ঘূর্ণিঝড় নিসর্গের প্রভাবে ভারতের মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার আলিবাগে বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
ওই রাজ্যের রত্নাগিরি জেলায় আহত হয়েছেন চারজন। মুম্বইয়ে আরও তিনজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টা নাগাদ রায়গড় জেলার আলিবাগের কিছুটা দক্ষিণে মুরুদ এবং রেভদান্দার মাঝে স্থলভূমিতে আঘাত হানে নিসর্গ।
তবে পূর্বাভাসের তুলনায় ঝড়ের বেগ খানিকটা বেশি ছিল বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়। ঝড়ের বেগ ঘণ্টায় ১২০-১৪০ কিলোমিটার ছিল। পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় অবশ্য ঝড়ের বেগ অনেকটাই কমে গিয়েছে। হালকা বৃষ্টি হচ্ছে।

এখনও পর্যন্ত নিসর্গের সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে রায়গড়েই।
জেলাশাসক নিধি চৌধুরী জানিয়েছেন, আলিবাগের উমতে গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৮ বছরের এক ব্যক্তির। ক্ষতি হয়েছে সম্পত্তিও। বিকেল সাড়ে চারটে থেকে সেখানে ক্ষয়ক্ষতির পর্যালোচনা শুরু করেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ)।
প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য বাড়ি। উড়ে গিয়েছে বাড়ির চাল। উপড়ে গিয়েছে কমপক্ষে ৮৫ টি বড় গাছ। ভেঙে গিয়েছে কমপক্ষে ১১ টি বিদ্যুতের খুঁটি।
অপর উপকূলবর্তী জেলা রত্নাগিরিতেও নিসর্গের প্রভাব পড়েছে।
মন্ত্রী উদয় সামান্ত জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে আহত হয়েছেন চারজন। জেলার দাপোলি এবং মদনগড় তেহশিলে কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির মাত্রা পর্যালোচনা করে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, পুলিশকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ঝোড়ো হাওয়ার কারণে নির্মীয়মান একটি বাড়ি থেকে সিমেন্টের চাঙড় খসে পড়ে মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজে একই পরিবাবের তিনজন আহত হয়েছে।
উপকূলের দিকে ধেয়ে আসার সময় ঘূর্ণিঝড়টি আরও শক্তি সঞ্চয় করে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ এ পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় মহারাষ্ট্র ও গুজরাটজুড়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রাজ্য দুটির উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে এক লাখেরও বেশি লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মুম্বাই শহরের উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে কয়েক হাজার লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অস্থায়ীভাবে নির্মিত একটি কোভিড-১৯ হাসপাতালের দেড়শজন রোগীও রয়েছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
মুম্বাই সংলগ্ন ভারতের বৃহত্তম কন্টেইনার পোর্ট ২৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে জওহরলাল নেহেরু পোর্ট ট্রাস্ট (জেএনপিটি) ।
পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবের পর দুই সপ্তাহ পার না হতেই গত শনিবার দক্ষিণ-পূর্ব আরব সাগরে লাক্ষাদ্বীপের কাছাকাছি একটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়৷ পরে তা নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হলে নাম দেওয়া হয় নিসর্গ৷
আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মুম্বাইসহ মহারাষ্ট্র উপকূলজুড়ে জলোচ্ছ্বাস ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে।
গত একশ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথম মুম্বাই একটি ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়লো।
মুম্বাইয়ের পাশাপাশি থানে, পলঘর ও রাইগাডেও রেড অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ।
“মুম্বাই শহরে বাস করা বস্তিবাসীদের, বিশেষ করে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানো হয়েছে”। কোনওরকম জরুরি অবস্থার জন্য, করোনার জন্য ব্যবহৃত নয়, এমন হাসপাতালগুলিকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ঘাটতি মেটাতেও পদক্ষেপ করা হয়েছে রাজ্যের পক্ষ থেকে।
এদিকে মহারাষ্ট্র এবং গুজরাটের উপকূলবর্তী সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৪৩টি দল নামানো হয়েছে।
