অনলাইন ভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান ইভ্যালী ও আলেশা মার্টসহ ১০টি ইকমার্স সাইট থেকে ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রি-পেইড কার্ডের লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা ব্যাংক।
এর আগে ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া একই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। পাশাপাশি ইউসিবি ও সিটি ব্যাংকও তাদের গ্রাহকদের এসব অনলাইন মার্চেন্টে লেনদেনের বিষয়ে সতর্ক করেছে।
নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ইভ্যালী ছাড়া নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে- আলেশামার্ট, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা শপিং, সিরাজগঞ্জ শপিং, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, কিউকম, আদিয়ান মার্ট ও নিডস ডট কম বিডি।
বৃহস্পতিবার ঢাকা ব্যাংকের নিজ গ্রাহকদের পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, গ্রাহকদের নিরাপত্তার স্বার্থে কিছুসংখ্যক অনলাইন মার্চেন্টে পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের লেনদেন বন্ধ থাকবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত ১৬৪৭৪ নাম্বারে কল করে জানতে বলা হয়েছে। ঢাকা ব্যাংকের কল সেন্টারের দায়িত্বরত কর্মী জানান আজ থেকে ১০টি ই-কমার্সের সঙ্গে লেনদেন করা যাবে না।
এর আগে বুধবার ব্যাংক এশিয়ার নিজ গ্রাহকদের পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, টেকনিক্যাল কারণে ব্যাংক এশিয়া কার্ডে কিছু লোকাল ই-কমার্স লেনদেন সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।
একই দিন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবি) ও সিটি ব্যাংকও তাদের গ্রাহকদের সম্ভাব্য প্রতারণার ব্যাপারে সতর্ক করেছে।
ইউসিবি তাদের গ্রাহকদের এক বার্তায় জানিয়েছে, ইউসিবি কার্ড দিয়ে ই-কমার্স ট্রানজেকশনে অনলাইন মার্চেন্টের সঙ্গে লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধের জন্য ইউসিবি দায়ী থাকবে না।
সর্বপ্রথম গত মঙ্গলবার ব্র্যাক ব্যাংক ইভ্যালী ও আলেশা মার্টসহ ১০টি ই-কমার্সের সঙ্গে লেনদেন স্থগিত করেছিল।
এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের গণসংযোগ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ইকরামুল কবীর সেদিন বলেছিলেন, এটা ব্র্যাক ব্যাংকের একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব থাকবে তা নির্ণয় করে আমাদের পরিচালনা পরিষদ। তারা এই সাইটগুলোতে লেনদেন আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম এসব অনলাইন মার্কেট প্লেস-এর বিষয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে এসব ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে উচ্চ লেনদেনের বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে অনলাইন ক্রেতাদের লোভনীয় সব ছাড়ের ফাঁদে ফেলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বিশাল অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ক্রেতাদের কাছ থেকে সংগৃহীত অগ্রিম অর্থের বিপরীতে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পদ নেই। অর্থাৎ সম্পদের চেয়ে দায় অনেকগুণ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শনে উঠে এসেছে, ইভ্যালীর চলতি সম্পদের পরিমাণ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সম্পদের চেয়ে ৬ গুণের বেশি এই দেনা পরিশোধ করার সক্ষমতা কোম্পানিটির নেই।
তবে ইভ্যালীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল বলেছেন, লোকসান কমাতে ধীরে ধীরে পণ্য বিক্রিতে ছাড়ের পরিমাণ কমিয়ে আনা হবে। তাই বকেয়ার পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা হলেও এতে কোনো ঝুঁকি নেই। ২০২২ সালেই এই লোকসান কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।