৫৭ ধারা নিয়ে সাধারণ মানুষসহ সকল পর্যায় থেকে সমালোচনার মুখে গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিল কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে। এই বিল পাস হওয়ার আগে সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মী সহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিরোধিতা এসেছে। কিন্তু সরকার সেসব সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়ে ৫৭ ধারার চেয়েও কঠোর এই বিল পাস করেছে। এর জেরে সর্বশেষ প্রতিবাদ এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও তাদের প্রতিনিধি দল এবং নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের মিশন থেকে। তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্ত বিবৃতি দিয়েছে।
বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা বলেছে: ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারাগুলো বাক স্বাধীনতার পাশাপাশি গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও অন্যায়ভাবে বাধাগ্রস্ত করে এবং বিচারিক পদ্ধতিগত নিশ্চয়তাকেও ক্ষুণ্ন করে। বর্তমান অবস্থায় আইনটি এই স্বাধীনতাগুলোর প্রয়োগকে যেমন দমন করতে পারে, তেমনি এই প্রয়োগকে অপরাধ হিসেবেও প্রমাণ করতে পারে।’
ইইউ এবং পশ্চিমা বিশ্বের উদ্বেগের আগেই ‘সম্পাদক পরিষদ’সহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন এই আইনের বিরোধিতা করে আসছে। এছাড়াও এইচআরডব্লিউ, আর্টিকেল-১৯, টিআইবি’র মতো সংগঠন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আইনের খসড়া নিয়ে সাংবাদিকরা আপত্তি জানিয়ে এলেও তা বিবেচনা না করায় সম্পাদক পরিষদ এই বিল পাসের বিরোধিতা করে কর্মসূচি দিতেও বাধ্য হয়েছে। তবে আশার খবর হচ্ছে- সম্পাদক পরিষদের কর্মসূচির আগে তথ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা এখনও মনে করি, এই আইন পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হওয়ার আগে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।

আইনটি পাস হওয়ার আগে থেকেই আমরা বলে আসছি, নতুন এই আইনে জনগণের মতপ্রকাশের অধিকার আরও বেশি খর্ব হবে। এমনকি এই আইনের ফলে গণমাধ্যমকর্মীদের কাজের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে প্রায় শত বছর আগের ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’র কারণে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
নির্বাচনের আগে সম্পাদক পরিষদ সহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনসহ জনগণের মতামত অগ্রাহ্য করে এই কানুন সরকারের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে বলে আমাদের শঙ্কা। আমরা জানি এবং বুঝি যে ডিজিটাল এ যুগে ডিজিটাল নিরাপত্তা রাষ্ট্রের জন্য এক প্রধান অগ্রাধিকার। সে লক্ষ্যে আইনেরও দরকার আছে। কিন্তু তা যেনো গণমানুষ এবং গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ না করে সেজন্য সরকারকে আইনটি সংশোধনের জন্য আমরা আহ্বান জানাই।