চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

জেগে ওঠো মানবতা

যদিও মানবতা কথাটার অনেক গভীর তাৎপর্য আছে, তবুও সাধারণ দৃষ্টিতে মানবতা হলো মানুষের ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য যার দ্বারা একজন মানুষ পূর্ণাঙ্গ মানুুষে পরিণত হতে পারে। এক কথায় মানবতা হলো মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া-মমতা। সেটা হোক পাশের বাড়ির কিংবা হাজার মাইল দূরের অপরিচিত কোন মানুষ। স্থান, কাল, ধর্ম ইত্যাদির উপর নির্ভর করে মানবতার রূপ ভিন্ন হতে পারে। একারণেই, আমরা রাস্তার পাশের ছেলেটি যখন ডাস্টবিনে খাবার খোঁজে, কিংবা দুই বছরের বাচ্চা যখন ক্ষুধার জ্বালায় ভিক্ষার জন্য হাত পাতে, তখন মানবতার অবক্ষয় খুঁজে পাই না। কিন্তু হাজার মাইল দূরের শিশুর জন্য মানবতা উথলে পড়ে। আজকে যারা লিবিয়ান মুসলিম কিংবা মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের জন্য কেঁদে চোখের আর নাকের পানি এক করতেছে, এই মানুষগুলোই চুপ করে মজা দেখে যখন হিন্দু, বৌদ্ধদের বাড়ীঘর কিংবা মন্দির ভাঙা হয়। ধর্ম এমনই এক অদ্ভুত জিনিস যে হাজার মাইল দূরের ভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতির মানুষ একীভূত করলেও পাশের বাসার একই ভাষাভাষি, সংস্কৃতির মানুষ কে এক করতে পারে না। সেই ধর্মই যখন মানবতার বাণী শোনায়, তখন অবাকই হতে হয়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্ব প্রসঙ্গে। সবাই সিরিয়ার এই অবস্থার জন্য পশ্চিমা বিশ্বকেই সবাই দায়ী করেছে। অথচ মুসলিমরা এই সব দেশে গিয়ে পাড়ি জমায়। আফগানিস্তান, পাকিস্তান,সিরিয়া থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ইউঁরোপে পাড়ি জমাচ্ছে। তারা তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আমাদের দেশ সহযোগীতার হাত প্রসারিত করেছে। এটি অত্যন্ত সাহস ও মানবিকতার ব্যাপার। সৌদি আরব, কাতারের মতো দেশে অভিবাসীদের ব্যাপারে নিশ্চুপ। কারণ তারা দুর্দশাগ্রস্থ সর্বহারা মানুষদের আশ্রয় দিতে পারত, কিন্তু তারা দেয়নি। মুসলিমরা কখনো অন্য দেশের সংস্কৃতিকে মেনে নিতে পারে না। তারা সবসময় আরবের সংস্কৃতিই ধারণ করতে চায়। সে যে দেশেরই বাসিন্দা হোক, মনে প্রাণে সে একজন আরবীয় হতে চায়। আমাদের এদেশেই হাজার বছরের শিকড় থাকা স্বত্ত্বেও অনেকে এদেশের সংস্কৃতিকে আপন ভাবতে পারে না।

কোন জাতি ধর্ম বিশেষে নয়,
সব মানুষকেই ভালোবাসতে হবে।

মানবাধিকার হচ্ছে কতগুলো সংবিধানবদ্ধ আইন বা নিয়মের সমষ্টি, যা মানব জাতির সদস্যদের আচার-আচরণ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য কে বুঝায় এবং যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক আইন সমষ্টি দ্বারা সুরক্ষিত যা মৌলিক অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ বিষয় হিসেবে কর্তব্য।

জাতিসংঘের ১ম অনুচ্ছেদে লেখা রয়েছে যে, ‘জন্মগতভাবে সকল মানুষ স্বাধীন এবং সমান সম্মান ও মর্যাদার অধিকার। মানবাধিকারের বিষয়টি স্বতংসিদ্ধ ও আলঙ্ঘনীয় হলেও সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই এ নিয়ে চলছে বাক বিতন্ডা ও দ্বন্দ সংঘর্ষ।

ক্ষমতাধর শাসকরা দেশে দেশে জনগণের স্বীকৃত অধিকারগুলো পর্যন্ত অবলীলয় হরণ ও দমন করে চলছে।

সিরিয়া

মানবতার বিষয় মানুষ শৈশব থেকে পরিবার, বিদ্যালয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে শেখে। ধর্ম ও রাজনীতিকে পুঁজি করে ব্যক্তি স্বার্থে মানবিকতা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। সেক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে আমরা এই ব্যাপারে কিছুটা হলেও করণীয় পদক্ষেপ অনুসরণ করতে পারি। চিন্তার ঋণাত্মক উন্নয়ন বিকাশে উত্তেজনাপূর্ণ কোন ম্যাচ শেষ হওয়ার পর গ্যালারির আসনগুলোতে সাধারণত উচ্ছিষ্ট খাবার, গ্লাস, কাপ, বোতল, প্লাষ্টিক ও কাগজের ঠোঙা বা প্যাকেট ইত্যাদি আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে।

সর্বশেষ বিশ্বকাপ খেলায় রাশিয়ায় মাঠের একই অবস্থা ছিল জাপান ও কলম্বিয়ার ম্যাচের পর। জাপান সমর্থকদের আনন্দ উল্লাস করার কারণ ছিল, যেহেতু তারা ২ – ১ গোলে জিতেছে। দক্ষিণ আমেরিকার কোন দলের বিরুদ্ধে এটাই জাপানের প্রথম জয়।

খেলার মাঠে কলম্বিয়াকে ধরাশায়ী করার পর জাপানের সমর্থকরা কিন্তু গ্যালারিতে শুধু আনন্দ উল্লাসেই মেতে থাকেনি, বরং তারা গ্যালারি পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে যান। স্টেডিয়ামের ভেতরে দর্শকদের সারিতে ও সামনে যেসব আবর্জনা ছিল সেগুলো তারা নিজেরাই পরিষ্কার করতে শুরু করে। জাপানি সমর্থকরা যে এ ধরনের কাজ এই প্রথম করেছে তা নয়! এর আগেও বিভিন্ন খেলার পরে তারা দল বেঁধে স্টেডিয়াম পরিষ্কার করেছে।

এটি হচ্ছে জাপানি সংস্কৃতির অংশ। জাপানি সমাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আছে সেটা নিশ্চিত করা। শৈশব থেকেই এই অভ্যাস গড়ে ওঠে। শৈশবে স্কুলে ছেলেমেয়েদের কে যেসব আচরণ শেখানো হয়, স্টেডিয়ামে তার কিছুটা অংশ আমরা দেখতে পাই। জাপানের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরাই তাদের স্কুলে ময়লা পরিষ্কার করে থাকে বলেন এলাকাবাসী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক স্বট নর্থ।

শিশু বয়স থেকে বারবার এই কাজটির উপর জোর নেওয়ার কারণে এটি বেশির ভাগ লোকেরই আচরণের ভেতরে ঢুকে যায়, বলেন তিনি আবর্জনা পরিষ্কার করা এবং প্রসাবের রিসাইক্লিং এর ব্যাপারে জাপানিরা অত্যন্ত সচেতন।

ভারতে মোদি সরকার আসার পর বাড়লো পিয়াজের দাম। এক লাফে দ্বিগুণ মূল্য বৃদ্ধি। পিয়াজের রপ্তানি মূল্য প্রতি মেট্রিকটন ১৫০ মার্কিন ডলার থেকে ৩০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছে ভারত সরকার। এতে করে বাজারে পিয়াজের দাম বেড়ে যায়।

আমাদের দেশে চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এক-তৃতীয়াংশ আসে ভারত থেকে, যা প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টন। ভারত যখন রপ্তানি বন্ধ করে ছিল, এই পরিমাণ পেঁয়াজ এর ঘাটতি তৈরি হলো। এছাড়াও বন্ধ ঘোষণা করার আগে কিছু বলেনি। হঠাৎ করে ঘাটতি হলো। সরকার ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করল অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ব্যাপারে। তবে ব্যবসায়ীরা আমদানির ব্যবস্থা করতে পারেন নি। তাই জোগানের ঘাটতি থেকেই গেল। ফলে সব মিলিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকল। যাদের কাছে কিছু পেঁয়াজ ছিল তারাও দাম বাড়িয়ে ছিল। সরকার কিন্তু অভিযান চালিয়ে জরিমানা করল, দাম বেধে দিল। যাদের কাছে পেঁয়াজ ছিল তারা ভাবল এই দামে তাদের পোষাবে না। তারা বিক্রি করল না। ফলে সংকট তৈরি হলো। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়ে ছিল। একদিকে পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হলেও অন্যদিকে বেশ কিছু পেঁয়াজ পচে নষ্টও হয়েছিল। যার স্থান ছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভাগাড়ে। ২০১৯ সালে নভেম্বর মাসে যখন ব্যবসায়ীরা এভাবে অমানবিক হয়ে দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফার লোভে গুদামজাত করায় পঁচে নষ্ট হচ্ছিল অনেক পেঁয়াজ।

মানুষের মধ্যে যখন এ ধরনের অমানবিক আতংক ছড়িয়ে পড়ে পেঁয়াজ নিয়ে, তখন বাজারে লবণের স্বল্পতা সম্পর্কে গুজব ছড়ানো হয়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র শিল্প ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান মোস্তাক হোসেন বলেছেন, লবণের কোনো স্বল্পতা নেই। তিনি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট অনলাইন মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে ফায়দা তোলার চেষ্টা করেছে।

এবার আসা যাক মানবিকতার অপর একটি বিষয় নিয়ে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের গণহত্যা মেনে নেয়া যায় না বলে আন্তর্জাতিক বিচারকি আদালতে (আইসিজে) জানিয়েছেন জাম্বিয়া। ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধন চালিয়েছে মিয়ানমার।

মুসলিম অধ্যুাষিত রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অপহত্যা চালিয়েছে। অভিযোগে ১১ নভেম্বর ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক বিচারক আদালতে মামলা দায়ের করে গাম্বিয়া। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে চাপহত্যা, গণধর্ষণসহ মানবাধিকার লংঘন করেছে। অভিযোগে এই মামলা করা হয়।

২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার জাতিগত নিধন চালানোর অভিযোগ এনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইনের বৃদ্ধি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। এই গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ দিতে আইসিজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি।

মিয়ানমারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেয় নেদারল্যান্ড দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অংসান সুচি। যিনি মিয়ানমারের গণতন্ত্রের দাবিতে অহিংস আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।

অবাক লাগে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত অংসান সুচি কিভাবে এই গণহত্যার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে। ইসরায়েল গাজা উপত্যকা দখলে নেয় ১৯৬৭ সালে। কিন্তু এক চুক্তির মাধ্যমে ২০০৫ সালে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় দেশটি ২০০৭ সাল থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে।

২০১৯ সালে ১৪ নভেম্বর ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় রক্তাক্ত হলো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। এতে অন্তত ২৪ ফিলিস্তানি নিহত হয়। নতুন করে ফিলিস্তিন ইসরায়েল সংঘর্ষ শুরু হয়।

একটি কূটনৈতিক সূত্র বলেছে, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া লড়াই চরম হয়ে ওঠে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনির লড়াই একটি ধারাবাহিক সংক্রামণ গতিতে চলে বছরের পরে বছর। কোথায় আছে মানবিকতা বা ধর্ম?

সারাবিশ্ব আজ টিকে থাকার লড়াইয়ের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। মানবিকতা আপেক্ষিক বিষয় হয়ে ছাড়িয়ে আছে।

বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়ে মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদকে ৭ অক্টোবর ২০১৯ সালে ১৯ জন প্রত্যক্ষভাবে ও পরোক্ষভাবে ২৫ জন মিলে পিটিয়ে হত্যা করে।

আবরার ফাহাদকে শিবির সন্দেহে হত্যা করা হয়। এ সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেঁরোরিজম ইউনিটের প্রধান এবং অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, আবরার হত্যাকান্ডে জড়িতরা উশৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত ছিল।

তারা র‌্যাগিং এর নামে আতংক তৈরী করেছে। তিনি বলেন, হত্যাকান্ডে অভিযুক্তরা আবরার ফাহাদ কে পিটিয়ে অন্যদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করতে চেয়েছে, যাতে করে অন্য শিক্ষার্থীরাও তাদেরকে সমীহ করে এবং সালাম দেয়। অভিযুক্তরা বুয়েটে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করার ধারাবাহিকতায় আবরার ফাহাদের উপরে হামলা করে। উল্লেখ্য করেন পুলিশের কর্মকর্তা।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। সকলকে বুয়েট কর্তৃপক্ষ স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। সে প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন এবং ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। আবরার মেধাবী ছিল। তাঁর সমাচিত মৃত্যুর সাথে ঝড়ে পড়ল মেধাবী শিক্ষার্থী এবং ওর পরিবারের সুখ। ওর একমাত্র ভাই এর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেল আর আবরারের মৃত্যুর সুখে বাবার মৃত্যু হয়।

কোভিড-১৯ ভাইরাস ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে সারাবিশ্বে আঘাত হানে। প্রথমে চীনে, পরে সারাবিশ্বে। বাংলাদেশ ও তার বাইরে কিছুটা আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে আতঙ্কে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি শহরের বাজারগুলোতে দামের উর্ধ্বগতি হয়। বিত্তবানরা সংগ্রহ করে মজুদ করে আর ব্যবসায়ীরা মুনাফা লাভ করে। অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত নানা রকম গুজব ছড়িয়ে পড়ে। যার মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়ায়। আবার কিছু কিছু অমানবিক মতামত বা প্রচারণা চালানো হয়। যেমন- গৃহপালিত প্রাণীকে ভাইরাস ছড়ানোর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যার কারণে আতংকিত মানুষ গৃহপালিত পশু ও পাখিকে ধ্বংস করে। নিষ্পাপ প্রাণীকে বিসর্জন দিতে হয়। আমরা মানব জাতি কত হিংসা আর কত অমানবিক হয়ে পড়ি। নানা রকম দূর্যোগের সময় তা জনসম্মুখে প্রকাশ পায়। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে একে অপরের দোষ ধরার জন্য। রাষ্ট্র ও রাজনীতি তো মানুষের কল্যানে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা সহযোগীতার হাত বাড়ালে দুঃস্থ জনগণ খুব সহজেই কিছুটা হলেও অসময়ে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে।

তাই বিশ্ব তথা মানব জাতি, ধর্ম, কর্ম, ক্ষমতা কে মানবিকতার উর্ধ্বে না রেখে জেগে ওঠো মানবিক চেতনায়। করোনা মহামারী যখন সারাবিশ্বকে জেঁকে বসেছে তখন বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে গ্রাম্য পুকুর দিয়ে জরুরি সেবার নামে যানবাহন ব্যবহার করে ইয়াবা, গাঁজা আর বিয়ার পাচার করে। নারায়ণগঞ্জের র‌্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জসিম জানান, তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে এই মাদক দ্রব্য এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেন। (৬ এপ্রিল, ২০)

অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপসহ নানা মাধ্যমে একদল অসাধু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মোবাইল ট্র্যাক এর মাধ্যমে কিছু আন্তর্জাতিক অনলাইন প্রতিষ্ঠান এর নাম ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। এর সাথে বাংলাদেশের কিছু অসাধু ব্যক্তি জড়িত। নানা রকম মোবাইল কল এবং এজেন্টের নাম ব্যবহার করে ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করার মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার জন্য অমানবিক কাজে লিপ্ত। এই ব্যাপারে বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এই ধরনের ভুয়া কাগজ সরবরাহ করে এই চক্রের সাথে নিযুক্ত কিছু মানুষ আন্তর্জাতিক অনলাইনের নামে টাকা হাতিয়ে নেয়। কোভিড-১৯ যখন সারা বিশ্বকে কাঁদিয়ে দিয়েছে, এখন কাঁদাতে পারে নি এসব অমানবিক মানুষ নামের অমানুষগুলিকে।

লোভ, ক্ষমতা, হিংসা এবং অমানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিচ্ছে মানবিকতাকে। করোনা যখন বাংলাদেশে চরম আকার ধারণ করে, বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুমন চাকমা ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে আটটায় মৃত্যুবরণ করেন। সুমন চাকমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি ফুসফুসে টিউমারের অসুখে ভুগছিলেন। উপতৃক নিবাস খাগড়াছড়ির সদর উপজেলায়। বাবা সুপেন চাকমা একজন কৃষক। ২০০৮ সনে সুমনের অসুস্থতা দেখা দেয়। সুমনের বাবা জানান, কোথাও চিকিৎসা পায়নি সুমন। আগের চিকিৎসার রিপোর্টগুলো নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে গেলেও কোনো হাসপাতালে জায়গা হয়নি তার। এমতাবস্থায় কোথাও ভর্তি হতে না পেরে সুমন গত ২৬ মার্চ তার বাবার অসহায়ত্ব ও নিজের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।

সুমন চাকমা বলেন, বিনা চিকিৎসায় ঢাকায় থাকলে’তো মারা যাবে। তাই সুমন কে ঢাকা থেকে বাড়িতে নিয়ে গেলে সেখানে মরে গেলেই ভালো হবে। তাই সুমন চাকমা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

হায়রে মানবতা! এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন ডাক্তার চিকিৎসা করলো না? প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে ডাক্তার চিকিৎসা করতে পারতেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

আর খাদ্য সংকট খোদা বেলার জন্য আইডি কার্ডের ভিত্তিতে উপজেলা ইউনিয়ন পর্যন্ত খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। ত্রাণ সবার বাড়িতে পৌছে দিতে হবে। প্রশাসন প্রতিনিধির আর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মিলে খাদ্য তালিকা করতে হবে। কারণ, ত্রাণ নিয়েও অমানবিক আচরণ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সাধারণ মানুষের।

লোভ লালসা মানবতা কে এভাবে ধ্বংস করছে। করোনায় বিশ্ব যখন কাপঁছে তখণ বাংলাদেশ লকডাউন উপেক্ষা করে উত্তেজনায় মেতে উঠেছে। একশ্রেণির বর্বর মানুষ বিভিন্ন জেলার কর্মস্থল শহরে ও গ্রামে শুরু করেছিল ঝগড়া বিবাদ। মনুষ্যত্ববোধের জায়গাটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল।

আবার করোনা ভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করলে একদল ব্যবসায়ী মাস্ক তৈরি ও বিক্রি করে। বাংলাদেশে যখন এই বিষয়টা প্রকাশিত হয়, তখন এসব ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

একই চিত্র শক্তিধরে চীন দেশেও দেখা যায়। তারা নকল ভেন্টিলাইটার বিক্রি করে। যেখানে মানবতা হেরে গেছে প্রকৃতির কাছে। শক্তিধর সারা বিশ্ব কাপছে। সেখানে শিক্ষা নেয়া উচিত মানুষ কতটা স্বার্থপর আর লোভী হয়ে উঠেছে যে মূল্যবোধ মনুষ্যত্ববোধ সেখানে শুন্যের কোঠায় দাঁড়িয়েছে। চীন সারাবিশ্বে বাণিজ্যিক সুযোগ করার জন্য মানবতাকে দাপিয়ে নেয়ার হাত বাড়িয়েছে। আর বাংলাদেশে করোনার মহামারীর সময় দেখা গেছে মানবতা আড়াল থেকে তাচ্ছিল্যে হাসি নিয়ে ধিক্কার দিয়েছে। বাংলাদেশে যখন করোনা ভাইরাস বিস্তার লাভ করে তখন একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ব্যবসা করার জন্য নানাভাবে ফায়দা লুটেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম উর্ধ্বগতিতে বাড়তে থাকে। এমন কি ঔষধের দাম পর্যন্ত বেড়ে যায় দরিদ্য জনগোষ্ঠী আর মধ্যবিত্তরা এর শিকার হয়। করোনা মহামারীতে দেখা গেছে অনেক মৃত লাশের কাছে মানুষ যেতে ভয় পেয়েছে। মা এর লাশের কাছে সন্তান যায়নি। এর চেয়ে আর কত নির্দয় হতে পারে মানবতা।

সেবার নামে শিক্ষিত মানুষ করেছে দাসত্ব। মানবতা সেখানে নিশ্চুপ। ধিক্কার মানবতা। ছবি তোলে ত্রাণ দিতে হয়েছে নিজেকে দোষী সাব্যস্ত না করার জন্য। করোনাভাইরাস থেকে শিক্ষা লাভের উপায় হলো কোনভাবে লোভী হওয়া যাবে না। আমরা কতটা অমানবিক হয়ে গেছি তা এই দুর্যোগপূর্ণ মুহুর্তে শিক্ষা লাভ করেছি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কে যখন ধ্বংস করার পায়তারা চলেছে তখন গৃহবন্দি মানুষের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে প্রকৃতি। রুক্ষ প্রকৃতি সবুজ পেয়েছে। আতংকে মানবতা তখন আতঁকে উঠেছে, প্রাণ হারিয়েছে মানুষ।

করোনার সময় ডাক্তার, নার্স সেবা দেওয়ার কারণে বাড়িওয়ালারা তাদের ভাড়া না দেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এটি কোন ধরণের অমানবিক আচরণ।

এক একটি মহামারী মানে যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধে মানবতার প্রকাশ নানা ভাবে প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে করোনা টেস্ট চলে। আর কিছু কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা হাসপাতালেগুলোকে চিকিৎসার নামে রোগীদের নানা রকম ভোগান্তিতে ফেলে। চিকিৎসা বাবদ চড়ামূল্য পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে নকল অক্সিমিটার, পিপিই, হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্ক,এন-৯৫ থেকে শুরু করে সবকিছু নকল বের করেছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা নেমে পড়েছে ইমোশনকে ক্যাপিটালাইজ করে পয়সা বানাতে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবসা ও চলে। করোনাকাল লোভী মানুষকে মানবতা শেখাতে আজও পারল না।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)