চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

ধৈর্য রপ্ত করুক দল, অস্থিরতা কাটুক বাংলাদেশে

টিলা, চা বাগান আর ছড়িয়ে থাকা সবুজের সমারোহের মাঝে দাঁড়িয়ে অনিন্দ্যসুন্দর এক স্টেডিয়াম। ভেতরে নান্দনিক কাঠামো, বাইরে ছায়াশীতল প্রাকৃতিক পরিবেশ। মুগ্ধ করবে যে কাউকেই। সঙ্গে ক্রিকেট বিনোদনের কাছে ছুটে আসা মানুষদের যদি মেলে উৎসবে মাতার উপলক্ষ, মনে অনাবিল প্রশান্তি ভর করার কথা। কিন্তু মঙ্গলবারের দিনটি কেবল নয়নাভিরাম সিলেট স্টেডিয়ামে আসা দর্শকদের জন্যই বিষাদের হল না, বিমর্ষ করে গেল বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী সকল দর্শককেই।

গত শনিবার দেশের অষ্টম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। শুরুর মঞ্চে প্রতিপক্ষ কদিন আগেই ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ হওয়া জিম্বাবুয়ে। আত্মবিশ্বাসী টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ সফরকারীদের হারিয়ে শুরুটা স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন। অথচ খেলা সাড়ে তিন দিনেই গুটিয়ে যাওয়ার পর তাকে বলতে হচ্ছে- আমরা দুঃখিত! আমাদের এর থেকে উত্তরণের একটা পথ খুঁজে পেতে হবে।

Bkash July

কী পথ খুঁজে পেতে চান মাহমুদউল্লাহ? নতুন কিছু নয়, চেনা পথটাই যে চিনতে পারছে না বাংলাদেশ। যে জিম্বাবুয়ে গত পাঁচ বছর টেস্ট জেতেনি, যে জিম্বাবুয়ে গত ১৭ বছর দেশের বাইরে টেস্ট জেতেনি, যে জিম্বাবুয়ে গত পাঁচটি সিরিজেই বাংলাদেশের বিপক্ষে জেতেনি; সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাড়ে তিন দিনেই টেস্ট খুঁইয়ে বসেছে মাহমুদউল্লাহর দল। একটা টেস্ট বাংলাদেশ হারতেই পারে, প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হতেই পারে, কিন্তু প্রশ্নটা যখন পথ খুঁজে পাওয়ার তখন অবধারিতভাবেই সামনে চলে আসে সাদা পোশাকে টাইগারদের পথ হারিয়ে অনেকটা বিপথ হওয়া প্রসঙ্গ।

সিলেটের অভিষেক মঞ্চে দারুণ একটি আমেজ নিয়ে টেস্ট শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ঘণ্টা বাজিয়ে টেস্ট শুরু! লর্ডস-ইডেন গার্ডেন্সের মতো ম্যাচ শুরুর আগে ঘণ্টা বাজানোর ঐতিহ্য এসে গেছে বাংলাদেশেও। সেটি বাজানোর প্রথম সাক্ষী টেস্টে উচ্চকিত ঘণ্টাতরঙ্গে অধৈর্যের কথা জানান দিয়ে গেছে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং। নিকট অতীতে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে তিন-সাড়ে তিন দিনে হারিয়ে টেস্ট জেতা বাংলাদেশকে তিক্ত অভিজ্ঞতা ফিরিয়ে দিয়েছে জিম্বাবুয়ে, যার বেশিভাগ দায়ই ব্যাটসম্যানদের মনোসংযোগ ধরে রাখতে না পারার ব্যর্থতায়।

Reneta June

টেস্ট ক্রিকেটের অন্যতম শর্ত মাটি কামড়ে পড়ে থাকা। কিন্তু ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে গত আট ইনিংসে দুইশর ঘরই ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ, যার অর্ধেক ঘরের মাটিতেই। আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৪৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার মতো ইনিংসও। ঊর্ধ্বক্রমে চলা টাইগার ক্রিকেটের পথটা কতটা বিপথ হয়ে গেছে ছোট্ট এই পরিসংখ্যানই স্পষ্ট করে দেয়। তাইতো টেস্টে দেড়যুগের পথ পেরিয়েও পথ খুঁজতে হয় মাহমুদউল্লাহকে।

সাকিব-তামিমের অনুপস্থিতিতে শুরুতে প্রশ্ন থাকল স্কোয়াড নিয়ে, একাদশ নির্বাচনের পর সেটি গেল বিতর্কের মাঝে, ম্যাচ শেষে তো কাঠগড়াতেই। এতটা দায় নির্বাচক-ম্যানেজমেন্টের ওপর এসে পড়ত না যদি ব্যাটসম্যানরা টেস্টের মেজাজ সামান্যতম হলেও দেখাতে পারতেন। দেড়শর আগেপিছে অলআউট হওয়া দুই ইনিংসে কোনো ফিফটি নেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের, ধৈর্যের পরীক্ষায় সম্মিলিত পতনের এ যেন এক গ্লানিময় প্রদর্শন! বাজে ব্যাটিংয়ের মূল্য দিতে হল তাই বিব্রতকর হারে।

সর্বমোট ২২১ টেস্টের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড়দের স্বাগতিক একাদশ ছিল সিলেট টেস্টে, কিন্তু সেটি টেস্ট ক্রিকেটের মূলমন্ত্র রপ্ত করাতে পারেনি দলকে! ক্রিজ ছেড়ে পালানোর যে অস্থিরতা ব্যাটসম্যানদের মাঝে পরিলক্ষিত, সেটি যেন আমাদের জাতিগত অস্থিরতার কথাই মনে করিয়ে দেয়। কি সামাজিক, কি রাজনৈতিক, ধৈর্য আর স্থিতিশীলতা চর্চা দিনকে দিন দূরবর্তী হচ্ছে আমাদের চলন-বলন-কথন এমনকি মগজ থেকেই। নিজেদের খোঁড়া গর্তে হোঁচট খেয়ে পড়ার কী সীমাহীন তাড়াহুড়া আমাদের। ব্যাটসম্যানদের উইকেটে তাড়াহুড়ায়ও যেন সেটির প্রভাব!

অবশ্য ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাসও বাঙালির দীর্ঘ। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে পূর্ণ বিপরীতক্রিয়ায় ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। কখনও কখনও খুব দেরিও হয়ে যায় বৈকি। ততক্ষণে হারিয়ে বসা আর আফসোসের তালিকাটা ভারি হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সেই দেরিটা না করুক। সমস্যাটা চিহ্নিত করে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেদের পথ খুঁজে পাক ঢাকা টেস্টেই। মাহমুদউল্লাহ সেই প্রত্যয়টা জানিয়েছেন। প্রত্যায়টা থাক সকল বাংলাদেশির মাঝেই।

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View