বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিতর্ক আছে। ইতিহাসের শুভক্ষণে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হলেও, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে অদ্যাবধি জাতিগঠন প্রক্রিয়ায় সর্বাত্মক সাফল্য আসেনি। স্বাধীনতা-বিরোধী পরাজিত শক্তি শুরু থেকেই বাঙালি জাতিকে একতাবদ্ধ হতে দেয়নি। যেমন স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এদেশে বিতর্ক আছে; বাঙালি-বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ নিয়ে বিতর্ক আছে; ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা নিয়ে বিতর্ক আছে। এমনকি জাতির পিতা নিয়ে পর্যন্ত স্বাধীনতা-বিরোধী জামাত এবং এর রাজনৈতিক দোসর বিএনপি এদেশের সাধারণ মানুষের একাংশকে দ্বিধান্বিত করতে সক্ষম হয়েছে।
জামাত এবং তাদের দোসররা এমন কনফিউশনের রাজনীতি করবে, এটিই তাদের কাজ। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাচন কমিশনার যখন বিশেষ টার্ম ব্যবহার করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার অন্যতম নির্দেশদাতা জিয়াউর রহমানকে গ্লোরিফাই করার চেষ্টা করেন, তখন বহুল আকাঙ্ক্ষিত জাতিগঠনের কাজ সুদূরপরাহত বলেই ধরে নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়, তখন ইতিহাসের দগদগে ঘায়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার লবণ ছিটিয়ে দিলে ইতিহাস সচেতন মানুষ বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ না হয়ে পারে না।
বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল দিন কয়েক আগে নির্বাচন কমিশনে গেলে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিএনপির উচ্ছসিত প্রশংসা করেন। বিএনপির মন ভালো করতে বা সৌজন্যতা বশত প্রধান নির্বাচন কমিশনার দলের প্রশংসা, দলের বর্তমান চেয়ারপার্সন এর প্রশংসা কিংবা দলের প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের প্রশংসা করতেই পারেন। কিন্তু বিএনপির মন ভালো করতে গিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের অন্যতম খলনায়ক জিয়াউর রহমানকে বিপদজনকভাবে ‘প্রশংসা’ করে ফেলেছেন সিইসি। ইচ্ছে করে হোক, ভুল করে হোক, সিইসি বলেছেন, জিয়াউর রহমান নাকি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা (?)। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান যদি ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের’ প্রতিষ্ঠাতা হয়ে থাকেন, তাহলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কী ছিলেন?
নির্বাচন কমিশনের সভাকক্ষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষাৎ করতে গেলে সিইসি কেএম নূরুল হুদা বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ৩৯ বছর পূর্বে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে ১৯৭৭ সালে বিএনপি গঠন করেন। সে দলে ডান, বাম, মধ্যপন্থি সব মতাদর্শের অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে একত্র করেন। তার মধ্য দিয়েই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা লাভ করে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে সব দল অংশগ্রহণ করে। সে নির্বাচনে বিএনপি ২০৭টি আসনে জয় লাভ করে এবং তিনি সরকার গঠন করেন। ব্যক্তি হিসেবে এবং দলনেতা হিসেবে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বিএনপি নয় বছর আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যায়। ১৯৯১ সালে সংসদীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি সরকার গঠন করে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী’।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার যেন সেদিন বিএনপির মুখপাত্র হয়ে উঠেছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসেন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনি আর্মি অফিসার ফারুক ও শাহরিয়ার পশ্চিমা সাংবাদিক এন্থনি মাসকারেনহাসকে দেয়া এক ইন্টার্ভিউতে স্বয়ং এলান করেছেন যে, জিয়া তাদেরকে বঙ্গবন্ধু হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কর্নেল ফারুককে জিয়া বলেছিলেন, ‘আমি সিনিয়র অফিসার হয়ে নিজে মুজিবকে হত্যা করতে পারি না, তবে তোমরা জুনিয়র অফিসাররা করতে চাইলে কর, গো এহেড’। এ সংক্রান্ত ভিডিও লিংকটি ইউটিউবে সহজলভ্য।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে, সমস্ত বিরোধী শক্তি দেশব্যাপী একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল। নানা ছদ্মবেশে কাজ করা স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও এর দোসর পাকিস্তানের সহায়তায় দেশের মানুষের মনে একটা সরকার বিরোধী জনমত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় ১৯৭৪ সালে। জাসদসহ অন্যান্য কিছু বাম শক্তির নানা হঠকারীতা এই অরাজকতায় নতুন মাত্রা যোগ করে। সদ্য স্বাধীন দেশে জাতির পিতাকে সহায়তা না করে এরা যে যার উদ্দেশ্য নিয়ে সমাজে অনিয়ম, সন্ত্রাস আর বিশৃঙ্খলার রাজত্ব কায়েম করে। জাসদের সশস্ত্র শাখা গণবাহিনী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর ভেতরে মুক্তিযোদ্ধা আর অমুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের ভেতরে দ্বন্দ্ব চরমে উঠে। অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে পুরো বিষয়টিকে জনগণের সামনে বঙ্গবন্ধু সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে উপস্থাপন করে পাকিস্তানপন্থী কয়েকটি সংবাদপত্র।
এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র ও সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতির পিতা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একটা কৃষিনির্ভর আধা-সামন্ত সামাজিক অবস্থা থেকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে গিয়ে জাতির জনক গোড়াপত্তন করেন ‘বাকশাল’ এর। এই বাকশাল নিয়েই বিএনপি-জামাতের যত অপপ্রচার। বাকশাল সম্পর্কে জেনে, না জেনে একপ্রকার নেতিবাচক ধারণা নিয়ে বড় হয় এদেশের নতুন প্রজন্ম। অথচ বাকশাল হতে পারত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার শক্তিশালী রাজনৈতিক প্লাটফর্ম।
বাকশাল কোনো একনায়কতান্ত্রিক বা অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারণা ছিল না। স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারীদের নিয়ন্ত্রণে এনে সরকারি-বেসরকারি উৎপাদন ব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু ‘বাংলাদেশ কৃষক, শ্রমিক, আওয়ামীলীগ (বাকশাল)। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন স্পিকার আব্দুল মালেক উকিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনের দ্বিতীয় বৈঠকে ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আপনার মনে আছে যে, সংবিধান যখন পাস করা হয়, আমি বলেছিলাম যে, এই দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য শোষণহীন সমাজ-ব্যবস্থার জন্য যদি দরকার হয়, এই সংবিধানের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা হবে’।
জাসদের গণবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন-হত্যা, আওয়ামী লীগের এক শ্রেণির নেতা–কর্মী ও আমলাদের দুর্নীতি, সরকারি নানা তহবিলের তসরুফ, পাকিস্তানপন্থী সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী সমাজের যোগসাজশে সাংবাদিকতার নামে সরকার-বিরোধী সিস্টেম্যাটিক অপপ্রচার ইত্যাদি নানা অরাজকতার অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র ও সমাজের সর্বস্তরে শৃঙ্খলা এনে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের নিমিত্তে বঙ্গবন্ধু বাকশাল ব্যবস্থার সূচনা করেন। সংসদের ভাষণে তিনি বাকশাল সম্পর্কে আরও বলেছিলেন, ‘ অ্যামেন্ডেড কনস্টিটিউশনে যে নতুন সিস্টেমে আমরা যাচ্ছি, তাও গণতন্ত্র। শোষিতের গণতন্ত্র। এখানে জনগণের ভোটাধিকার থাকবে। এখানে আমরা শোষিতের গণতন্ত্র রাখতে চাই’।
সংবিধানের সংশোধন সম্পর্কে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘ সংবিধানের এই সংশোধন কম দুঃখে করি নাই, স্পীকার সাহেব। যারা জীবনভর সংগ্রাম করেছে- এ কথা যেন কেউ মনে না করে যে, জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে গেছে। জনগণ যা চেয়েছে, এখানে সেই সিস্টেম করা হয়েছে। তাতে পার্লামেন্টের মেম্বারগণ জনগণের ভোটের দ্বারা ভোটে নির্বাচিত হবেন। যিনি প্রেসিডেন্ট হবেন, তাকেও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার আছে’।…আজকে আমূল পরিবর্তন করেছি সংবিধানকে। কারণ একটা সুষ্ঠু শাসন-ব্যবস্থা এ এদেশে কায়েম করতে হবে, যেখানে মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে, যেখানে মানুষ অত্যাচার, অবিচার হতে বাঁচতে পারে’।
গরীব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর নিমিত্তে প্রণীত বাকশালকে জাতির পিতা ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। জাসদের গণবাহিনী ও অন্যান্য রাষ্ট্রবিরোধী অপশক্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে এনে তাদের অত্যাচার, নির্যাতন বন্ধ করে সারাদেশে শৃঙ্খলা আনতে চেয়েছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগ ছাড়া যেসব রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাদেরকেও নতুন সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহ্বান ছিল জাতির পিতার। সংসদে সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘যারা দেশকে ভালবাসেন, চারটি প্রিন্সিপল-কে ভালবাসেন-জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা-এই চারটিকে, তারা আসুন, কাজ করুন। দরজা খোলা আছে। সকলকেই আহ্বান জানাচ্ছি। যারা এই মতে বিশ্বাস করেন। যারা এই মতে বিশ্বাস করেন, তাদের প্রত্যেকেই আসুন, কাজ করুন, দেশকে রক্ষা করেন। দেশকে বাঁচান, মানুষকে বাঁচান, মানুষের দুঃখ দূর করুন। আর দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, চোরাকারবারিদের উৎখাত করুন’।
১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাকশাল কর্তৃক আয়োজিত জনসভায় ভাষণ প্রদান করেন জাতির পিতা। যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশ এর বিধ্বস্ত অর্থনীতি, পাকিস্তানের কাছ থেকে পাওনা না পাওয়া ইত্যাদি কথা বলে বাকশালের রূপরেখা নিয়ে পুনরায় কথা বলেন জাতির পিতা শেখ মুজিব। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ফরম অব গভর্নমেন্ট করেছি। জনগণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। পার্লামেন্ট থাকবে। পার্লামেন্টের নির্বাচনে একজন, দুইজন, তিনজনকে নমিনেশন দেওয়া হবে। জনগণ বাছবে, কে ভাল, কে মন্দ। আমরা চাই শোষিতের গণতন্ত্র, আমরা চাইনা শোষকের গণতন্ত্র।’
সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকে যখন বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়, তখন জাতির পিতার রাষ্ট্র ও সমাজ চিন্তাকে অপমান করা হয়, প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা কোনো আকস্মিক বিষয় ছিল না। পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও স্থানীয় পরাজিত শক্তি শুরু থেকেই নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল। জাতির পিতা দেশের মানুষকে শোষণ ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ উপহার দেয়ার জন্য বাকশাল ধারণার গোড়াপত্তন করেছিলেন। ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মাফ করে দিয়েছিলেন। ১০০ বিঘার উপর কারো জমি থাকলে, সে বাড়তি জমি কেড়ে নিয়ে গরীব মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন তিনি। বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর ধর্মনিরপেক্ষতার শক্তিতে একটি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন তিনি। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়, সেটিও পরিস্কার করে বলেছিলেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করে, প্রতি ৬,০০০ মানুষের জন্য একটি করে মিনি হাসপাতাল (কমিউনিটি ক্লিনিক) স্থাপন শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্রমনা। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই সংবাদমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে তৎকালীন সংবাদপত্রগুলোর অধিকাংশ অপসাংবাদিকতায় মেতে উঠেছিল। গঠনমূলক সমালোচনা না করে, মিথ্যা, বানোয়াট ও অতিরঞ্জিত সংবাদ পরিবেশন করে দেশবাসীর মনে সরকার সম্পর্কে বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছিল। সাধারণত কোনো বিপ্লবের পরে মিডিয়াকে এত স্বাধীনতা দেয়া ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধু সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে হেন কোনো উপায় নেই যা অবলম্বন করেনি তখনকার কিছু সংবাদপত্র। সংবাদ প্রবাহে সত্য প্রতিষ্ঠা করতে বঙ্গবন্ধু সরকার হলুদ সাংবাদিকতা করা সংবাদপত্রগুলো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে সেসবের সাথে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের তিনি সরকারি চাকরি দিয়ে পুনর্বাসন করেছিলেন। বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউট থেকে ‘বঙ্গবন্ধু ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন দেশের সিনিয়র সাংবাদিক শাহ আলমগীর।
বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে, দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে, বাকশালের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে পারলে আজ বাংলাদেশের অবস্থা হত ইউরোপের যে কোনো উন্নত দেশের চাইতে ভালো। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন করেছেন। খুনিদের বাঁচানোর জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছেন। পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়া যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমসহ অনেক যুদ্ধাপরাধীকে দেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। ছাত্র রাজনীতিতে অস্ত্র ও নগদ অর্থের আমদানি করেছিলেন জিয়াউর রহমান। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাকে ৬ বছর প্রবাস থেকে দেশে আসতে দেননি জিয়াউর রহমান। সে জিয়াউর রহমানকে ‘বহু দলীয় গণতন্ত্রের’ প্রতিষ্ঠাতা বলে গ্লোরিফাই করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেশের নতুন প্রজন্মকে যারপরনাই বিভ্রান্ত করেছেন।
তাছাড়া দেশের হাইকোর্ট জিয়াউর রহমানকে অবৈধ সামরিক শাসক বলে রায়ও দিয়েছিল। জানি না দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা এসব নিয়ে কী ভাবছেন? আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের মনে হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জিয়াউর রহমান সংক্রান্ত বক্তব্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করা উচিত। না হলে, ইতিহাস বিকৃতিকারীরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করবে। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। দেশের সত্য ইতিহাসও নতুন প্রজন্ম বিশ্বাস করতে চায় না। তাই সরকার প্রধানের কাছে আকুল আবেদন, জিয়াউর রহমান সংক্রান্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য অফিসিয়ালি প্রত্যাহার করার ব্যবস্থা নেয়া হোক।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)