টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনির শিকার ভ্যান চালক মিনু মিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

সোমবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। এর আগে মেডিক্যালের পুরুষ ওয়ার্ডের ২০১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
মিনুর মাথার আঘাত গুরুতর হওয়ায় কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়ায় আজ তাকে আইসিইউতে স্থানান্তরের কথা ছিলো। তার আগেই তিনি মারা যান বলে জানিয়েছে স্বজনরা।
ভুঞাপুর পৌরসভার কাউন্সিলর খন্দকার শরিফুল আলম সোহেল জানান, মিনুর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ীতে আনা হবে।
অন্যদিকে ঘটনার পরদিন রাতে মিনুর ভাই মো. রাজিব (আজিজ) বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে পুলিশ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে।
কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান আল মামুন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মিনু মিয়াকে গণপিটুনির ঘটনায় ৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় আরো যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা সংযুক্ত করা হবে।
গত ২১ জুলাই রোববার ভূঞাপুর উপজেলার টেপিবাড়ী গ্রামের কুরবান আলীর ছেলে দরিদ্র ভ্যান চালক মিনু ও প্রতিবেশী জাবেদের ছেলে অটো চালক শাকের বন্যায় কর্মহীন হয়ে পড়ায় কালিহাতীর সয়া হাটে গিয়েছিলেন মাছ ধরার জাল কিনতে। কিন্তু হঠাৎ করে এক কিশোর ছেলে শাকেরের পকেটে হাত দেয়। এসময় শাকের ছেলেটিকে ধরে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দেয় ওই কিশোর।
এসময় ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা তাদের ঘেরাও করে গণপিটুনি দেয়। এর এক ফাঁকে শাকের পালিয়ে যেতে পারলেও অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় সহজ সরল মিনুকে। পরে নাগা গ্রামের বেশকিছু ব্যক্তি পিটুনি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তাকে উদ্ধার করে সয়া বাজারের হিটু’র ডিমের আড়ৎ ঘরে রেখে পুলিশে খবর দেয় তারা।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পোঁছানোর আগেই উত্তেজিত জনতা ওই ঘর থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় অমানবিক নির্যাতন চালায় বলে দাবী তাদের। পরে পুলিশ এসে মিনু মিয়াকে উদ্ধার করে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে মিনুর অবস্থা অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ৯ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ সকালে তিনি মারা যান।