বিগত কয়েক মাসে আশা জাগিয়ে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মিশন এক্সট্রিম, লাল মোরগের ঝুঁটি, মৃধা বনাম মৃধা, রাত জাগা ফুল- এর মতো আরো কিছু নতুন সিনেমা মুক্তি পায়। সবগুলো সিনেমাই তুমুল প্রশংসিত হয়েছে। যারাই দেখেছেন, মন্তব্য করেছেন ইতিবাচক, ‘মানসম্মত সিনেমা’ হিসেবেও প্রশংসা করছেন!
তবে হল মালিকদের প্রধান অভিযোগ, ‘একের পর এক ভালো সিনেমা আসলেও প্রেক্ষাগৃহগুলোতে চোখে পড়ার মতো দর্শকের উপস্থিতি নেই।’
এমনও হয়েছে, সিনেমা ভালো হওয়া সত্ত্বেও প্রথম সপ্তাহে ৩-৪টি প্রেক্ষাগৃহ থেকে ‘মৃধা বনাম মৃধা’ নেমে গেছে! দেশের অন্যতম দুটি প্রেক্ষাগৃহ স্টার সিনেপ্লেক্স ও ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ চ্যানেল আই অনলাইনকে জানায়, সিনেমাগুলো ভালো হওয়ার পরেও প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের উপস্থিতি কম। যা অত্যন্ত দুঃখজনক, এমনটা ছিলো অপ্রত্যাশিত।
তাদের কথা, ‘কোনোটির আবার ব্যবসায়িক হিসেব একেবারে নগণ্য। যা ব্যবসায়িক ভাবে লোকসান বলছেন তারা।’
করোনায় গত দুই বছর ব্যবসায়িক বিপর্যয়ের মধ্যে ছিল দেশের অভিজাত সিনে থিয়েটার স্টার সিনেপ্লেক্স। তবে হলিউডের ‘স্পাইডার-ম্যান: নো ওয়ে হোম’ প্রদর্শনের পর সিনেপ্লেক্সের চারটি শাখার সবগুলো থেকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ।
তার কথা, ‘স্পাইডার-ম্যান’ দেখতে উপচে পড়া ভিড় ছিল। তবে বাংলাদেশের সিনেমাগুলোর ক্ষেত্রে উপচে পড়া ভিড় ছিল না।
একের পর এক মানসম্মত এবং নতুন বাংলা সিনেমা মুক্তি পেলেও দর্শক কম কেন- এ বিষয়ে সদোত্তর দেয়া মুশকিল বলেও জানান এসময়।
তিনি বলেন, গত কয়েকমাসে হলিউড বলিউড তামিল ইন্ডাস্ট্রি অনেকটাই চাঙ্গা হলেও আমরা সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। বাংলা সিনেমা দেখতে আরও মানুষ আসবে আশা ছিল। আরও ভালো হতে পারতো। যা এসেছে খুব খারাপ না, তবে অনেক ভালো তাও না। নতুন বছরে আমাদের অনেকগুলো ভালো সিনেমা পাইপলাইনে আছে। প্রত্যাশা রাখি এ বছরটা বাংলা সিনেমার সুফল আনবে।
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা সিনেমা হলেও ‘ব্যবসায়িক মন্দা কাটেনি’ উল্লেখ করে প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ও মধুমিতার কর্ণধার ইফতেখার আহমেদ নওশাদ বলেন, মধুমিতার মতো সিঙ্গেল স্ক্রিনের জন্য কর্মাশিয়াল সিনেমা লাগবে।
তিনি বলেন, পরপর যেকটা সিনেমা চালিয়েছি একটিও ভালো যায়নি। হল মালিক হিসেবে আমার কাছে ‘ভালো যাওয়া’ মানে ব্যবসায়িক দিকটি ইঙ্গিত করছি। ‘মিশন এক্সট্রিম’ দেখতে বেশকিছু দর্শক এসেছিল।প্রত্যাশা পূরণ না হলেও এটা মানিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু ‘মৃধা বনাম মৃধা’, ‘রাত জাগা ফুল’ গণ হারে দর্শক দেখেনি। আগামী সপ্তাহে ‘শান’ আসবে। এই সিনেমা কমার্শিয়াল ধাঁচের, নিশ্চিত এটি মানুষ দেখবে। তবে হলে হলে আগের মতো ভিড় লম্বা লাইন ফেরাতে হলে শাকিব খানের সিনেমা মাস্ট লাগবে।
ইফতেখার আহমেদ নওশাদ বলেন, গণমানুষ তার (শাকিব খান) সিনেমা যে পরিমাণ দেখে অন্যদের সিনেমা সেভাবে দেখে না। দেশে মধুমিতার মতো সিঙ্গেল স্ক্রিন বাঁচাতে শাকিব ছাড়া উপায় নেই! তার পুরাতন সিনেমা চালালেও প্রচুর দর্শক আসে। হল মালিকদের কথা ভেবে এবং দর্শকের আগ্রহ বিবেচনায় শাকিবের সিনেমাগুলোর প্রযোজকদের বলতে চাই, তার সিনেমা মুক্তি দেয়া উচিত। এবং এরকম কমার্শিয়াল সিনেমাগুলো নিয়মিত হলে মুক্তির ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে।
গাজীপুরের বর্ষা সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক আবদুর রহমান মনে করেন, গত কয়েকমাসে যেসব সিনেমা মুক্তি পেয়েছে এগুলো ‘ঠাণ্ডা মেজাজের’। তিনি তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, ঢাকার বাইরে যারা নিয়মিত সিনেমা দেখে তারা অ্যাকশন রোম্যান্টিক বাণিজ্যিক সিনেমা পছন্দ করে। শ্রমজীবী যারা একদিন সিনেমা দেখতে আসে তারা ‘ঠাণ্ডা মেজাজের ছবি’ চায় না।
আবদুর রহমান বলেন, ‘নাচ গান ফাইটিংয়ে ভরপুর সিনেমা এলে মানুষ হুমড়ি খেয়ে আসে। এরমধ্যে নতুন সিনেমা চালিয়েও লোকসান গুনেছি। ‘মিশন এক্সট্রিম’ অ্যাকশন সিনেমা হলেও ইংরেজি নামের কারণে খুব একটা দর্শখ পাইনি। পরে শাকিবের ‘মনের ঘরে বসত করে’, ‘ক্যাপ্টেন খান’র মতো পুরাতন সিনেমা চালিয়েছি।