Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

চেঞ্জমেকার সম্মেলনে তনু-রিশা-রূপাদের জন্য সমাজ পরিবর্তনের বার্তা

আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনের ভেতরে নারী নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে শত শত কণ্ঠের প্রতিধ্বনি। এর মধ্যে একে একে মিলনায়তন মঞ্চে হাজির হয় তনু, কিশোরী রিশা এবং তরুণী রূপা। মুহূর্তে নিরবতা নেমে আসে মিলনায়তনে। চরম বর্বরতার শিকার হয়ে অকালে চলে যাওয়া এই তিন নারীর মর্মবেদনা উঠে আসে ‘তিন কন্যা’ নামের নাটিকায়।

নাটিকায় স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় কুমিল্লার মেয়ে তনু হত্যা, টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার রূপা এবং ঢাকায় কিশোরী রিশা হত্যার কথা। তুলে ধরা হয় তাদের হত্যাকাণ্ডগুলোকে পোশাক-চলা-ফেরার দোষের তকমা দিয়ে বৈধতা দেয়ার সামাজিক অচলায়তনের কথা।

নারীর প্রতি চরম সহিংসতা ছাড়াও প্রতিনিয়ত নারীর ওপর চলা পারিবারিক নির্যাতনের মর্মস্পর্শী বাস্তবতা তুলে ধরেন কয়েকজন নির্যাতিতা। লুুঙ্গি ধোয়া হয়নি, সামান্য এই কারণে স্বামীর হাতে বেদম মার খাওয়া কিংবা ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন মিলনে বাধ্য হওয়া, রাজি না হওয়ায় নেমে আসা নিপীড়ন এবং কিশোরী বয়সে বিয়ের পর শারীরিক-মানসিক সংকট বয়ে বেড়ানোর কথাগুলো তুলে ধরেন কয়েকজন নারী।

এদেরই একজন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মৌসুমি। বিয়ে কী, সেটা বোঝার আগেই স্বামীর সঙ্গে সহবাসের তিক্ত অভিজ্ঞতা আজও তাড়া করে তাকে। তবে সখী প্রকল্প এবং আমরাই পারি জোটের সহায়তায় এখন মৌসুমি বদলে গেছেন,বদলে গেছে মৌসুমির স্বামীর আচরণ। শুধু নিজে বদলেই থেমে যাননি এই নারী বাল্যবিবাহ রুখে দিয়ে বদলে দিয়েছেন আশেপাশে তার মত নারীদের ভবিষ্যৎ।

নিজের ওপর নির্যাতন ও ঘুরে দাড়ানোর গল্প বলে মৌসুমি মঞ্চ থেকে নামলে মঞ্চে আসেন হাবিব। পেশায় রিক্সা চালক হাবিব নির্যাতিত হননি, তিনি নিজেই ছিলেন নির্যাতক। স্ত্রীর গায়ে হাত তোলাটা ছিলো তার নিয়মিত অভ্যাস। তবে তিনিও এখন বদলে গেছেন। অকপটে শত শত নারী-পুরুষের সামনেই তিনি স্বীকার করলেন তিনি ভুল করেছেন এবং এখন থেকে পারিবারিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়বেন তিনিও।
এইসব বদলে দেয়া এবং বদলে যাওয়া নারী-পুরুষরা মঙ্গলবার যোগ দেন রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে ‘চেঞ্জমেকার জাতীয় সম্মেলনে’।সম্মেলনের আয়োজক ৫০০ টি সংগঠন এবং ১০ লাখেরও বেশি বদলে যাওয়া-দেওয়া মানুষের জোট ‘আমরাই পারি’।

নারীর প্রতি আচরণ পরিবর্তন ঘটলে এবং পরিবর্তনকামী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আইন ও সরকারের কাজও সহজ হয়ে যায় বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,‘কখন কোথায় কে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে তাদের জন্য আমরা সর্বদা সতর্ক থাকি। নারী অধিকার বাস্তবায়নের জন্য এতো চেঞ্জমেকার একত্রিত হয়েছেন। তাহলে তো আমি মনে করি এখন চেঞ্জমেকারদের জন্য আমাদের এই কাজটি আরও সহজ হয়ে যাবে। কারণ আপনারা নিজেরাই পারেন এই চর্চা শুরু করেছেন।’
নারী উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ রয়েছে এবং দেশের পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাহিনীতেও চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারী সদস্য সংখ্যা বাড়ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন,‘১০ বছর আগের সমাজের তুলনায় আজ কিন্তু নারীরা পিছিয়ে নেই। তবে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো এমন কোনো প্রদীপ সরকারের হাতে নেই যে ঘষা দিলেই রাতারাতি সব বদলে যাবে। এই বদলের জন্য পরিবর্তনকামী মানুষের প্রয়োজন। আপনাদের অধিকারের জন্য আপনারাই এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এর ফলে আমরা মনে করি আমাদের কাজ আরও সহজ হয়ে গেছে।’

সম্মেলনে অংশ নেয়া কিশোর-কিশোরীদের ‘যুবতরঙ্গ’ হিসেবে দেখেন সংসদ সদস্য ও কবি কাজী রোজী।

তিনি বলেন,‘নারীর চলতে মানা, হাসতে মানা, কথাটিও বলতে মানা। এমন নিয়ন্ত্রণ-শৃংখল সরিয়ে চলতে হবে,বলতে হবে। এটা করতে হলে সবাই মিলে পরিবর্তনবান্ধব সমাজ গড়তে হবে।’

চেঞ্জমেকার জাতীয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আমরাই পারি জোটের চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নেদারল্যান্ডসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ড.অ্যানি ভেস্টজেন্স, স্বর্ণকিশোরী নেটওয়ার্কের প্রধান ফারজানা ব্রাউনিয়া প্রমুখ।

Exit mobile version