বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিদেশিরা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগে আগ্রহী বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
সোমবার আগারগাঁয়ে বিএসইসির সম্মেলন কক্ষে দুবাইয়ে রোড শো পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা সরকারের বড় বড় প্রকল্পের পাশাপাশি পাওয়ার প্লান্ট ও ইনফ্রাস্ট্রাচারেও আসতে আগ্রহী। তারা স্বল্প মেয়াদে নয়, দীর্ঘ মেয়াদে একদম কম সুদে আসতে চায়।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত বলেন, দুবাইয়ের রোড শোতে আমাদের দেশের অর্থনীতির অবস্থা তুলে ধরেছি। সবকিছু জানার পর বিদেশিরা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন প্রত্যেক দিন মেইল আসে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে চায়।

তিনি বলেন, আমরা যখন এই প্রেজেন্টেশনটা করলাম, প্রেজেন্টেশনের পরে সাত ট্রিলিয়ন, তিন ট্রিলিয়ন ডলার পরিমাণ বিনিয়োগের সক্ষমতার ইনভেস্টরদের সঙ্গে আলাদা আলাদা মিটিং হয়েছে। কোথায় ইনভেস্ট করা যায়-এমন ভাল জায়গা খুঁজছে তারা। তাদের দেশে বিনিয়োগ করে তারা তেমন কোনো রিটার্ন পাচ্ছে না। এই রেটিংয়ে যেসব দেশ রয়েছে, সেসব দেশেই তারা বিনিয়োগ করবে।
বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আগামী বাজেটে (২০২১-২২) শেয়ারবাজারের জন্য ৮টি প্রস্তাবনা রাখা হবে। এরমধ্যে উল্লেখ্য বিষয়গুলো হচ্ছে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে কর্পোরেট কর’য়ে অতালিকাভুক্তি কোম্পানির সাথে সর্বনিম্ন ১৫% ব্যবধান। মার্জিন ঋণের সুদহার ১২% থেকে আরো কমিয়ে আনা। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কর কমানো। দ্বৈত কর প্রত্যাহারের বিষয়। আইসিবিকে পূনর্গঠনের জন্য ফান্ডসহ আরো কিছু ছোটখাটো বিষয় মিলিয়ে ৮টি প্রস্তাব থাকবে।
গত বাজেটের (২০২০-২১) প্রস্তাব হয়ে যাওয়ার পরে বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তারপরও আমরা খুব জোর দিয়ে দুটি বিষয়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। এবার বাজেটের আগে প্রস্তাবের অনেক সময় পেয়েছি। আশা করছি প্রস্তাবনার অধিকাংশ বিষয়ে পাস হবে। ৮টি বিষয়ের মধ্যে থেকে যদি ৫টি বিষয়েও অনুমোদন হয়, তবে আমরা মনে করবো অগ্রসর হয়েছি।
শিবলী বলেন, বাংলাদেশের যে ভবিষ্যৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি ও দেশের ক্যাপিটাল মার্কেটে রোল প্লে করা উচিৎ বলে মনে করি। ব্যাংকিং খাত থেকে প্রচুর ঋণ নিয়ে মানুষ বড় বড় প্রকল্পে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করছে। সামনের দিনগুলোতে আমাদের বিরাট ভূমিকা রাখতে হবে।
বাংলাদেশের প্রতি বিদেশীদের একটা নেগেটিভ ভাবমূর্তি ছিল উল্লেখ করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আগে তারা আমাদের নিয়ে নেগেটিভ ভাবতো। কিন্তু চেষ্টা করছি দেশের সঠিক অবস্থান তাদের কাছে তুলে ধরতে। সেজন্যই দুবাই গিয়েছিলাম। তারা আমাদের তথ্য দেখে অবাক হয়েছে। জনতে চেয়েছে আমার ঠিক বলেছি কি না, আমরা বলেছি এগুলো সব সঠিক। কোথাও তোমাদের সন্দেহ থাকলে গুগল সার্চ করে দেখতে পারো। তখন তারা বিশ্বাস করা শুরু করল।
তিনি বলেন, বিভিন্ন ফাইন্যান্সিয়াল হাব দুবাই, লন্ডন, নিউইয়র্ক, হংকং ও সিঙ্গাপুরের মতো জায়গায় যদি বাংলাদেশের সঠিক তথ্য মানুষের কাছে, বিনিয়োগকারীর কাছে, বিদেশের সংবাদপত্র বা বিদেশের ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরতে পারি তাহলে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে নেতিবাচক মনোভাব ছিল সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। আমাদেরকে মানুষ সম্মানের চোখে দেখবে।
তিনি বলেন, তাদেরকে ব্যাংক, বীমা ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে বিনিয়োগের কথা বলেছি। কিন্তু সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন করতে বলিনি।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এফডিআরের চেয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মুনাফা বেশি, এটা আগেও বলেছি, এখনও বলছি। তবে এর মানে এই না যে, আপনি সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে শেয়ার কেনেন।
ব্যাংক খাতে মন্দঋণ কমেছে, এবার ভালো মুনাফা দেবে প্রত্যাশা জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাংকের মুনাফা দেওয়ার সময় হয়েছে। তাদের হাতে ভালো তারল্য আছে। তারাও ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে।
অনুষ্ঠানে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলমসহ রোড শো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন।