চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আনিসুল হক কেন অনন্য, কেন অসাধারণ

প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। একজন স্বপ্নবাজ মানুষের নাম। নিজেকে ঘিরে নয়, স্বপ্ন দেখতেন দেশকে নিয়ে, ঢাকা শহরকে নিয়ে। স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে ছুটে চলেছেন নিরন্তর। কিন্তু তার সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ায় শারীরিক অসুস্থতা। সব স্বপ্ন অপূর্ণ রেখেই পৃথিবীকে চিরবিদায় জানান এই স্বপ্ন কারিগর

আনিসুল হক, একজন সফল ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০-এর দশকে টেলিভিশনে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান আনন্দমেলা, অন্তরালে এবং জলসা উপস্থাপনা করে পরিচিতি পান তিনি। তিনি ছিলেন একজন ভালো বক্তা। দর্শক-শ্রোতা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতেন তার কথা। কিন্তু তার চলে যাওয়াকে মেনে নিতে পারছেন না তার অগনিত মানুষ।

মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে ফেসবুকে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। প্রখম আলোর উপ সম্পাদক আনিসুল হক লিখেছেন: এক ৩০ নভেম্বর লিখেছিলাম সুন্দরের রূপকার সুন্দর মানুষটি… কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত‌্যুদিনে। আনিসুল হককেও আমার মনে হতো, এই শহরের সবচেয়ে সুন্দর মানুষ। ১৯৯৫ সালে তাঁর গাড়িতে করে আমাকে আর মেরিনাকে ওয়ারির বাসায় পৌঁছে দিয়েছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে। নিজে গাড়ি ড্রাইভ করেছিলেন। নামের মিল নিয়ে কত মজা আমরা করেছি। আনিস ভাই… আনিস ভাই… সুন্দর মানুষ, আমাদের চারপাশটাকে সুন্দর করার সংগ্রামে শহীদ হয়ে গেলেন। সুন্দরের শহীদ।

চ্যানেল আইয়ের নিউজ এডিটর আদিত্য শাহীন লিখেছেন: ঢাকার মানুষ একজন মেয়র পেয়েছিলেন, যিনি স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে জানতেন। পারতেন অসম্ভবকে সম্ভব করতে…

চ্যানেল আই অনলাইন সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান লিখেছেন: এ দেশে পরিবর্তন আনতে হলে একাই সবকিছু করতে হয়। পদে পদে বাধা দেওয়ার মানুষ অনেক, কিন্তু পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। ন্বপ্নবান মানুষরা তবু স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যান। হয়তো তার অসময়ে চলে যাওয়ার এটাও একটা কারণ। আপনি সবসময় আমাদের কাছে একজন নায়ক ছিলেন। চিরদিন সেই নায়কই থাকবেন। শান্তিতে ঘুমান, প্রিয় আনিসুল হক। আর যারা জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝে তাকে ষড়যন্ত্রকারী তকমা দিতে চেয়েছিলেন; তারা যদি এবার থামেন।

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মনজুরুল আহসান বুলবুল লিখেছেন: অনেক প্ল্যান, অনেক সাহসী ভাবনা, কিছুই শেষ হলো না আনিস ভাই, শেষ হলো আপনার পথ চলা !!! থমকে দাঁড়ালাম, কিন্তু আবার পথ হাঁটবো-নিশ্চয়ই পাশে থাকবেন আনিস ভাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান লিখেছেন: একজন স্বপ্নবাজ মানুষ এর মৃত্যু! ভালো থাকুন ওপারে…।।

উপস্থাপনায় সফল আনিসুল হক থেমে থাকেননি গণমাধ্যমের পরিসীমায়। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে। মনোনিবেশ করেন তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়। বব্যসার পাশাপাশি হয়ে ওঠেন ভালো সংগঠক। ২০০৫ সালে ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি হন। এছাড়া সার্ক চেম্বারের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন আনিসুল হক।

আনিসুল হক যে ভালো সংগঠক ছিলেন তার সেই দৃষ্টান্ত টেনে লিখেছেন ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট’র সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর ভূইয়া। তিনি লিখেছেন: আনিসুল হকের সাথে আমার ‘সখ্যতা’ ২০০৫ থেকে যখন উনি এফবিসিসিআই এর সভাপতি ছিলেন। তখন মরহুম আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া ও আব্দুল জলিলের সংলাপ চলছিলো। উনি তখন একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন বিএনপি- আওয়ামী লীগের মধো একটা সমঝোতার তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত। একটা বিখ্যাত উক্তি উনি করেছিলেন, ‘আমরা দেশী ডাক্তাররা আগে চেষ্টা করে দেখি।”

হুমায়ুন কবীর আরও লিখেছেন: তারপর থেকে মাঝে মাঝে কথা হত পেশাগত কারণে। সর্বশেষ দেখা হয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া দিবসে যখন উনি ধুমসে কাজ করছিলেন। উত্তরার সব রাস্তাঘাট ঠিক করছিলেন। আমি কাছে এগোলাম। বললাম, “আপনি যেভাবে মেয়র হয়েছেন তা আমার একদম পছন্দ হয় নি। কিন্তু, আপনার কাজকর্ম ইচ্ছে না থাকলেও পছন্দ করতে হচ্ছে।” স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বললেন, “এখনও আপনার তেড়ামি যায় নি।” পরে ফিসফিস করে বললেন, “আপনার কি ধারণা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। অনেক সময় কিছু করার থাকে না।” পরেই যোগ করলেন, “কবির, খেয়াল রাখবেন কাজে কোন সমস্যা হয় কিনা। কোন অনিয়ম দেখলে আমাকে সরাসরি ফোন করবেন।”

বিশিষ্ট আলোকচিত্রশিল্পী আক্কাস মাহমুদ লিখেছেন: এফবিসিসিআই’র নির্বাচনে আমি আনিসুল হকের প্যানেলের মনোনীত প্রার্থী। একান্ত ব্যক্তিগত কারনে নির্বাচন করবো না বলে মোবাইল বন্ধ করে নিজেই নিঁখোজ হলাম! আনিস ভাই প্যানেলের সবাইকে নির্দেশ দিলেন খুঁজো আক্কাস মাহমুদকে!
পালিয়ে থাকতে পারলামনা। আনিস ভাইয়ের স্নেহ ভালোবাসার আকর্ষনে ফিরে গেলাম তার সামনে,
হা হা হা শব্দ করে বিকট হাসি দিয়ে নেতা আমায় বললেন ‘ তুমি ফিরে আসাতে আমি খুশি হয়েছি মাই বয়’! প্লিজ আনিস ভাই,আপনিও ফিরে এসে খুশি করেন আমায়!!

উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্বপ্ন দেখানো আনিসুল হককে নিয়ে লিখেছেন উইমেন চ্যাপ্টারের সম্পাদক সুপ্রীতি ধর। লিখেছেন: ইতর, বর্বর, অসভ্য রাজনীতির এই দেশে অনেকটা স্বপ্নই দেখিয়েছিলেন মেয়র আনিসুল হক। তিনি বলেছিলেন, মানুষ সংঘবদ্ধ হলে অনেক কিছুই পাল্টে দেয়া সম্ভব। শুনে ভাবছি, কী বোকাই না ছিলেন তিনি! এখানে সৎ মানুষেরা কখনও সংঘবদ্ধ হয়? অসৎদের মাঝ থেকে তাইতো বিদায় নিতে হলো তাকে, ভালোই হলো আনিস ভাই। আপনি জীবনেও পারতেন না আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে, কেউ করতে দিতো না আপনাকে ….।

মেয়র আনিসুল হক সবকিছু ছাপিয়ে হয়ে উঠেছিলেন প্রিয় মানুষ, প্রিয় নেতা। তবে পৈশাচিক আনন্দ পেতে কেউ কেউ যে তার মৃত্যু কামনা করছিল সে কথাও লিখেছেন অনেকে।

শহীদ সুরকার আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ লিখেছেন: পাশের প্রতিবেশী যখন চোখ চিকচিক করে বলে ওঠেন, আহা কত সুন্দর গাছ ছিল। কে মেরে ফেললো! তখন তার মুখের ভাঁজে এক পৈশাচিক আনন্দ ধারা বইতে দেখি। তাতে আবছায়ায় লেখা থাকে, ভালো হয়েছে। মানুষ বাঁচে না আবার গাছ!

ওনার মৃত্যু সংবাদের জন্য বাংলাদেশের গুটিকয়েক অপেক্ষায় ছিল। যতবার তারা গুজবগুলো লাফ দিয়ে ধরে শোক প্রকাশ করতো ঠিক ততবার তাদের আবেগে এক পৈশাচিক আনন্দ ধারা বয়ে যেতো। এমন কি গতকাল সে সত্যি সত্যি চলে যাওয়ার পর অনেকের শোকে আমি সেই পৈশাচিক ভাব ধারা বইতে দেখছি। যদিও তাতে আনিসুল হকের কিচ্ছু যায় আসে না। বাংলাদেশ জানেও না তারা কি হারাচ্ছে!

এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার আরাফাত সিদ্দিকী লিখেছেন: অনেক সফল মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, কিন্তু আকর্ষিত হতে পারিনি। তবে আনিসুল হকের উপস্থিতি সবসময় মনোযোগ টানতো। এমন মানুষ খুব কম দেখেছি, যারা সাধারণ হয়েও অসাধারণ হতে পেরেছিলেন।

কে তাকে পছন্দ করতো কে করতো না সেসব নিয়ে মাথাব্যাথা ছিলনা আনিসুল হকের। সমালোচনার জবাব দিয়েছেন কাজে। সে কারণেই হয়তো পেয়েছিলেন এতো মানুষের ভালোবাসা। সবার ভালোবাসা নিয়ে ওপারে ভালো থাকুন সবার মেয়র আনিসুল।