বাংলাদেশী গৃহকর্মীর সম্মানে বাংলাদেশে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা দুবাই কেয়ার্স। সুফিয়া আক্তার নামের ওই গৃহকর্মী ইউএই-তে কর্মরত অবস্থায় সমুদ্রে ডুবে যাওয়া থেকে তার তত্ত্বাবধানে থাকা চার শিশুর জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজে মারা যান।
ছয় ছেলেমেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে ছিল সুফিয়া আক্তারের পরিবার। স্বল্প উপার্জনকারী স্বামীও অসুস্থ হয়ে পড়ায় ভীষণ আর্থিক কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছিল। সেই চরম অভাবের মধ্যেই সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় শেলবরষ ইউনিয়নের ভাটাপাড়া গ্রামের সুফিয়া পরিবারকে বাঁচাতে বিদেশ যাওয়ার উদ্যোগ নেন।
ধারকর্জ করে ২০০৯ সালে সুফিয়া গৃহকর্মী হিসেবে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেখানে কাজ পান রাজধানী দুবাইয়ের এক ধনকুবেরের বাড়িতে।
২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর একদিন ধনকুবের গৃহকর্তা ও পরিবারের সদস্যরা সুফিয়াকে নিয়ে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যান। হঠাৎ ঢেউয়ের তোড়ে সুফিয়ার তত্ত্বাবধানে থাকা ছোট ছোট চার শিশু ভেসে যাওয়ার উপক্রম হলে জীবন বাজি রেখে তাদের বাঁচান সুফিয়া।
গৃহকর্তা নিজে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সুফিয়াকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। তবে উদ্ধারকারী দল পৌঁছানোর আগেই সাগরে ডুবে মারা যান সুফিয়া।
সুফিয়ার বীরত্ব ও ত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে ইউএই’র প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রসিদ আল মাকতুমের নির্দেশনায় দুবাই কেয়ারস সুফিয়ার নামে তারই গ্রাম ভাটাপাড়ায় শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়।
এরই ফলাফল হিসেবে বাংলাদেশে ইউএই দূতাবাস, ইউএইতে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং ব্র্যাকের সমর্থনে সেখানে নির্মিত হতে যাচ্ছে ভাটাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। গত মঙ্গলবার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুবাই কেয়ারস-এর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা তারিক আল গার্গ, ইউএই দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি আবদাল্লাহ আল শামসি, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির পরিচালক ড. শফিকুল ইসলাম, সুফিয়া আক্তারের স্বামী খুরশিদ মিয়া ও তার ছয় সন্তানসহ অন্যান্যরা।
আগামী এক বছরের মধ্যেই স্কুল নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।