চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

ব্যাংকে চুরি ঠেকাতে জিএসএম-আইপি অ্যালার্ম

ডাকাতি ঠেকানো সম্ভব নয় ধরে নিয়েই ব্যাংকগুলো তাদের সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজায় ভল্ট ভাঙা এবং নগদ টাকা চুরি ঠেকানোর চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে। পুরনো আমলের ‘পাগলা ঘণ্টি’র অ্যালার্মের সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে জিএসএম যোগাযোগ সংশ্লিষ্টদের কাছে স্বয়ংক্রিয় মেসেজ এবং আইপি ক্যামেরায় কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সেলে পপ-আপ অ্যালার্ম পাঠানোর ব্যবস্থা।

নগদ টাকা এবং সম্পদ নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যাংকের ঝুঁকি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছে চ্যানেল আই অনলাইন

Bkash July

এর মাধ্যমে একটি আদর্শ এবং আধুনিক ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থার যে চিত্র পাওয়া গেছে পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো:

শাখা খোলা: শাখা খোলার জন্য প্রথমেই একটি ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট এলাকায় শাখাটির অর্থনৈতিক সম্ভাবনা যাচাই করে। ভালো সম্ভাবনা থাকলে শাখা খোলার সিদ্ধান্ত হলে বাড়ি খোঁজা হয়। এক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রথম পছন্দ একতলা বাড়ি। একান্তই একতলা না হলে দোতলাতেও শাখা খোলার কথা বিবেচনা করা হয়। তবে গ্রাহকরা যাতে সহজে সেবা পান, সেজন্য দোতলার উপরে যাওয়ার কথা ভাবা হয় না।

Reneta June

ব্যাংক শাখার জন্য সবচেয়ে ভালো হচ্ছে স্বতন্ত্র একতলা বাড়ি। এতে কাজের সুবিধা বেশি, নিরাপত্তা ঝুঁকি অনেক কম। আর যদি কারো সঙ্গে ফ্লোর ভাগাভাগি করতে হয়, তা হলে দেখা হয় দেয়ালের অন্যপাশে কোন্ প্রতিষ্ঠান। যদি সেটিও আরেকটি ব্যাংক শাখা হয়, তা হলে কোনো সমস্যা নেই। যদি প্রতিষ্ঠিত কোনো প্রতিষ্ঠান হয়, তা হলেও সমস্যা নেই। কিন্তু দেয়ালের অন্যপাশে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান না থাকলে সেখানে শাখা খোলার ক্ষেত্রে একশবার ভাবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এসবই ভাবা হয় রাতের বেলায় চুরির আশংকার কথা মাথায় রেখে। বাংলাদেশে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা তুলনামূলক অনেক কম। আর একান্তই দিনেদুপুরে ডাকাতি হলে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়ে সেটা ঠেকানো সম্ভব নয়। সন্ত্রাসে জর্জরিত দেশ ছাড়া বিশ্বের কোথাও সেরকম ব্যবস্থাও নেই। ডাকাতির ঘটনায় পরে টাকা উদ্ধারে পুলিশের উপরই ব্যাংকগুলোর নির্ভরতা। বাংলাদেশে সেরকম নজিরও আছে। আর নির্ভরতা সাধারণ মানুষের উপর। যেটা হয়েছে আশুলিয়ায়।

দিনের নিরাপত্তা: দিনের নিরাপত্তার জন্য দুয়েকজন নিরাপত্তা কর্মীর পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর আরেক রির্ভরতা ‘প্যানিক অ্যালার্ম’ বা ‘পাগলা ঘণ্টি’র উপর।

টাকা লেনদেন করেন এরকম সকল কর্মকর্তার ডেস্কে একটি করে সুইচ থাকে। কোনো বিপদ  দেখলে তিনি সুইচে টিপ দেন। তখন ঘণ্টা বেজে উঠে। শাখা ম্যানেজারের কক্ষেও এরকম অ্যালার্মের ব্যবস্থা থাকে। এই ‘পাগলা ঘণ্টি’গুলো বাজালে তা যাতে ব্যাংকের বাইরেও বাজে সে ব্যবস্থা করা হয়। এতে সাধারণ মানুষ ব্যাংকে ডাকাত পড়ার বিষয়টি বুঝতে পারে।

এর বাইরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সিসি টিভি। ব্যাংকের প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে ভল্ট পর্যন্ত প্রতিটি ইঞ্চিই সিসি ক্যামেরার আওতার মধ্যে থাকে। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারি থেকে শুরু করে গ্রাহক এবং অন্য যে কারো অস্বাভাবিক গতিবিধি নজরে আসে। আর কোনো অঘটন ঘটে গেলে পরে সিসিসিটিভির ফুটেজ দেখে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করা যায়।

রাতের নিরাপত্তা: চুরির ঘটনা যেহেতু রাতে ঘটে, তাই রাতের নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তারক্ষী আর সিসিটিভির পাশাপাশি আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

এর একটি ভল্টে লাইট ক্যামেরা। সম্প্রতি বাংলাদেশে ব্যাংকের নির্দেশে এ ক্যামেরাগুলো বসানো হয়েছে যাতে অন্ধকারেও ভল্ট ভাঙার ছবি উঠে থাকে। আবার ভল্ট ভাঙা ঠেকাতে তালাও এমন ব্যবস্থায় আনা হয়েছে যাতে কেউ লিভার ভেঙে ফেলতে না পারে।

পুরনো প্রথা অনুযায়ী রাতের বেলা ব্যাংকের ভেতরে আলোও জ্বালিয়ে রাখা হয়। এতে অস্বাভাবিক কোনো নড়াচড়া হলে বাইরে থেকেও কিছুটা বোঝা সম্ভব। কিন্তু যদি বিদ্যুৎ সরবরাহই বন্ধ করে দেওয়া হয়! সেক্ষেত্রেও জরুরিভাবে আলো জ্বালানো ব্যবস্থায় রাখা হচ্ছে। সেটাও নষ্ট করার চেষ্টা হলে চারপাশে ‘পাগলা ঘণ্টি’ বেজে উঠবে।

জিএসএম-আইপি নির্ভর সিকিউরিটি: তবে এখনকার সময়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জিএসএম (গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল) যোগাযোগ পদ্ধতির উপর। এটা মূলত: যে কোনো অস্বাভাবিক নড়াচড়ায় বার্তা পাঠানোর ব্যবস্থা।

রাতের বেলা কিংবা ছুটির দিনে ভল্ট বা ব্যাংকের ভেতর অন্য যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অস্বাভাবিক নড়াচড়া ‘মোশন ডিটেক্টর’ এর  মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোলরুম, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এবং শাখাটির আরো একজনের কাছে স্বয়ংক্রিয় মেসেজ যাবে। পুলিশের কাছেও এরকম মেসেজ যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যদি বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তারপরও এ ব্যবস্থায় ক্ষুদে বার্তা যেতে কোনো সমস্যা হবে না। একইভাবে দেয়াল ফুটো করলে বাজবে ‘সাইসমিক অ্যালার্ম’।

তবে সর্বশেষ আসছে আইপি ক্যামেরা। এর মাধ্যমে অন্ধকারেও শত মাইল দূরে যে কোনো শাখায় রাতের বেলা অস্বাভাবিক নড়াচড়া হলে, ব্যাংকটির কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সেলের মনিটরে তা পপ-আপ করতে থাকবে, স্বয়ংক্রিয় মেসেজ যাবে ম্যানেজার এবং পুলিশের কাছে।

এসবই ব্যাংক চুরি ঠেকানোর ব্যবস্থা। কিন্তু দিনে-দুপুরে ডাকাতি ঠেকাতে পুলিশ এবং সাধারণ মানুষের উপরই ব্যাংকগুলোর নির্ভরতা। এর এক কারণ, স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে সজ্জিত শত-শত, হাজার-হাজার নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়।

আরেক কারণ, বাংলাদেশে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা খুবই কম। তবে আশুলিয়ার রক্তাক্ত ঘটনার পর ব্যাংকগুলোকেও এখন এ বিষয়ে নতুন করে একটু ভাবতে হচ্ছে।

ISCREEN
BSH
Bellow Post-Green View