৭৮ ভাগ সরকারি স্কুলে কোচিং বাধ্যতামূলক। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ৬৫ শতাংশ পরীক্ষার্থীকে সরাসরি উত্তর বলে দেন পরিদর্শক ও শিক্ষকরা। এমন তথ্য পাওয়া গেছে এডুকশেন ওয়াচ জরিপে। জরিপে উঠে আসা তথ্য নির্ভেজাল বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।

২০১৪ সালে ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে গিয়ে দেখা যায় মূল ক্লাশ বন্ধ রেখে সেখানে কোচিং চলছে। আর পাবলিক পরীক্ষায় ঢাকার নাম করা একটি স্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর বলে দিতে দেখা যায় একজন শিক্ষককে।
‘প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা কোন পথে?’ এনিয়ে এডুকেশন ওয়াচ-এর জরিপেও পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বলা হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষক ও পরিদর্শকের সহায়তা নিয়ে থাকে। ৭৮ শতাংশ সরকারি স্কুলে কোচিং বাধ্যতামূলক। প্রাথমিক শিক্ষা বিনামূল্যে হলেও শিক্ষার্থীরা সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয় করে থাকে।
গণসাক্ষরতা অভিযান এর নির্বাহী পরিচালনক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, পাবলিক পরীক্ষার বোঝা থেকে, গাইড বই নির্ভরতা, কোচিং নির্ভরতা থেকে রেহাই দেয়ার মতো উপাদান কিন্তু আমরা আমাদের গবেষণায় পেয়েছি। নীতি নির্ধারকদের কাছ থেকে সেই দিক নির্দেশনাটা আমরা পাবো আশা করছি।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, তবে এটাও সত্য কোন প্রক্রিয়া চালু করলে রাতারাতি সেটা বন্ধ করা যায় না। এটা আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে, বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ, বিশিষ্টজন এবং স্থানীয় সমাজ এবং অভিভাবকদের সাথে আলাপ আলোচনা করে একটি সীদ্ধান্ত আমাদের নিতে হবে।
সবকিছু বিবেচনায় প্রাথমিকে সমাপনী পরীক্ষা উঠিয়ে দেওয়ার পক্ষে মন্তব্য করেন বক্তারা। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ডক্টর কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, সেখানে খেলার ছলে, গল্পের ছলে শেখানোর কথা। কিন্তু সেটা না করে এখানে হঠাৎ করে বই পড়তে হবে, পরীক্ষা দিতে হবে এরকম তোড়জোর। সাউথ এশিয়ার কোন দেশে এতগুলো পরীক্ষা নেই।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটা যদি অনিবার্য না হয়, বিশেষজ্ঞরা যদি মনে করেন শিশুদের এটা না হলেও হয় তবে অন্য পদ্ধতিতে আমরা তাদের শিখিয়ে নেবো। শিখন প্রক্রিয়াতে অন্যভাবে কাজ করার দরকার আছে।
টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে সমাধান করার আকাঙ্খার কথা জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোন সরকারের একক বিষয় এটা নয়। আমি মনে করি পুরো সমস্যাটা জাতির সামনে উপস্থাপন হওয়া দরকার। তারপর সমাধানের উদ্যোগ নিবো।
এডুকেশন ওয়াচ রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই মূল বইয়ের চেয়ে গাইড বই বেশি পড়ছে।