চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

নিহতের বাবাও বলছেন, ছেলে মাদক ব্যবসায়ী ছিল

মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে ধারাবহিক প্রতিবেদন-৩

চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত এক ব্যক্তির পিতা নিজেই বলছেন, তার ছেলে মাদক ব্যবসায়ী ছিল। আর এলাকাবাসী বলছে, এই ঘটনার পর সেখান শান্তি ও স্বস্তি ফিরেছে।

গত ২১ মে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগরের উথলী এলাকায় পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন জোনাব আলী (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী।

চলমান মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে  চ্যানেল অাই অনলাইনের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের তৃতীয় পর্বে উঠে আসে জোনাব আলী ছিল ওই এলাকার ত্রাস। তার প্রত্যক্ষ মদদে সেখানে চলতো মাদক ব্যবসা। এমনকি তার বিরুদ্ধে আছে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসাসহ নানাবিধ অনৈতিক কার্যকলাপে অভিযোগও।

সেই জোনাব আলীর মৃত্যুতে যেন শান্তি ফিরে এসেছে ওই এলাকায়। স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।

এলাকার ত্রাস জোনাব আলী
জোনাব আলীর মৃত্যুতে জনমনে স্বস্তি বিরাজ করছে উল্লেখ করে স্থানীয় সাংবাদিক সালাউদ্দিন কাজল চ্যানেল অাই অনলাইনকে বলেন, এলাকায় এমন কোনো খারাপ কাজ ছিল না; যার সাথে সে জড়িত ছিল না। সে প্রকৃতই একজন মাদক ব্যবসায়ী ছিল। তার নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটা মাদক ব্যবসায়ী দল পরিচালিত হত। গ্রামে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে মাঝে মাঝে তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে মোটরসাইকেলে করে অস্ত্র নিয়ে সারা গ্রাম টহল দিতো।

বলপূর্বক দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা 
এমনকি মেয়েদের দিয়ে বলপূর্বক দেহ-ব্যবসা করানোরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে উল্লেখ করে সাংবাদিক কাজল জানান। তার বাড়িতে মাদক কিনতে আসা লোকজনের মনোরঞ্জনের জন্য মেয়েদের জোরপূর্বক ধরে এনে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করত সে। শত অত্যাচারেও এলাকার মানুষ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পেতো।

বন্দুকযুদ্ধজোনাব আলীর বাবা বলছেন তার ছেলে মাদক বিক্রি করতো
ছেলে দুর্বৃত্ত হলেও বাবা জোমাত আলী বলছেন, তার ছেলে স্থানীয় কিছু লোকজনের কাছে অল্প মাদক বিক্রি করতো। এছাড়া আর কোনো দেষ ছিলে না তার।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাথে তার ছেলে জড়িত উল্লেখ করে জোমাত আলী বলেন: দলীয় কারণে একবার সে মারামারি করেছিল। এর বাইরে তার আর কোনো দোষ ছিল না।

২০ মে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ৩ জন সাদা পোশাকের পুলিশ ধরে নিয়ে যায় জোনাব আলীকে।  পর দিন সকালে শুনতে পান ছেলের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।

কী বলছেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান
উথলীর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান জোনাব আলী প্রত্যক্ষভাবে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। শুধু তাই নয়; তার বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের অনেক অভিযোগ ছিল।

তার ভাষায়: ‘জোনাব আলী প্রকৃতই মাদক ব্যবসায়ী ছিল।  তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ অাসতো আমার কাছে।’

জোনাব আলী কোনোভাবেই ভাল মানুষ ছিল না
এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি জহুরুল ঝন্টু জোনাব আলী কোনোভাবেই ভালো মানুষ ছিল না উল্লেখ করে বলেন: জোনাব অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। সে গঁজা-মদ বিক্রি করতো।

এলাকায় দুর্বৃত্ত হিসেবে পরিচিত জোনাব আলী বড়দের সম্মান করত না উল্লেখ করে তিনি বলেন: ওর সাথে সবসময়ই অস্ত্র থাকত। একবারে দরিদ্র ছিল ওরা। বাবা জোমাত আলী চাষাবাদ করত। মাদক ব্যবসা করেই কিছুটা স্বচ্ছল হয়েছে তারা।

জোনাব আলীর ১০-১২টা বিয়ে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক বাসিন্দা জানান, জোনাব আলী এ পর্যন্ত প্রায় ১০ থেকে ১২টি বিয়ে করেছে। বর্তমানে তার ৪ থেকে ৫ জন বউ আছে। সে বিয়েই করতো স্ত্রীদের দিয়ে মাদক ব্যবসা করানোর জন্য। তার পেশাই ছিল মাদক বিক্রি করা।

এ জন্যই সে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতো।  মানুষজনকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রাখেতো।

পুলিশের বক্তব্য 
পুলিশ বলছে, গত ২১মে রাত সাড়ে ১২টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় জোনাব আলী। মাদকবিরোধী অভিযানের টহলরত টিম রাতে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর থানার উথলী এলাকায় পৌঁছলে মোল্লাবাড়ীর সন্ন্যাসীপাড়ায় ঢোকার মুখে শোরগোল শুনতে পায়। পরে দেখতে পায় একদল মাদক ব্যবসায়ী ফেন্সিডিল ভাগাভাগি করছে।

‘সেসময় দলটি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলিবর্ষণ করে এসময় পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে জোনাব আলী নিহত হয়।  ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১ বস্তা ফেন্সিডিল, দেশীয় অস্ত্র ও হাসুয়া উদ্ধার করে পুলিশ।’

জীবননগর থানার ওসি মাহমুদুর রহমান বলেন, নিহত জোনাব আলীর বিরুদ্ধে থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে।  যার বেশিরভাগই মাদকের মামলা। এছাড়াও হত্যা মামলাসহ ডাকাতির মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View