মহাকাশ প্রযুক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারাকে বদলে দিতে পারে। মাল্টি-ট্রিলিয়ন ডলারের এই অর্থনীতির এক শতাংশের কম ভাগ পেলেও বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের চেয়ে বেশি উপার্জনের পথ উন্মোচিত হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেছেন, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে বাংলাদেশকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার আগে বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা এবং নীতিমালা তৈরিরও পরামর্শ দেন তারা।
কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভ’ অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এই মতামত দেন।
কানাডার স্থানীয় সময় বুধবার রাতে ‘মাল্টি- ট্রিলিয়ন মহাকাশ অর্থনীতি, বাংলাদেশ কতোটা প্রস্তুত’ শীর্ষক এই আলোচনায় বক্তব্য রাখেন, কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবার অধ্যাপক ড. ইকরাম হোসেন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিআইডিএ) সাবেক মহাপরিচালক তৌহিদুর রহমান খান এবং হিউষ্টন ভিত্তিক দ্যা ভার্চুয়াল আমেরিকান কোম্পানিজ এলএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তথ্যপ্রযুক্তিবিদ শামীমুজ্জামান।

তথ্যপ্রযুক্তিবিদ শামীমুজ্জামান বলেন, আমরা এখন আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতের মহাকাশ অর্থনীতির আয়তন যদি ১ ট্রিলিয়ন ডলার হয়, বাংলাদেশ তার মাত্র ১ শতাংশ ভাগ পেলেও ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হবে, যা বর্তমানের প্রবাসী আয়ের পরিমাণের চেয়েও বেশি।
তিনি বলেন, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরে মহাকাশে ৬০ হাজারের বেশি স্যাটেলাইট ছাড়া হবে। তখন এই মহাকাশই হবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সোনা আহরনের ক্ষেত্র। এই স্যাটেলাইটগুলোর সার্ভিসিং দিয়েই একটি দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেয়া যায় বলে তিনি মত দেন।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ শামীমুজ্জামান বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধার কারণে রকেট উৎক্ষেপণ পোর্ট তৈরি করে ভাড়া দেয়ার সম্ভাবনাময় কেন্দ্র হতে পারে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক জোনে রকেট এসেম্বলিং প্ল্যান্টও স্থাপন করা যায়। মহাকাশ ভিত্তিক নতুন ধরনের ইন্টারনেট ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কিং, স্যাটেলাইট নির্ভর ডিভাইস আর অ্যাপস তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশ মহাকাশ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশিদারে পরিণত হতে পারে।
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সাবেক মহাপরিচালক তৌহিদুর রহমান খান বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু কিছু দীর্ঘসূত্রীতা বাদ দিলে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগকারীদের জন্য সোনার খনি। ফলে নতুন কোনো ধরনের সম্ভাবনাময় প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগের আলোচনা উঠলে বিদেশি বা দেশি বিনিয়োগকারী পেতে কোনো সমস্যা হবে না। তিনি সরকারের পাশাপশি বেসরকারিখাতের বিনিয়োগ সক্ষমতা এবং আগ্রহ দুই আছে, তবে সুনির্দিষ্ট একটি নীতিমালা থাকতে হবে।
কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবার অধ্যাপক ড. ইকরাম হোসেন মহাকাশ প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোর পাঠ্যসূচীতে এখনই মহাকাশ প্রযুক্তি বিষয়ক পাঠ্যক্রম যুক্ত করা দরকার।
’নতুনদেশ’-এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, সম্ভাবনাময় মহাকাশ অর্থনীতি নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আরো বেশি আলোচনা হওয়া দরকার, যাতে জনগণ এবং সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন।