চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

বিচ্ছিন্ন ঘটনা সকল কিসের আভাস?

কোনো সমাজে যখন অস্থিরতা তৈরি হয় তা একদিনে হয় না। সমাজের কোনো একটি একক গোত্র বা পক্ষ বা শ্রেণি থেকেও সামগ্রিকভাবে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়া সম্ভব নয়।

কিন্তু সমাজের ভিন্ন ভিন্ন পকেটে বা শ্রেণিতে বা গোত্রে যখন ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে টানা সময় ধরে টানাপোড়েন আর অবিশ্বাস আর অনাস্থা চলতে থাকে তখন সেটির একটি কিউমিউলিটিভ বা সমন্বিত সামগ্রিক প্রভাব পড়ে।

Bkash July

বিন্দু-বিন্দু জলে যেমন বড় জলাধার বা সিন্ধু হয়, তেমনি একটি সমাজের গড়ন।

আপাত অর্থে, সবই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। যেমন: মিন্নি, নুসরাত, খাদিজা, ত্বকী, ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে মেরে ফেলা, ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলা মা, নয়ন বন্ডের মৃত্যু, রিফাতের মৃত্যু, ক্রসফায়ারে কয়েকশ’ মাদক-ব্যবাসয়ীর মৃত্যু, পার্কে গিয়ে ব্যক্তির প্রাইভেসি লংঘন করে এমপির ক্ষমতা প্রদর্শন করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেবার বদলে ভোটার নিয়োগ দেয়া, খুনের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করতে সাংবাদিক-প্রশাসন-ক্ষমতাশীল মহলের একাট্টা হওয়া, মাদক-ব্যবসায়ীর তালিকায় নাম তুলে দেবার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা, পার্কে গিয়ে রেইড দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব কর্তৃক স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদেরকে থানায় এনে আটকে রেখে বাবা-মাকে ডেকে মুচলেকা আদায় করা, চিকিৎসার নামে হাসপাতালে মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করা, খাদ্যে ভেজাল, ওষুধে ভেজাল, অমুক্তিযোদ্ধা ব্যক্তিও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তুলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা, কক্সবাজারের সমুদ্রতটে ঘুরতে যাওয়া স্বামী-স্ত্রীর কাছে কাবিননামা দেখতে চাওয়া, রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্টে লোহার জায়গায় বাঁশ দেয়া, বাসের ভেতর গণধর্ষণ, বাস থেকে যাত্রীকে ফেলে তার বুকের উপর দিয়ে বাস চালিয়ে দেয়া, মন্দিরের বিগ্রহ ভেঙে ফেলা, পূজা-মণ্ডপের নিরাপত্তা দিতে প্রহরার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি অবশ্যই একেকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।নুসরাত-বিচ্ছিন্ন ঘটনা

Reneta June

কিন্তু এরকম বিচ্ছিন্ন ঘটনার সংখ্যা যখন বাড়তে থাকে তখন তা গুণগত পরিবর্তনের আভাস দেয়। কারণ সংখ্যাগত পরিবর্তনে গুণগত পরিবর্তন ঘটে।

ফলে, কোয়ান্টিটি ম্যাটার্স।

সমাজের একজন সদস্য ও পর্যবেক্ষক হিসেবে ক্রমাগত ভয়াক্রান্ত হচ্ছি। মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা দরকার। না হলে বিচ্ছিন্ন মানুষেরা বিচ্ছিন্নভাবেই এত বিরাট সংখ্যায় অঘটন ঘটাতে থাকবে যে, তা চলে যাবে নিয়ন্ত্রনের বাইরে। কেন্দ্র তখন ভর হারাবে। এটা চিন্তার বিষয়।

অস্থিতিশীল পরিবেশেই ওঁৎ পেতে থাকা শত্রু সক্রিয় হয়ে ওঠে। ঘরে-বাইরে মওকা নিতে চায়।

প্রিয়া সাহা অপকর্ম করেছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু এটি তার ব্যক্তির অপরাধ। ব্যক্তির বিচার হোক। তার সাথে যদি কোনো যোগসাজশকারী থাকে তাদেরও বিচার হোক।

কিন্তু ব্যক্তির অপরাধে অপরাধীর ধর্মীয় পরিচয়কে কেন্দ্র করে দেশে যেনে ঘৃণা না ছড়ায় সে দিকে লক্ষ্য রাখাটা এখন অতীব জরুরী।

পাশাপাশি, প্রিয়ার মতই অতীতে যারা ‘বিদেশি ত্রাতা’দের কাছে কথায়-কথায় রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে বিচার-আচার দিয়েছেন, কান্নাকাটি করেছেন সেই ঘটনাগুলোরেও তালিকা করা হোক। সেই নাকি-কান্না কাঁদুনেদেরও তালিকা করা হোক। আর দেশে রাজনৈতিক সংকট এলেই যে সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা খালি অমূক রাষ্ট্রদূত তমুক রাষ্ট্রদূতের মতামত জানতে চান, তারা এই পরামর্শ দিয়েছেন ওই পরামর্শ দিয়েছেন বলে কীর্তন শুরু করেন তাদেরকেও সতর্ক করে দেয়া হোক।রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা-প্রিয়া সাহা-বিচ্ছিন্ন ঘটনা

দেশ মানে সকলের অংশগ্রহণ। দেশ মানে শুধু সরকারের কাঁধে সব করার ভার চাপিয়ে দিয়ে নিজে আলগোছে বসে থাকা না। দেশ মানে, সকলের জাগরুক থাকা। মহাশিবরাত্রিতে যেমন একজন ঘুমে ঢলে পড়লে আরেকজন তাকে জাগিয়ে দেয়, দেশ মানে তেমনই সকলের এক সাথে জেগে থাকা।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

ISCREEN
BSH
Bellow Post-Green View