অযোধ্যার রাম মন্দির-বাবরি মসজিদ মামলার রায়ে সুন্নি বোর্ডের জন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৫ একর জমি প্রদানের আদেশসহ অযোধ্যার রাম মন্দিরের ২.৭৭ একর জায়গা ট্রাস্টের অধীনে যাবে বলে রায় দিয়েছেন ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট।
এই জমির জন্য ৩ মাসের মধ্যে সরকারকে ট্রাস্ট গঠন করারও আদেশ দিয়েছেন আদালত। শনিবার সকাল ১১টার দিকে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দু জানিয়েছে, এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতের বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী।
আরএসএসের প্রধান মোহন ভগবত রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এই রায়ের পর কারো পরাজয় বা বিজয়ের দিকে নজর দেওয়া উচিত নয়। বরং এমন কিছু ভাবতে হবে যা দেশের ঐক্যকে জোরদার করে।
তিনি আরও বলেন, আরএসএসের অযোধ্যা নিয়ে আন্দোলন ঐতিহাসিক পটভূমি ছিলো। ‘একটি সংস্থা হিসাবে আমরা অন্যায্য আন্দোলনে জড়িত করি না। এখন আমরা আমাদের মানুষ তৈরির মিশনে ফিরে যাব।
অযোধ্যা রায়কে স্বাগতা জানিয়ে জনগণকে নিজেদের মধ্যকার সুসম্পর্ক ও ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি বলেন, আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাই। প্রত্যেকের উচিত দেশের ঐক্য ও সুসম্পর্কের পক্ষে সমর্থন দেওয়া। ইউপিতে সরকার শান্তি ও সুরক্ষা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর।
জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি অযোধ্যা রায়কে স্বাগত জানিয়ে এই বিষয়ে আর কোনো নতুন ইস্যু উঠবে না বলে আশা করেছেন।
তারা বলছে, বিতর্কিত স্থানে রাম মন্দির নির্মাণের পথ পরিস্কার হওয়ার পর আশা করি ধর্মের নামে নতুন কোনো বিতর্ক ছড়াবে না দেশে।
এনসিপির প্রধান মুখপাত্র নবাব মালিক বলেছেন, রায় মেনে নেওয়ার পক্ষে দলের অবস্থান ছিলো।
“প্রথম থেকেই আমাদের অবস্থান ছিলো যে, আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নেব এবং সবারই তা গ্রহণ করা উচিত। আশা করি ধর্মের নামে দেশে আর কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হবে না’।
শনিবার অযোধ্যা রায়কে স্বাগত ও সম্মান জানিয়েছে বিজেপির জাতীয় সহ সভাপতি শিবরাজ সিং চৌহান।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্মান করা এবং স্বাগত জানানো উচিত। আসুন আমরা সবাই কোর্টের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি এবং স্বাগত জানাই।
তিনি এই রায়ে কেউ হারেনি মন্তব্য করে বলেন, আমাদের দেশ সর্বদা বিশ্বকে শান্তির বার্তা দিয়েছে। আমি দেশ ও সকল জনগণকে ঐক্য, ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার জন্য আহ্বান করছি।
অযোধ্যার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় ভারতের আইনশাস্ত্রের একটি মালিকফলক হিসাবে প্রমাণিত হলো।
দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকা একটি বিতর্কিত ইস্যুর অবসান রচনা করায় আদালতের প্রশংসা করেন তিনি।
তিনি জনগণের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানান।
ভারতীয় প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই রায়ের ফলে বিচার বিভাগের ওপর জনগণের আস্থা আবারও ফিরে আসবে বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, এতে জয়-পরাজয় না ভেবে শান্তি ও সম্প্রীতির কথা বলতে হবে।
তবে রায়ে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড সন্তুষ্ট নয়। তারা এই বিষয়ে পযালোচনা করবে বলে জানিয়েছে।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় উত্তর প্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের জাফারিয়াব জিলানী অযোধ্যা মামলার রায় নিয়ে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করে জানান যে, এই রায়ের মধ্যে অনেক ‘স্ববিরোধিতা’ ও ‘তথ্যগত ভুল’ আছে বলে মনে করেন তারা। তবে যেহেতু এটি সুপ্রিমকোর্টের রায়। তাই আমরা শ্রদ্ধা করছি। তবে আমরা এখন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে স্থির করব আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে। সবাই একমত হলে আমরা রিভিউ পিটিশন দাখিল করব।
১৯৮০ সাল থেকেই অযোধ্যা ইস্যুটি রাজনৈতিক বিষয় হয়ে উঠেছে। অযোধ্যার এই স্থানটিকে হিন্দুরা রামের জন্মভূমি হিসেবে পবিত্র মনে করে থাকেন। অন্যদিকে এখানেই ছিলো ১৬ শতকের বাবরি মসজিদ। যেটি ১৯৯২ সালে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় সে সময় ৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।