কক্সবাজারের রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়িতে বনাঞ্চলের ভেতর অবৈধ ভাবে টাঙ্গানো বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে এক বন্য হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার ভোরের দিকে মিঠাছড়ি ইউনিয়নের খরলিয়া ছড়া শাইরার ঘোনা নামক স্থানে এই ঘটনা ঘটে। তবে স্থানীয় জনগণ পরিবেশবাদীরা অভিযোগ করেছেন,পরিকল্পিতভাবে এই হাতিকে হত্যা করা হয়েছে।
হাতির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টো। তবে কী ভাবে মারা গেছে, তিনি তা স্পষ্ট করে বলতে পারেনি। স্থানীয় মেম্বারকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে হাতিটির মৃত্যুর কারণ জানতে চেষ্টা করছেন বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান।
স্থানীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান জানিয়েছেন, হাতির মৃত্যুর কারণ এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। উপরের অংশে কোন আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। তবে দেখে মনে হচ্ছে হাতিটি বেশ বয়স্ক। ভেটেনারি সার্জন এসে নমুনা নিয়ে গেছে। পরীক্ষার পর মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা যাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, ফরিদুল আলম, আলমগীর হোসেন জানান, দক্ষিণ বনবিভাগের পানেরছড়া রেঞ্জের আওতাধীন শাইরার ঘোনা নামক এলাকায় নুরুল হক নামের এক ব্যক্তি প্রায় ১০০ ফুট বৈদ্যুতিক তার চালিয়ে বনাঞ্চলে অবস্থিত তার প্রজেক্টে বিদ্যুৎ নিয়ে যায়। ওই জায়গায় দিয়ে প্রায় সময় হাতির চলাচল করে। ওই পথ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা এবং পরিবেশবাদীরা জানিয়েছে, হাতিটি রাতের বেলায় লোকালয়ের কাছাকাছি এসে ধানক্ষেতসহ বিভিন্ন ক্ষেত খেয়ে ফেলছে এবং নষ্ট করে ফেলছে। তাই এলাকার কিছু লোক পরিকল্পিতভাবে হাতিটিকে হত্যা করেছে।
স্থানীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, যেখানে মৃত হাতিটি পড়ে রয়েছে সেটি জোত জমি। এর পাশেই বন। ঘটনাস্থলের প্রায় ২০০ মিটার দূরে বাড়িঘর রয়েছে। এসব বাড়িঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। হাতিটিকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করা হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে। যেকোনো ভাবে হত্যা করার আলামত পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ঘটনার প্রায় ১৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও হাতি হত্যার ঘটনার কথা জানে না কক্সবাজারের পরিবেশ অধিদপ্তর। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার পরিবেশ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক এই তথ্য পাননি বলে জানান।
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন কক্সবাজার এর আহবায়ক মাসুদ উর রহমান বলেন, পরিবেশের স্বার্থে হাতিগুলোকে রক্ষা করার উদ্যোগ নিতে হবে।
পরিবেশবাদী সংগঠন ইনভায়ারমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাসেদুল মজিদ বলেন, যেভাবেই হোক হাতিটিকে যে হত্যা করা হয়েছে, সেটি বোঝা যায়। পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় হাতির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দিপু বলেন, হাতি হত্যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা চাই সরকার এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কক্সবাজার বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, মৃত হাতির দাঁত সহ প্রয়োজনীয় জিনিস সংরক্ষণ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে হাতিটিকে পুঁতে ফেলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য যেগুলো প্রয়োজন সেগুলো আগেই নেয়া হয়েছে। তবে হাতিটিকে যে হত্যা করা হয়েছে এরকম প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।