মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্মম নির্যাতনের সবরকম পদ্ধতি আর মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে দেশটির সেনাবাহিনী ও পুলিশ। কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে চালানো এসব নির্যাতনের ছিটেফোঁটা খবর প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন অান্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। কিন্তু রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে পারেনি কোন গণমাধ্যমই। তবে একটি ঘটনার খবর সারা বিশ্বের মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম মিয়ানমারের রাথেডং অঞ্চলের ছুট পিয়িন গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা প্রত্যক্ষদর্শীদের মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ওই এলাকায় প্রায় ২শ’ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্থানীয় আদিবাসীদের হাতে নিহত হয়েছে। শুধু তাই নয়, ছোট ছোট এসব রোহিঙ্গা শিশুকে মাথা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আর রোহিঙ্গা পুরুষদের দলবেঁধে একটি বাঁশের তৈরি ঝুপড়ির ভেতর আটকে তাতে আগুন দিয়ে সবাইকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। শিউরে উঠার মতো ঘটনা। আমরা আগেও নানাভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের কথা জেনেছি। বিশেষ করে সেখান থেকে প্রাণ ভয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখেই শুনেছি রাতের আঁধারে কিভাবে তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। কিভাবে হিংস্র হায়েনার মতো রোহিঙ্গা নারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। যদিও মিয়ানমার দাবি করছে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) নামে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা রাখাইনে ৩০টি পুলিশ ও সেনা চৌকিতে পরিকল্পিত হামলা চালিয়ে অনেককে হত্যা করেছে। তারই পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তারা জঙ্গি দমন করছে। কিন্তু জঙ্গি দমনের নামে আমরা কি দেখছি? ছোট ছোট এসব শিশু কি জঙ্গি? এই শিশুরাও কি সেনা চৌকিতে হামলা চালিয়েছে? আমরা মনে করি, এসব হাস্যকর অজুহাত দিয়ে নিজেদের অপরাধ ঢাকতে পারবে না মিয়ানমার সরকার। যদি জঙ্গি দমনেই অভিযান চালানো হবে, সেখানে কেন নিষ্পাপ শিশুদের মাথা কেটে রাস্তায় ফেলে রাখা হবে? পলায়নরত নিরস্ত্র নারীদের ওপর কেন গুলি চালানো হবে? আমরা চাই মিয়ানমারের নিরাপত্তার বাহিনীর এই নৃশংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিকভাবে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হোক। এর সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা হোক।