মুকিত মজুমদার বাবু নানা পরিচয়ের মানুষ। একজন সফল উদ্যোক্তা। সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিঁড়তে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। এরপর দেশ গঠনের কাজে সম্পৃক্ত হয়েছেন এ মুক্তিযোদ্ধা। তার যুদ্ধ আজও চলমান, তবে অন্যক্ষেত্রে। এ যুদ্ধ সবুজে সবুজে দেশটিকে ভরিয়ে তুলতে, সুন্দর প্রকৃতিতে সুস্থ জীবন গড়তে।
নতুন এ যুদ্ধে তিনি ‘প্রকৃতিবন্ধু’ আখ্যা পেয়েছেন। সকলের কাছে তিনি আজ পরিবেশ-প্রকৃতির এক বড় বন্ধু। মুকিত মজুমদার বাবু যে ‘প্রকৃতিবন্ধু’ আখ্যা পেয়েছেন, তার মধ্যে অত্যুক্তি নেই। তার পরিকল্পনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনায় এক দশকের বেশি সময় ধরে ‘প্রকৃতি ও জীবন’ অনুষ্ঠানটি যেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, তার নজির বাংলাদেশের টেলিভিশন জগতে নেই।
প্রকৃতিপ্রিয় শিক্ষিত বাঙালিরা আগে থেকেই ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক বা ডিসকভারি দেখে থাকেন, অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ে সম্প্রচারিত ‘প্রকৃতি ও জীবন’ অনুষ্ঠানটি বাংলাভাষী সাধারণ দর্শকের জন্য নিঃসন্দেহে বড় এক উপহার। ‘প্রকৃতি ও জীবন’ অনুষ্ঠান কেবলই বাংলাদেশের প্রকৃতি নিয়ে, বাংলাদেশি দর্শকের জন্য, বাংলাদেশের উপযোগী করে নির্মিত ও সম্প্রচারিত।
এক দশকের বেশি সময় ধরে ‘প্রকৃতি ও জীবন’ নিয়ে তার এ পথচলায় এমন অনুষ্ঠান কেবল দর্শকের জন্য ‘উপহার’ নয়; এ ধরনের উদ্যোগ মানুষের মধ্যে প্রকৃতিপ্রেম জাগিয়ে তুলতে, প্রকৃতি রক্ষার শপথ শাণিত করতেও সহায়ক।
মুকিত মজুমদার বাবু একটি দৈনিকে সম্পাদনা করছেন ‘প্রকৃতি ও জীবন’ নামে পাক্ষিক আয়োজন। প্রকাশ করেছেন প্রকৃতিবিষয়ক পূর্ণাঙ্গ ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন ‘প্রকৃতিবার্তা’। বর্তমানে তিনি এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি। এর বাইরেও বিভিন্ন দৈনিকে ও সাময়িকীতে প্রকৃতি বিষয়ে লেখালেখি করছেন তিনি।
প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা ও চেতনার বিষয়টি প্রাধান্য পায় তার লেখনীতে। প্রতিবছর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে তার প্রকৃতিবিষয়ক গ্রন্থ। উল্লেখখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘আমার অনেক ঋণ আছে’, ‘আমার দেশ আমার প্রকৃতি’, ‘আমার রূপসী বাংলা’, ‘সবুজ আমার ভালোবাসা’, ‘স্বপ্নের প্রকৃতি’।
তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে আয়োজন করছেন ব্যতিক্রমী প্রকৃতিমেলা। এর পাশাপাশি ‘প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন’ থেকে নির্মাণ করছেন বিভিন্ন টক শো, ডকুমেন্টারি ও টেলিফিল্ম। প্রকৃতি সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য প্রতিবছর ফাউন্ডেশন থেকে দেওয়া হচ্ছে ‘প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক’।
প্রকৃতির সঙ্গে রয়েছে মুকিত মজুমদার বাবুর নিবিড় সখ্য। হৃদয় দিয়ে তিনি অনুভব করেন প্রকৃতির আনন্দ-উচ্ছ্বাস, দুঃখ-বেদনা। অন্তর দিয়ে অনুধাবন করেন প্রকৃতির ভাষা। জন্মভূমির প্রতি আজন্ম ঋণই তাকে করে তুলেছে প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধ।
নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি দূষণমুক্ত সুস্থ-সুন্দর প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। স্বপ্ন বাস্তবায়নে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিঘাত মোকাবিলা ও অভিযোজন সম্পর্কিত গণসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ- চ্যানেল আইতে ধারাবাহিক প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘প্রকৃতি ও জীবন’।
পরিবেশবিষয়ক বহুমাত্রিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ‘ফোবানা অ্যাওয়ার্ড-২০১৬’, জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৫’, ‘ঢাকা আহছানিয়া মিশন চাঁদ সুলতানা পুরস্কার-২০১৫’, ‘বিজনেস এক্সিলেন্সি অ্যাওয়ার্ড সিঙ্গাপুর-২০১৪’, ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০১৩’, ‘এইচএসবিসি-দি ডেইলি স্টার ক্লাইমেট অ্যাওয়ার্ড-২০১২’সহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান ‘প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন’।
প্রকৃতির জন্য তার নিরলস কর্মতৎপরতা অব্যাহত থাকুক অনাগত দিনগুলোতেও। চিরসবুজ মানুষটিকে সবুজ প্রকৃতির পক্ষে জন্মদিনে সবুজ শুভেচ্ছা।