
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এদেশের কোন আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল না এই ছাত্রলীগ? সাধারণ মানুষের অধিকার আর সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে সব সময় ছিল সোচ্চার বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই সংগঠনটি। ৫২তে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের মার্শাল ল’ এর প্রতিবাদ, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয় দফা এবং ছাত্রসমাজের ১১ দফা, ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান আর ৭০ এর নির্বাচনে ছাত্রলীগের অবদানের কথা জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সর্বশেষ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছাত্রলীগ অংশ নিয়েছিল।
ছাত্রলীগের প্রশস্তি বা স্তুতিগাঁথার জন্য এ লেখা নয়, সেই ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে কেন এত সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে?
গত মে মাসের ১১ ও ১২ মে ছিল ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলনের পরেই পুরোনো কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। নিয়মানুযায়ী সম্মেলনের দিন কাউন্সিলররা নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেন। কিন্তু এবার কাউন্সিলররা নতুন কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর। এর পেছনেও কারণ নিহিত ছিল, ইতিপূর্বে কাউন্সিলররা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করতেন। পরবর্তীকালে এই সভাপতি- সম্পাদক বাকি পদগুলো নির্বাচন করতেন। এর ফলে অভিযোগ ছিল সভাপতি-সম্পাদককে ঘিরেই একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠতো। আর তার খেসারত দিতে হতো আওয়ামী লীগকে। চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সব ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ত এই সিন্ডিকেট এর সদস্যরা।

সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও কারা কমিটিতে থাকবে কাদেরকে বাদ দিতে হবে সব নির্ধারণ করতো এই সিন্ডিকেট। এ ধরনের অভিযোগ থেকেই এবার সিদ্ধান্ত হয়েছে দলীয় নেত্রী এই কমিটি গঠন করবেন। সারাদেশে কোথায় কী ঘটছে, কারা কারা সেই ঘটনার নায়ক, সব তার নখদর্পনে। আর তাই এবার তিনি নিজেই যাচাই-বাছাই করেই কমিটি গঠন করবেন।
খুবই ভাল উদ্যোগ। কিন্তু কথা হচ্ছে এই যাচাই-বাছাই করতে যত সময়ক্ষেপণ হবে তাতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবার সুযোগ থাকবে। কারণ ছাত্রলীগের কাণ্ডারি না থাকায় তৃণমূলে কেউ কাউকে মানবে না। বাড়বে স্বেচ্ছাচারী মনোভাব। পত্রপত্রিকায় আমরা প্রায়ই দেখতে পাচ্ছি দেশের কোথাও না কোথাও ছাত্রলীগ নামধারী কোনো না কোনো সদস্যের অপকর্মের কথা। সর্বশেষ জানা গেল, ময়মনসিংহের একটি থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে চাঁদা চাইতে গিয়ে ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। পত্রিকায় আর কয়টা খবর আসে? ভয়ে অনেক সংবাদকর্মী খবর পাঠানো থেকে বিরত থাকেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, দ্রুত ছাত্রলীগের কমিটি দিয়ে দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করুন। অন্যথায় স্থবির হয়ে যাবার পাশাপাশি অন্যায়ে জড়িয়ে পড়বে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই সংগঠনটি। কারণ সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকায় অনেকেই নানা রকম প্রলোভনে জড়িয়ে পড়বে অপকর্মে। সামনে আসছে নির্বাচন। দলকে শক্তিশালী করার জন্য ও দেশের উন্নয়নের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য সময়ক্ষেপণ না করে যতটা সম্ভব অল্প সময়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করে দিন। কারণ ‘অলস মস্তিস্ক শয়তানের কারখানা’ এই প্রবাদটা ছোটবেলা কোথায় যেন পড়েছিলাম।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)