চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

তালেবানকে অস্ত্র: নতুন স্নায়ুযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া

দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ; আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল করতে অস্ত্র দিয়ে তালেবান জঙ্গিদের সহায়তা করছে রাশিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার দাবি, তালেবান জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহ করছে মস্কো।

তবে দেশটির ঐতিহাসিক শত্রু  রাশিয়া ও তালেবান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ কতটুকু সত্য?

তালেবান জঙ্গিদের নিয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী দুই দেশের এমন অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা একে ‘‘নতুন স্নায়ুযুদ্ধ’’ হিসেবে দেখছে।

মার্চের শেষ দিকে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল জন নিকোলসন অভিযোগ করেন, তাজিক সীমান্ত দিয়ে রাশিয়ার অস্ত্র অবৈধভাবে তালেবানদের কাছে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আফগানিস্তানে আইএস জঙ্গিদের সংখ্যা অতিরঞ্জিত করে রাশিয়া সেখানে তালেবানদের কার্যক্রমকে বৈধতা দিচ্ছে এবং তালেবানদের সমর্থনে কিছু রসদ জোগাচ্ছে। আফগান নেতাদের দেয়া অস্ত্র দেখে আমরা প্রমান পেয়েছি যে এগুলো রাশিয়া তালেবানকে দিয়েছে।

আফগানিস্তানের কিছু পুলিশ ও সামরিক মুখপাত্র রাশিয়ার হালকা থেকে ভারি অনেক ধরনের অস্ত্রের কথা বিবিসিকে বলেছেন।

তবে এই অভিযোগের পক্ষে ও বিপক্ষে নানা ধরনের মত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, মস্কো এক বছরের বেশি সময় ধরে তালেবানদের অস্ত্র দিয়ে আসছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জেনারেল নিকোলসন তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এবং এই গোষ্ঠীকে বৈধতা দেয়ায় রাশিয়া ও ইরানের করা সমালোচনা করেন।

তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ-পদস্থ একাধিক কর্মকর্তা বিশেষ করে সামরিক কর্মকর্তা একই ধরনের অভিযোগ করে আসছেন। রাশিয়া তালেবানদের অস্ত্র সরবরাহ করছে বলেও তাদের কেউ কেউ বলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর বেশকিছু কর্মকর্তা এই অভিযোগের বিষয়ে বেশি সতর্ক। গত মে মাসের সিনেটের এক শুনানির উদাহরণ টেনে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক লে. জেনারেল ভিনসেন্ট আর স্টেয়ার্ট বলেন, অস্ত্র বা অর্থ পাচারের কোনো বাস্তব প্রমান আমি দেখিনি।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি জেমস মাত্তিস গত অক্টোবরে তাদের অস্ত্র সরবরাহ কমিটিকে বলেছেন, তিনি রাশিয়ার তালেবান সমর্থনের মাত্রার আরো প্রমাণ দেখতে চান। এখন পর্যন্ত যে প্রমান পাওয়া গেছে তা কোনো অর্থ বহন করে না বলে যোগ করেন তিনি।

ন্যাটো সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টোলটেনবার্গ গত জুলাই বলেন, আমরা কোন প্রমাণ দেখিনি, এ ধরনের সহায়তার কোন নিশ্চিত তথ্যও নেই।

এছাড়া রাশিয়ার অস্ত্র পাচারে নিজেদের সীমান্ত ব্যবহারের অভিযোগও অস্বীকার করেছে তাজিকিস্তান। তারা যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগকে ‘‘ভিত্তিহীন’’ বলে মন্তব্য করেছে।

আফগান কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছে। কয়েকটি প্রদেশের মুখপাত্র  তালেবানকে মস্কোর সামরিক শাসনের অভিযোগ করেছেন। কিন্তু আফগানিস্তানের সিইও’র প্রধান মুখপাত্র গত মে মাসে বলেন, এ ধরনের কোন ঘটনার প্রমান নেই।

গত অক্টোবর প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি রাশিয়ার অস্ত্র নেয়ায় জনসমুক্ষে তালেবানের সমালোচনা করেন। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রীও গত কয়েক মাসের এ ধরনের প্রতিবেদনকে ‘‘গুজব’’ এবং তাদের কাছে কোন প্রমান নেই বলে জানান।

এদিকে রাশিয়া ও তালেবানও মার্কিন জেনারেলের এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, জেরনারেল নিকোলসনের কাছে এর কোন প্রমান নেই।

কাবুলে রাশিয়ার দুতাবাস এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণারয় এই অভিযোগকে ‘‘ভিত্তিহীন’’ ও ‘‘আজগুবি গল্প’’ বলে সমালোচনা করেছে। তালেবানের এক মুখপাত্রও বলেছে, তারা রামিয়ার কাছ থেকে কোন অস্ত্র গ্রহণ করেনি।

মস্কো বার বার অভিযোগ করে আসছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নিজেদের ব্যর্থতা আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে খারাপ করা ঢাকতে রাশিয়াকে অভিযোগ দিচ্ছে।

উপরন্তু রাশিয়ার মুখপাত্র ও রাজনীতিবিদরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো আফগানিস্তানে আইএসকে সহায়তা করছে।

তবে রাশিয়া তালেবানকে সামরিক সহায়তার কথা অস্বীকার করলেও তাদের সাথে ‘যোগাযোগের’ কথা স্বীকার করেছে। তালেবানের কয়েকটি সূত্র মতে, ২০০১ সালে যুক্তরাস্ট্রের কারণে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রায় এক দশক আগে তালেবান ও মস্কোর মধ্যে একটি যোগাযোগ মাধ্যম স্থাপিত হয়েছিল।

গত তিন বছর ধরে তাদের সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি ঘটেছে, বিশেষ করে ২০১৫ সালে আফগানিস্তানে কথিত ‘আইএস অঞ্চল’(আইএস খোরাসান) প্রতিষ্ঠার পর থেকে।

তালেবানের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, তাদের প্রতিনিধিরা রাশিয়ার মুখপাত্রদের সঙ্গে রাশিয়ায় ‘অন্যান্য দেশে’ অনেকবার দেখা করেছেন। 

এই নতুন সম্পর্কের সূত্র ধরেই তালেবানরা রাশিয়ার কাছে থেকে অস্ত্র প্রত্যাশা করে থাকতে পারে, যেন তারা এই অস্ত্র দিয়ে মার্কিন সৈন্যদের সঙ্গে ‘নৈতিক যুদ্ধে’ জয়ী হতে পারে।

তবে তালেবানদের প্রতি রাশিয়ার এই দ্রত মোর নেয়াকে অপ্রত্যাশিত মনে হয়েছে অনেকের। একসময় তালেবানকে প্রতিহত করতে রাশিয়া যেখানে অর্থ সহায়তা দিত, সেখানে সেই তালেবানের সঙ্গেই এখন তাদের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্ক দৃশ্যমান হচ্ছে।

অনেকে বলছেন, মূলত আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য উপস্থিতিই রাশিয়ার এই নতুন কূটনীতি। বিশেষ করে ৯/১১ পর আফগানিস্তানে মার্কিন হস্তক্ষেপকে রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করার একটি বড় সুযোগ হিসেবে নিয়েছে তালেবান।