ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের উপর ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার নিন্দায় ১৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়: বিগত সপ্তাহব্যাপী উন্মত্ত যুদ্ধের নেশায়মত্ত দখলদার ইসরাইলি বাহিনী কর্তৃক ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে নির্বিচারে বিমান হামলা চালিয়ে বোমা বর্ষণ করে ৫৮ জন শিশুসহ, দুই শতাধিক নিরীহ বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিককে হত্যা এবং প্রায় দুই সহস্রাধিক মানুষকে আহত করেছে।
অসংখ্য বাড়িঘর, ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্র এমনকি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের অফিস ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। সংঘাতের সূচনা হয়েছিল আল আকসা মসজিদে ধর্মপ্রাণ নিরস্ত্র নামাজরত মানুষের উপর আক্রমনের মাধ্যমে। জবাবে ফিলিস্তিনের মিলিশিয়া সংগঠন হামাস ইসরাইলে রকেট ও ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তাতে বেশ কয়েকজন ইসরাইলি নাগরিকও নিহত হয়েছে।
ইসরাইল যখন পাশবিক উল্লাসে মেতে ফিলিস্তিনিদের হত্যা এবং তাদের সম্পদ, বাড়িঘর ধংস করছে তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে জোরাো কোন প্রতিবাদ শোনা যাচ্ছে না। যদিও বিশ্বব্যাপী সকল মহাদেশের বড় বড় শহরে হাজার হাজার শান্তিকামী মানুষ ইসরাইলী বর্বরতাকে ধিক্কার ও নিন্দা জানাতে এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী মানুষের সাথে পূর্ণ সংহতি ঘোষণায় করোনা পরিস্থিতির বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে এসেছে। শক্তিধর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বাধুনিক অস্র সব ধরণের সামরিক সহযোগিতাসহ ইসরাইলকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কতিপয় পশ্চিমা রাষ্ট্রের সরকারও একই ভাবে ইসরাইলকে এখনো সমর্থন দিচ্ছে। কিন্তু তাদের ভুলে গেলে চলবেনা ফিলিস্তিনের নিরীহ শান্তি ও স্বাধিনতাকামী জনগনেরও নিজেদের রক্ষা করার পূর্ণ অধিকার আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত। গাজায় ইসরাইলের সহিংসতা বৃদ্ধির ফলে সেখানে মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিক আশ্রয় নিয়েছেন জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে। জাতিসংঘের হিসাবে প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ ইতিমধ্যে ইসরাইলের নৃশংসতা থেকে রক্ষা পেতে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন।

ফিলিস্তিনের সাধারণ নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের উপর চালানো সীমাহীন এই বর্বরতা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় জার্মানীতে ইহুদি সম্প্রদায়ের উপর চালানো নাৎসী বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার কথাই মনে করিয়ে দেয়। তাই আমরা বাংলাদেশের নাগারিক সমাজের পক্ষ থেকে নিরস্র ফিলিস্তিনি নাগরিকদের উপর বিবেকবর্জিত কাপুরুষোচিত এই হামলার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এ হামলা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের মাধ্যমে এই বর্বরোচিত হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় মানবাধিকার লংঘন ও যুদ্বাপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য অবিলম্বে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। এবং এই আগ্রাসন বন্ধ ও মানবাধিকারের উপর সম্মান প্রদর্শণ না করা পর্যন্ত ইসরাইলকে দেয় সামরিক সাহায্যসহ সব ধরণের সহযোগিতা বন্ধ রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দাবি জানাচ্ছি । পাশাপাশি প্যালিস্টাইনি নাগরিকগণ যে মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন তা থেকে উত্তরনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য উদ্বাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, এড. সুলতানা কামাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী, এম হাফিজউদ্দিন খান, তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, বিচারপতি নিজামুল হক, সাবেক বিচারপতি, আপীল বিভাগ, ড. হামিদা হোসেন, মানবাধিকরা কর্মী, নারী নেত্রী খুশী কবির, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুজন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি, এড. রাণা দাশগুপ্ত, প্রসিকিউটর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, এড. সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, এড. জেড আই খান পান্না, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, সদস্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, এড. তবারক হোসেন, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, ড. আবুল বারকাত, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেজবাহ কামাল, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, নির্বাহী পরিচালক, রিব, কাজল দেবনাথ, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, এড. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী বেলা, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অনারারি নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট এবং শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি।