে কে!! যতদূর মনে পড়ে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ কিছুদিন আগে কোন একটা অনুষ্ঠানে ইয়াবা বন্ধে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। উনার অন্য সব কথার মতো এটাও জাতি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলো। তবে বাঁচতে হলে ওটাই করতে হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)