বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন, সংরক্ষণে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের সক্ষমতা যে সবার চেয়ে বেশি সেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলেছে।
আর তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস গত সপ্তাহে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন করতে বাংলাদেশের ইনসেপ্টা ফার্মার মতো ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করার আহ্বান জানান।
গত সোমবার ডাব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস কোভ্যাক্স, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্নার মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারকদের প্রতি এ আহ্বান জানান।
ওইদিন ডাব্লিউএইচওর মহাপরিচালক গেব্রিয়েসাস করোনার টিকা উৎপাদনসহ সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানান, মডার্না, কোভ্যাক্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক ওষুধ তারা প্রস্তুত করতে পারবে। কিন্তু বেশির ভাগই উৎপাদিত হবে এ বছরের দ্বিতীয় অর্ধে এবং আগামী বছর।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তেই আমাদের টিকা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইনসেপ্টা ফার্মার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অবকাঠামো ব্যবহার করে ভ্যাক্সিন উৎপাদনে গতি আনতে সক্ষম হবে।
এদিকে রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি ও চীনের সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশে উৎপাদনের কথা ভাবা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান টিকা উৎপাদনে আগ্রহও দেখিয়েছে।
রাশিয়ার টিকা স্পুতনিক-ভি ও চীনের সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশেই উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছুদিন আগে একটি কোর কমিটি গঠন করে। এই কমিটি তিনটি প্রতিষ্ঠানের টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা যাচাই করে। তারা নম্বর দিয়ে কোন প্রতিষ্ঠানের অবস্থান কেমন, সে সম্পর্কে অবগত করে।
বিজ্ঞাপন
কোর কমিটি ২৫-এর মধ্যে নম্বর প্রদান করে। এতে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস ২৫ নম্বরের মধ্যে ২১ পায়। আর পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস পায় ১২, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পায় ৫ নম্বর।
এদিকে বাল্ক থেকে ফিল ফিনিশ করে টিকা তৈরির সক্ষমতা ও মাস্টার সিড থেকে টিকা তৈরির সক্ষমতায় ৫ নম্বরের মধ্যে ইনসেপ্টা পায় ৪, পপুলার ৩, হেলথ কেয়ার ২ নাম্বার। মাসে কী পরিমাণ টিকা উৎপাদনে সক্ষম—এ ক্ষেত্রে ৫ নম্বরের মধ্যে ইনসেপ্টা ৫–এ ৫ লাভ করে, পপুলার ৩ ও হেলথ কেয়ার পায় ১ নম্বর।
টেস্টিংয়ে ৫ নম্বরের মধ্যে ইনসেপ্টা ৪, পপুলার ২ ও হেলথ কেয়ার ১ নম্বর অর্জন করে। জনবল ও অবকাঠামোয় ৫–এর মধ্যে মধ্যে ইনসেপ্টা ৪, পপুলার ২ ও হেলথ কেয়ার ২ নম্বর পায়। টিকা তৈরির অভিজ্ঞতা এবং রেজিস্টার্ড টিকার সংখ্যা, এ ক্ষেত্রে ৫ নম্বরের মধ্য ইনসেপ্টা ৪, পপুলার ২ ও হেলথ কেয়ার শূন্য নম্বর পায়।
গত ১৮ মার্চ সাভারের আশুলিয়া উপজেলার রাঙ্গামাটি এলাকায় ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের উৎপাদন প্লান্ট পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘অবকাঠামো এবং কিএমপি (গুড ম্যানুফ্যাকচারি প্রাকটিস) মান অনুযায়ী ভ্যাকসিন উৎপাদন করে ইতোমধ্যেই ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেড বিশ্বমানের প্লান্ট হিসাবে সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমি মনে করি কোভিড-১৯ এর সময়ে ভ্যাকসিনের জন্য অন্যকোনো দেশেও এই প্লান্ট ব্যবহার করতে পারবে। বিশ্বের জন্যস্বাস্থ্য সুরক্ষিত হওয়ার ক্ষেত্রে ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা বড় ধরনের ভূমিকা পালন করবে।’
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানায়, ইনসেপ্টার প্রতিমাসে ৮০ লাখ ডোজ টিকা উৎপাদন করতে পারবে।
ঢাকার সাভার-এ ২০১১ সালের জুন মাসে ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেড আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। যেখানে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা পরিসরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জিএমপি নীতিমালা অনুযায়ী স্থাপিত প্লান্ট রয়েছে। এতে রয়েছে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য উন্নত মানসম্পন্ন সকল যন্ত্রপাতি।
এছাড়া বৃহৎ এনিম্যল হাউস রয়েছে, যেখানে এনিম্যাল এর উপর বিভিন্ন ধরণের টেস্ট করা হয়। ভ্যাকসিন উৎপাদনের সকল কাজ পরিচালনার জন্য রয়েছে বিদেশী বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ ফার্মাসিস্টবৃন্দ।
ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেড, জুন ২০১১ থেকে তার উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে এবং এখন পর্যন্ত ১৩টি ভ্যাকসিন (ইমিউনোগ্লোবিউলিনসহ) যেমন- র্যাবিস, র্যাবিস-আইজি, হেপাটাইটিস- বি, হেপাটাইটিস-এ, টাইফয়েড, টিটেনাস, টিটেনাস-আইজি, মিজেলস-রুবেলা, এন্টিভেনাম, ফ্লু ও মেনিনজাইটিসসহ বেশ কয়েক ধরনের ভ্যাকসিন অত্যন্ত সফলভাবে উৎপাদন ও বাজারজাত করেছে। এই কোম্পানিটি সারাদেশে নিজস্ব সুগঠিত এবং নিয়ন্ত্রিত কোল্ড চেইন সিস্টেমের মাধ্যমে ফ্যাক্টরী থেকে ডেলিভারি পর্যন্ত ভ্যাকসিন গুণগত মান নিশ্চিত করে ।
বিজ্ঞাপন