ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে এ বছর ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস পালিত হলো। আজ যখন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে পুরো দেশ ও জাতি, তখনই ১৯৬৬ সালের ৭ জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ৬ দফার পক্ষে সেই তীব্র গণআন্দোলনকে স্মরণ করছে। যা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। কারো কাছে স্বাধীনতার মাইলফলক। আবার কারো কাছে তা মুক্তির রূপরেখা।
ঐতিহাসিকভাবেই আমরা জানি, বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফার ধারাবাহিক ফল ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনে বিপুল বিজয় আর একাত্তরে স্বাধীন জাতি হিসেবে বাঙালির উত্থান। এমন কি স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির পরিকল্পনার মূল ভিত্তিও ছিল সেই ৬ দফাই।
জাতির পিতা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দিয়ে শুধু এ দেশের মানুষের রাজনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করেই থেমে থাকেননি। পাশাপাশি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। তার একমাত্র লক্ষ্যই ছিল জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি। যাকে তিনি চিহ্নিত করেছিলেন ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ হিসেবে।
আমরা যদি ৬ দফাকে বিশ্লেষণ করি, সেখানেও বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার একটি মানচিত্র খুঁজে পাই। যে মানচিত্র ছিল ভবিষ্যতে একটি স্বাধীন দেশ ও অর্থনৈতিক মুক্তির। বিশেষ করে শাসনতান্ত্রিক কাঠামো, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা এবং আঞ্চলিক বাহিনী গঠন; এই তিনটি দফার মধ্যে বাঙালির রাজনৈতিক স্বাধীনতার বীজ প্রোথিত ছিল। আর মুদ্রানীতি, রাজস্ব ও করনীতি এবং বৈদেশিক বাণিজ্য- এই তিন দফায় ছিল জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির মন্ত্র।
মুক্তির সেই মানচিত্র বাস্তবায়নে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন রাজপথে ছিলেন মুক্তিপাগল বাঙালি। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর মদদে পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা করে মনু মিয়া, সফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জনকে। সেইসব শহিদদের রক্ত বৃথা যায়নি। শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে জাতি।
তবে বঙ্গবন্ধু ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ বা জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি আজও আসেনি। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেইদিনকে স্মরণ করে বলেছেন, ‘ঐতিহাসিক ৭ই জুনের শহিদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করব।’
আমরাও মনে করি, ৬ দফা সেদিনই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে; যেদিন জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে। তবেই হবে বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা।