নারী কৃষি শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার
কৃষিতে মোট শ্রমশক্তির ৬৯ শতাংশ নারী কৃষক বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। মূলত: রাষ্ট্রীয় নীতিতে স্বীকৃতি ও মূল্যায়নের অভাব এবং সামাজিক বৈষম্যের কারণে দেশের নারী কৃষকদের এমন অবস্থা।
কৃষক, উন্নয়নকর্মী, রাজনীতিবিদ ও গবেষকরা বলছেন, নারী কৃষকদের বাদ দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা কোনভাবেই দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব হবে না। ঘুচবে না বৈষম্য।
মঙ্গলবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তে ‘কৃষিতে নারী : অবদান ও অধিকার’ বিষয়ে ‘দ্বিতীয় নারী কৃষক সম্মেলন’ এমন তথ্য ও মন্তব্য উঠে আসে। ঢাকাসহ দেশের ৪০ জেলা থেকে ৫’শরও বেশি কৃষক ও ১০০ সংগঠন নিয়ে দিনব্যাপি এই সম্মেলনের আয়োজন করে একশনএইড বাংলাদেশ।
জাতীয় কৃষি নীতি ১৯৯৯, জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা ২০০১, নতুন কৃষি সম্প্রসারণ নীতিমালা-১৯৯৬ এবং জাতীয় কৃষি নীতিমালা-২০১০ (খসড়া)তে নারী কৃষকের সুনির্দিষ্ট সংখা, ব্যাখ্যা ও সেবার পরিধি নির্ধারিত নাই। নতুন কৃষি সম্প্রসারণ নীতিমালায় ক্ষুদ্র, মাঝারি কৃষক, বর্গচাষী, ভূমিহীন কৃষক এবং অন্যান্য শ্রমশক্তি যারা মৎস্য, বন ও গবাদি পশু খাতে সংযুক্ত তাদের ভূমিকা বিশেষায়িত হয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে পুরুষ কৃষকের জন্য সুনির্দিষ্ট ‘ডাটাবেজ’ তৈরি থাকলেও নারী কৃষকের জন্য সেটা নেই। ফলে যথাযথভাবে ঋণ ও সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়।

পটুয়াখালী থেকে কৃষক মরজিনা বেগম বলেন, ‘আমরা পণ্য উৎপাদন করলেও বাজারজাতকরণ করতে পানি না। পুরুষ কৃষকরা যাচাই বাছাই করে বিক্রি করতে পারে। কিন্তু আমরা সেটা করতে পারি না। বাজার কমিটিতে নারী নাই। তাই আমারা পণ্য সঠিকভাবে বিক্রি করতে পরি না। যে করণে আমরা নারী কৃষিকরা অনেক পিছিয়ে’।
এ বিষয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতাটাই হলো মূল সমস্যা। আমরা সঠিক সমস্যাটা চিহ্নিত করতে পারলে সমাধানের পথ নিয়ে চিন্তা করতে পারবো। পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো হলো বাস্তবতা। এর মধ্যেই একে অপরের প্রতি সম্মানবোধ, যে যেই দায়িত্ব পালন করছে সেই গুরুত্ব ও মূল্যায়ন করতে হবে’।
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘কৃষক হিসেবে নারীরা আজও স্বীকৃত নয়। রাষ্ট্রীয় নানা উদ্যোগ-আয়োজনে এখনো নারী কৃষকদের যথাযথ মূল্যায়ন নেই। সরকার বা নীতি-নির্ধারকরা জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করলেও সেখানে নারী কৃষকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ উপেক্ষিত থাকছে। যার ফলে স্বীকৃতি ও সাম্যের প্রশ্নে বিভিন্ন স্তরে নারী কৃষকের প্রতি বৈষম্য দৃশ্যমান’।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি খাদ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘নারীবান্ধব বাজার সৃষ্টি করা গেলে খুবই ভাল হতো। এক্ষেত্রে গ্রামের মেয়েরা বেশি নিগৃহীত হয়। পুরুষ সমাজ পেশী শক্তির সুযোগ নিয়েছে। আর্থিক দুর্বলতার কারণে কিছু নারী পিছিয়ে আছে। গরীব মানুষদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। চেতনা জাগ্রত না হলে সমাজ পরিবর্তন হবে না। আমরা প্রচার-প্রসার নিয়ে ব্যস্ত। মূল কাজ আমরা করি না। সরকারের একার পক্ষে পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না। আমি আপনাদের দাবি সরকারের কাছে পৌঁছে দিব। নারীদেরও চেতনার পরিবর্তন আনতে হবে। সব সমস্যা একবারে সমাধান সম্ভব নয় তাই ধৈয্য ধরতে হবে’।
নারী কৃষকদের পরিস্থিতি উন্নতিতে কৃষিতে কর্মরত নারীদের কৃষক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত করণ, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মৌলিক অধিকার হিসেবে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন সহ বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে।