Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

তাবলীগ জামায়াতের বিরোধে নেপথ্যে কারা?

শান্তিপ্রিয় ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত তাবলীগ জামায়াতের দুই অংশ সম্প্রতি প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়েছে। ভারতের মাওলানা সা’দ কান্ধলভির বিশ্ব ইজতেমায় যোগদানকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া এ বিরোধে একটি পক্ষ বিমানবন্দর এলাকায় রাস্তা অবরোধের মত ঘটনাও ঘটেছে।

কিন্তু কেনো এই বিরোধ? এ প্রশ্নের জবাবে খুঁজতে গিয়ে হেফাজতে ইসলামের ইন্ধনের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞ এবং তাবলীগ জামায়াত সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: মাওলানা সা’দের কিছু বক্তব্য নিয়ে আমাদেরও আপত্তি আছে। তাই বলে এমনতো হওয়ার কথা নয়; যে তার আসাকে কেন্দ্র করে আমরা বিরোধে জড়াবো এবং জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করবো।

‘‘অনেকে আছেন তাবলীগ জামায়াতের ব্যাপারে কিছু জানেন না। তাছাড়া ভিন্নধর্মী লোকজনও রয়েছেন। কিন্তু আমাদের ভেতরকার কোনো বিরোধের কারণে এসব মানুষকে কষ্ট দেওয়ার অধিকার কারো নেই।’’

নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে এবং এর পেছনে কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলামের ইন্ধন থাকতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি।

‘‘একটা গ্রুপের ইন্ধনতো অবশ্যই আছে। হেফাজতে ইসলামের ইন্ধনও থাকতে পারে। তবে আমি যেহেতু এ ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ নিতে পারিনি তাই নির্দিষ্টভাবে বলতে পারছি না। তবে যেহেতু অগ্রভাগে হেফাজতের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে তাই তাদের ইন্ধন থাকতে পারে।’’

ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন: মাওলানা সাদ’র কোনো বক্তব্য নিয়ে যদি দ্বিমত থেকেই থাকে; তবে তার সঙ্গে তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিতে খোলামেলা আলোচনা করা যেত। তাকে তার বক্তব্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা যেত, ব্যাখ্যা চাওয়া যেত। তাকে এভাবে ফেরত না পাঠিয়ে আলোচনায় বসলে বরং আরও সুন্দর ও সুষ্ঠু সমাধান হতে পারতো।

বাংলাদেশের মূলধারার তাবলীগ জামায়াতের একজন মুরব্বী এবং সাথী গিয়াস উদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আমাদের দুটি অংশের মধ্যে এমন প্রকাশ্য বিরোধ আগে কখনও দেখা যায়নি। এর পেছনে বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর ইন্ধন থাকতে পারে। হেফাজতে ইসলামের ইন্ধনও থাকতে পারে।

তবে ভবিষ্যতে তাবলীগ জামায়াতের মধ্যে আর এ ধরনের বিরোধ দেখা যাবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তাবলীগ জামাতের অন্যতম শীর্ষ মুরুব্বি, দিল্লি নিজামুদ্দিনের জিম্মাদার মাওলানা সা’দের কিছু বক্তব্য ও একক নেতৃত্বের প্রশ্নে বেশ কয়েক বছর ধরে আলেম-উলামা ও তাবলীগের মুরুব্বিদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সা’দের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, আর নিজামুদ্দিন ছেড়ে চলে যান মাওলানা ইবরাহিম দেওলাসহ বেশ কয়েকজন মুরুব্বি। বিশ্বব্যাপী তাবলীগের বিভিন্ন মারকাজগুলোও দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে।

এই দ্বিধা-বিভক্তির মধ্যে সম্প্রতি কানাডা, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া তাবলীগের শুরা থেকে বাংলাদেশ শুরা ও সরকারকে চিঠি দিয়ে মাওলানা সা’দকেই ইজতেমার নেতৃত্বে রাখার দাবি জানায়। কিন্তু বিরোধীরা কোনোভাবেই মাওলানা সা’দকে মেনে না নেওয়ার কথা জানিয়ে দেয়।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিমানবন্দরের সামনে বায়তুস সালাম জামে মসজিদ সংলগ্ন চত্বরে মাওলানা সা’দ বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিক্ষোভের অগ্রভাগে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী এবং কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দেখা যায়। মাওলানা সা’দ বাংলাদেশের মাটিতে পা দিলে পুরো দেশ অবরুদ্ধ করে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয় বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে।

তবে বিকাল চারটার পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি গেইট দিয়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে মাওলানা সা’দকে বের করে আনার পর সেখানে থাকা বিক্ষোভকারীরা আস্তে আস্তে সরে যেতে থাকে।এরপরনিরাপত্তা বেস্টনির মধ্যেই ভারতের নিজামুদ্দিনের আমির মাওলানা সা’দকে কাকরাইল মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরেরদিন সচিবালয়ে তাবলীগ জামাতের বিবদমান দুটি পক্ষের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, দিল্লির মাওলানা সা’দ কান্ধলভি বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দেবেন না। কাকরাইল মসজিদ থেকেই সুবিধাজনক সময়ে তিনি বাংলাদেশ থেকে চলে যাবেন।

গত তিনদিন কাকরাইল মসজিদে অবস্থান করে শনিবার দুপুরে জেট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দিল্লির উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন মাওলানা সা’দ।

Exit mobile version